একটা বাঁক ঘুরল হামিন। সামনেই টিকেট কাউন্টারের মতো একটা কোটর, তার সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো নারীপুরুষ। কয়েকজনের সাথে। আবার বাচ্চাও আছে।
নিজের গ্রহে থাকতে এধরনের আবিষ্কারের কোনো খবর পাইনি। নিচু গলায় বললেন সেলডন। অবশ্য আমাদের নিউজ মিডিয়া অধিকাংশই স্থানীয় সংবাদ প্রচার করে, তারপরেও এইরকম একটা খবর নিশ্চয়ই চাপা থাকত না।
পুরো ব্যাপারটাই পরীক্ষামূলক এবং শুধু ইম্পেরিয়াল সেক্টরেই সীমাবদ্ধ। প্রচুর জ্বালানী খরচ হয়। সেজন্যই প্রশাসন এখনই ব্যাপকভাবে প্রচার করছে না। ক্লীয়নের আগে যে সম্রাট ছিলেন–ষষ্ঠ স্ট্যালিন নিজের বিছানায় ঘুমের মধ্যে মরে গিয়ে যিনি সবাইকে বিস্মিত করেছিলেন, তার নির্দেশেই অল্প কয়েকটি স্থানে গ্র্যাভিটিক লিফট বসানো হয়। সবাই বলে, স্ট্যালিন আসলে এ্যান্টি গ্র্যাভিটির সাথে নিজের নাম জুড়ে দিতে চেয়েছিলেন ইতিহাসে তার নাম অমর করে রাখার জন্য। হয়তো এটার ব্যবহার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে অন্যদিকে এটা দিয়ে গ্র্যাভিটিক লিফট ছাড়া অন্য কোনো আবিষ্কার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
আর কী আবিষ্কারের চিন্তা ভাবনা ছিল? জিজ্ঞেস করলেন সেলডন।
এ্যান্টি গ্র্যাভ স্পেসফ্লাইট। তার জন্য অবশ্য ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন যে এটা কোনোদিনও সম্ভব হবে না। কিন্তু গ্র্যাভিটিক লিফট তৈরি করার আগে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করত যে এটাও ম্ভব হবে না।
লাইনটা ক্রমেই ছোট হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই সেলডন নিজেকে আবিষ্কার করলেন একেবারে কিনারায়। সামনে একটা গহ্বর। বাতাসে কেমন এক ধরনের চকমকে ভাব। সেলডন হাত বাড়ালেন ছোঁয়ার জন্য। সাথে সাথে হালকা ইলেকট্রিক শক খেলেন। ব্যথা লাগেনি, কিন্তু ঝট করে হাত পিছিয়ে এনে ঝাড়তে লাগলেন।
মাথা নাড়ল হামিন। সতর্কতা, যেন কন্ট্রোল চালু করার আগেই কেউ ভিতরে ঢুকে না পড়ে। কন্ট্রোলে কয়েকটা নাম্বার চাপল সে। বাতাসের চকচকে ভাব চলে গেল।
উঁকি দিয়ে শ্যাফটের ভিতরে তাকালেন সেলডন।
কয়েক সেকেন্ডের বেশি লাগবে না। বলল হামিন। আমার হাত ধরে রাখবেন আর চোখ বন্ধ করে রাখুন। তাহলেই হবে।
সেলডন আসলে কোনো সুযোগই পেলেন না। কিছু বলার আগেই হামিন শক্ত করে তার হাত ধরে পা রাখল শূন্যের মাঝে। ভয়ে কেঁপে উঠলেন সেলডন এবং নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে অস্ফুট গোঙানী বেরিয়ে এল।
উপর থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছেন, সেইরকম কোনো অনুভূতি হলো না। জোরালো বাতাসের ঝাঁপটাও টের পেলেন না তিনি। কয়েক সেকেন্ড পরেই পিঠে হালকা ধাক্কা খেয়ে সামনে বাড়লেন। হোঁচট খেলেন। ভারসাম্য ফিরে পেয়ে টের পেলেন পায়ের নিচে নিরেট জমিন।
চোখ খুললেন তিনি। আমরা পৌঁছে গেছি?
মরি নি। শুকনো গলায় বলল হামিন। তারপর হাঁটতে শুরু করল। হাত ধরে রেখেছে, কাজেই সেলডনও সামনে বাড়তে বাধ্য হলেন।
আমি জানতে চাইছি আমরা কী সঠিক লেভেলে পৌঁছেছি?
অবশ্যই।
আমরা যখন নিচে নামছিলাম তখন যদি নিচ থেকে কেউ উপরে উঠত কী হত?
দুটো আলাদা লেন আছে। এক লেন দিয়ে যে গতিতে নিচে নামা হয় অন্য লেন। দিয়ে সমান গতিতে উপরে উঠা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে দুর্ঘটনা ঘটার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
আমি কিচ্ছু টের পাইনি।
পাওয়ার কথাও না। কোনো এক্সেলারেশন নেই। এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময়ের ভিতরেই আপনার পতনের গতিতে একটা সামঞ্জস্য তৈরি হয়ে যায় সেই সাথে আপনার চারপাশের বায়ুপ্রবাহের গতিও ছিল সমান।
চমৎকার।
ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ব্যয়বহুল। আর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটাকে আরো উন্নত, কার্যকরী এবং ব্যবহারোপযোগী করে তোলার কোনো আগ্রহ কারো নেই। সব জায়গাতেই একই কথা। আমরা এটা করতে পারব না। এটা করা যাবে না। প্রচণ্ড রাগে কাঁধ ঝাড়ল হামিন। যাইহোক ট্যাক্সি রেন্টালে পৌঁছে গেছি। দেখা যাক কী হয়।
.
১০.
সেলডন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যেন তাকে দেখে কারো মনে সন্দেহ না জাগে। কিন্তু ব্যাপারটা কঠিন। এয়ার ট্যাক্সি টার্মিনালের ভেতর অনেক মানুষ আসা যাওয়া করছে, প্রচুর ট্যাক্সিও আছে। যেভাবে মানুষজন এবং চারপাশে তাকাচ্ছেন, তাতে নিঃসন্দেহে সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। স্বাভাবিক থাকতেই পারছেন না।
কীভাবেই বা পারবেন? গায়ের নতুন পোশাকে অস্বস্তি বোধ করছেন। কোনো। পকেট নেই যে হাতগুলো তার ভেতর ঢুকিয়ে রাখবেন। বেল্টের দুপাশে দুটো পাউচ। একটু নড়লেই সেগুলো শরীরের সাথে অনবরত বাড়ি খাচ্ছে। যার ফলে তার মনে হচ্ছে কেউ যেন শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েদের দিকে মনোযোগ দিলেন তিনি। তাদের কোমরে কোনো পাউচ চোখে পড়ল না। তবে বাক্সের মতো ছোট একটা জিনিস বহন করছে তারা। মাঝে মাঝে সেটা আটকে রাখছে কোমরের সাথে। কৌশলটা ধরতে না পেরে শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন বোধহয় লুকানো চুম্বক আছে। হয় বাক্সের সাথে নয়তো বেল্টের সাথে। বিতৃষ্ণার সাথে লক্ষ্য করলেন মেয়েদের পোশাকে ততটা জাঁকজমক নেই, অন্তত আকৃষ্ট করার মতো করে শরীরের বিশেষ অংশগুলো উন্মুক্ত করে রাখেনি কেউই। তবে দুএকটা পোশাকের ডিজাইন দেখে মনে হলো যে সেই মেয়েগুলো চাইছে। তাদের গুরু নিতম্বের দিকে পুরুষদের চোখ যাক।