গ্যালাক্টিক এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
.
ইউনিভার্সিটি
স্ট্রিলিং ইউনিভার্সিটি… প্রাচীন ট্র্যান্টরের স্ট্রিলিং সেক্টরে অবস্থিত উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান… সমাজবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় সুখ্যাতি থাকলেও বর্তমানে কিন্তু ঐ সকল কারণে এই প্রতিষ্ঠানের কথা মানুষের ভাবনাকে প্রভাবিত করে না। ইউনিভার্সিটির জ্ঞানী-গুণীদের প্রজন্ম এটা ভেবে আশ্চর্য হতে পারেন যে পরবর্তী যুগে এই প্রতিষ্ঠান কোনো এক হ্যারি সেলডনের কারণেই পুরো মহাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে, কারণ তথাকথিত পালিয়ে বেড়ানোর সময় তিনি এখানে অল্প কিছুদিনের জন্য বাস করেছিলেন।
—এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাক্টিকা।
.
১১.
স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন সেলডন। অস্বস্তি বোধ করছেন নিজের ক্ষুদ্রতা আর স্বল্পতার কথা ভেবে।
নতুন এক বিজ্ঞান তৈরি করেছেন তিনিঃ সাইকোহিস্টোরী। সম্ভাবনার নিয়মগুলোকে বর্ধিত করে তাতে এনে দিয়েছেন নতুন এক মাত্রা, যোগ করেছেন নতুন জটিলতা এবং অনিশ্চয়তা, তৈরি করেছেন বিশাল বিশাল গাণিতিক সমীকরণ যার ফলাফল হতে পারে অসংখ্য।–বোধহয় অসীম। বলতে পারবেন না।
তার কাছে আছে সাইকোহিস্টোরী বা বলা যায় যে সাইকোহিস্টোরীর মূল নীতিগুলো। কিন্তু ইতিহাস সম্বন্ধে তার কী বিস্তারিত ধারণা আছে যার সাহায্যে সমীকরণগুলোর একটা বোধগম্য অর্থ দাঁড় করানো যায়।
নেই। ইতিহাসে কখনোই আগ্রহী ছিলেন না। হ্যাঁলিকনিয়ান ইতিহাসের একটা প্রাথমিক ধারণা আছে কারণ বিদ্যালয়ে সেটা অধ্যয়ন করা ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই জানাই কী সব? কোনো সন্দেহ নেই তিনি যা জানেন সেটা হলো গিয়ে সম্পূর্ণ ইতিহাসের একটা নগ্ন কঙ্কাল। অর্ধেক কল্পনা, অর্ধেক সময়ের করাল গ্রাসে বিকৃত।
হামিন কীভাবে বলল গ্যালাক্টিক এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? দশহাজার বছর ধরে যা এম্পায়ার হিসেবে স্বীকৃত, তারও আগের দুহাজার বছর ট্র্যান্টর প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি কিংডমের রাজধানী হিসেবে যে ক্ষমতার অধিকারী ছিল তাও একটা এম্পায়ারের সমকক্ষ। প্রথম দিকে কোনো গ্রহই নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে চায়নি। ফলে প্রথম কয়েক শতাব্দী বিপুল পরিমাণে বিদ্রোহ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, সিংহাসন নিয়ে হানাহানি সামলাতে হয়েছে ট্র্যান্টরকে। ধীরে ধীরে নিজেকে সে গড়ে তুলেছে রূপকথার এক বিশ্বে যাকে এখন বলা হয় অবিনশ্বর বিশ্ব ইটারনাল ওয়ার্ল্ড।
এ কথা সত্য যে গত চার শতাব্দীতে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিগত সম্রাটদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন আততায়ীর হাতে, বারবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই ছিল সীমাহীন অস্থিরতা। তবে সেই পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটছে। গ্যালাক্সিতে এখন যে শান্তি বিরাজ করছে তা আগে কখনো ছিল না। পূর্ববর্তী সম্রাট ষষ্ঠ স্ট্যালিন-এর শাসনকাল এবং বর্তমানে তার পুত্র প্রথম ক্লীয়নের আমলে প্রতিটি গ্রহ ক্রমেই উন্নতি লাভ করছে এবং ক্লীয়নকে কোনো অবস্থাতেই রক্তলোলুপ স্বৈরাচার বলা যাবে না। এমনকি যারা ইমপেরিয়ামকে ঘৃণা করে তারাও ক্লীয়নের কোনো বদনাম বা দোষ দিতে পারবে না। তাদের বেশি। অভিযোগ বরং ইটো ডেমারজেলের বিরুদ্ধে।
তাহলে হামিন এই কথা বলল কেন–এবং এইরকম আত্মবিশ্বাসের সাথে।
হামিন পেশায় একজন সাংবাদিক। গ্যালাক্সির ইতিহাস এবং সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ তার নখদর্পণে। তাই কী সে এমন একটা কথা বলতে পেরেছে? হয়তো এই বক্তব্যের পেছনে তার জোরালো প্রমাণ আছে। যদি থাকেই, কী সেই প্রমাণ?
