আপনার কত খরচ হয়েছে? সেলডন জিজ্ঞেস করলেন।
জেনে কী করবেন?
আপনার কাছে ঋণী থাকতে হবে–এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।
বেশি ভাববেন না। সব নিজের ইচ্ছেতেই করছি। কিন্তু এখানে আর থাকা উচিত নয়। আমার চেহারার বর্ণনা নিশ্চয়ই জায়গামতো পৌঁছে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে এখানে পুলিশ বা অন্য কেউ চলে আসতে পারে।
সেক্ষেত্রে টাকা পয়সা বড়ো ব্যাপার নয়, বড়ো ব্যাপার হচ্ছে আপনি আমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন।
জানি। কিন্তু বললাম তো, আমি নিজের ইচ্ছাতেই সব করেছি। নিজেকে রক্ষা করতে পারি আমি।
কিন্তু কেন-
পরে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে। ভালো কথা, আপনার পুরনো কাপড়গুলো আমি এটমাইজ করে ফেলেছি, বোধহয় কারো চোখে ধরা না পরেই। এনার্জি লেভেলে একটু উঠানামা হবে। জায়গামতো সেটা রেকর্ডও করা হবে। আসল কারণটা কী সেটা কেউ না কেউ ঠিকই ধরে ফেলবে–এখন সময়টা আসলে খুবই কঠিন। তবে আশা করি দুই আর দুই-এ চার বানানোর আগেই আমরা সরে যেতে পারব।
.
০৯.
হলদেটে মোলায়েম আলো। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছে দুজন। হামিনের দৃষ্টি কোথাও স্থির হয়ে থাকছে না, চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাঁটার গতিও কমাচ্ছে না। একইসাথে সে সমান তালে কথাও বলে চলেছে।
তাল মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন সেলডন। এখানে বোধহয় অনেক হাঁটতে হয়। কথাটা বলতে হলো, কারণ অনেকগুলো দ্বিমুখী ফুটপাথ আর ক্রসওভার রয়েছে এখানে।
অসুবিধা কী? বলল হামিন। কাছাকাছি দূরত্বে হন্টনই এখনো সবচেয়ে ভালো পরিবহন। সবচেয়ে সুবিধাজনক, সবচেয়ে সস্তা, সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। অগণিত বছর ধরে জ্ঞান বিজ্ঞানে বিস্ময়কর অগ্রগতিও এটা পাল্টাতে পারেনি। আপনার কী উচ্চতা ভীতি আছে, সেলডন?
ডানপাশে রেলিং-এর পরে একটা গভীর খাদ। সেদিকে তাকালেন তিনি। এই খাদটাই পাশাপাশি দুটো ওয়ার্কিং লেনকে আলাদা করেছে। একটা লেন আরেকটা লেন-এর বিপরীত। দুটোর মাঝখানে সংযোগ হিসেবে সমান দূরত্ব পরপর অনেকগুলো ক্রস ওভার রয়েছে। অর্থাৎ উঁচু জায়গায় উঠতে ভয় পাই কীনা, সেরকম পাই না। তবে খুব বেশি উঁচু থেকে নিচে তাকানো সবসময় অস্বস্তিকর। এটা কত নিচে নেমেছে?
এখানে বোধহয় চল্লিশ বা পঞ্চাশ লেভেল। ইম্পেরিয়াল সেক্টর এবং অল্প কয়েকটা অতি উন্নত অংশে এটাই স্বাভাবিক। বেশির ভাগ অংশেই এক লেভেল নিচেই গ্রাউন্ড লেভেল।
আমার ধারণা এটা আত্মহত্যার প্রবণতা উৎসাহিত করে।
খুব একটা না। সহজ পদ্ধতি আরো অনেকগুলো আছে। তাছাড়া ট্র্যান্টরে আত্মহত্যা ব্যাপারটাকে খারাপ নজরে দেখা হয় না। আত্মহত্যার জন্য এখানে অনেকগুলো সেন্টার আছে। সেখানে গিয়ে যে কেউ পছন্দ মতো পদ্ধতিতে নিজের জীবনের পরিসমাপ্তি টেনে দিতে পারে। তবে শর্ত একটাই। আত্মহননকারীকে বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপীর জন্য গিনিপিগ হতে হবে। অবশ্য এই কারণে জিজ্ঞেস করছি না যে আপনার উচ্চতা ভীতি আছে কি না। আমরা একটা ট্যাক্সি ভাড়া নেব। যেখানে ট্যাক্সি ভাড়া পাওয়া যায় সেখানের লোকগুলো আমাকে সাংবাদিক হিসেবে চেনে। আমি ওদের কিছু উপকার করেছি, বিনিময়ে ওরাও মাঝে মাঝে আমার উপকার করে দেয়। আমার নাম ওরা রেকর্ড করতে ভুলে যাবে এবং খেয়ালই করবে না যে আমার সাথে আরেকজন ছিল। অবশ্য সেজন্য বেশ মোটা অঙ্কের ক্রেডিট খরচ করতে হবে। কারণ ডেমারজেলের গুণ্ডাগুলো চেপে ধরলে সত্যি কথা বলতে বাধ্য হবে ওরা, তখন আমার দেওয়া ক্রেডিট ওদেরকে নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু সেজন্য হয়তো অনেক সময় লাগবে।
এর সাথে উচ্চতাভীতির সম্পর্ক কী?
আমরা ট্যাক্সি রেন্টালে দ্রুত পৌঁছাব যদি গ্র্যাভিটিক লিফট ব্যবহার করি। সবাই অবশ্য খুব বেশি প্রয়োজন দেখা না দিলে এটা ব্যবহার করে না এবং সত্যি কথা বলতে কী আমার নিজেরও খুব একটা ইচ্ছা নেই। তবে এই মুহূর্তে, যদি মনে করেন যে আপনি সামলাতে পারবেন, তাহলে সময় বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করলে ভালো হবে।
গ্র্যাভিটিক লিফট জিনিসটা কী?
এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। যদি সাইকোলজিক্যালি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায় তাহলে হয়তো এক সময় পুরো ট্র্যান্টরে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে, তারপর ধীরে ধীরে অন্যান্য গ্রহে। মূলত গ্র্যাভিটিক লিফট হচ্ছে এমন এক এ্যালিভেটর শ্যাফট যার ভেতরে কোনো এ্যালিভেটর ক্যাব থাকে না। আমরা শূন্যে দাঁড়িয়ে উপরে উঠব বা নিচে নামব। আর এই উপরে উঠানো বা নিচে নামানোর কাজটা করবে এ্যান্টি গ্র্যাভিটি। এখন পর্যন্ত শুধু এই একটা ক্ষেত্রেই এ্যান্টি গ্র্যাভিটির ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে, সবচেয়ে বড়ো কারণ এই যে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে সহজ ব্যবহার।
যদি উঠা নামার মাঝখানে পাওয়ার চলে যায় তখন কী হবে?
যা ভাবছেন তাই হবে। পড়ে যাব, মারা যাব। এখন পর্যন্ত এই ধরনের দুর্ঘটনার কোনো খবর শুনিনি, হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি অবশ্যই জানতাম। হয়তো খবরটা প্রকাশ করতে পারতাম না নিরাপত্তার খাতিরে সবসময় এই কারণ দেখিয়েই খারাপ খবরগুলো প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু আমি জানতে পারতাম। ঠিকই। আপনি ভয় পেলে অবশ্য পরিকল্পনাটা বাদ। কিন্তু কড়িডোর ধরে যেতে বেশি সময় লাগবে, এগুলো কেমন আবদ্ধ, কিছুক্ষণ চলার পর অনেকেরই দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।