বেশ কয়েকবারই সেলডন জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলেন। একটা উত্তর তার পাওনা হয়েছে। কিন্তু হামিনের গম্ভীর মুখে এমন একটা কিছু ছিল যার জন্য ঠিক সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারলেন না। তাছাড়া নিজের ভেতর থেকেও কী যেন একটা বাধা দিল। যত যাইহোক, গ্যালাক্টিক এম্পায়ার হচ্ছে মূল ভিত্তি যার উপর নির্ভর করে তার সকল বিশ্লেষণ, যুক্তি প্রমাণ গড়ে উঠেছে। যদি কোথাও ভুল করে থাকেন, তিনি সেটা জানতে চান না।
ভুল হয়েছে, এটা তিনি আদৌ বিশ্বাস করেন না। মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটলেই গ্যালাক্টিক এম্পায়ারের স্থায়িত্ব শেষ হবে। অর্থাৎ, মহাবিশ্ব যখন ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন শুধু তখনই গ্যালাক্টিক এম্পায়ারের মৃত্যু হবে।
চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন, লাভ হলো না। সাইকোহিস্টোরী বিজ্ঞানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কী মহাবিশ্বের ইতিহাস পুরোটা জেনে নেওয়া উচিত?
সেটা কী সম্ভব? পঁচিশ মিলিয়ন গ্রহ, প্রতিটিরই রয়েছে সীমাহীন জটিল নিজস্ব ইতিহাস। তার সবগুলো তিনি কীভাবে জানবেন? তিনি জানেন গ্যালাক্টিক ইতিহাসের উপর অসংখ্য বুক-ফিল্ম রয়েছে। কী যেন একটা দরকারে অনেকদিন আগে সেইরকম একটা বুক-ফিল্ম দেখেছিলেন তিনি এবং মাত্র অর্ধেক দেখেই বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
বুক-ফিল্মগুলোতে কেবল গুরুত্বপূর্ণ গ্রহগুলোরই ইতিহাস থাকে। বেশিরভাগেই থাকে নিজেদের ইতিহাস। দুএকটিতে অন্যান্য গ্রহেরও বর্ণনা থাকে সেই সময় পর্যন্ত, যতদিন ঐ গ্রহগুলো নিজেদের প্রথম সারিতে রাখতে পেরেছিল। যখন থেকে সেগুলোর গুরুত্ব হ্রাস পায় তার পরবর্তী সময়ের কোনো বর্ণনা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সেলডনের মনে আছে ঐ বুক ফিল্মে হ্যালিকন সম্বন্ধে দুটো লাইন পেয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল যে এক সময় হ্যালিকন ইম্পেরিয়াল সিংহাসনের দাবীদার কোনো এক ব্যক্তিকে সমর্থন দিয়েছিল, যদিও সেই ব্যক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। হ্যাঁলিককে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি, সম্ভবত এই কারণে যে গ্রহটাকে শাস্তি দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে গণ্য করা হয়নি।