হ্যাঁ, মনে আছে।
আমাকে নিয়ে সে মোটেই মাথা ঘামায়নি। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে অপমান করা।
নিজে চেয়ারে বসে সেলডনকে বিছানার দিকে ইশারা করল হামিন। শুয়ে পরুন, সেলডন। বিশ্রাম নিন। আমার মতে গুণ্ডা দুটোকে ডেমারজেল ছাড়া অন্য কেউ পাঠায়নি এবং সে আরো অনেককেই পাঠাতে পারে। কাজেই আপনার এই বেশভূষার হাত থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। অবশ্য এই সেক্টরে যদি আপনার কোনো দেশী ভাই হ্যাঁলিকনিয়ান জোব্বা পরা অবস্থায় ধরা পড়ে, তখন সে যে আপনি নন তা বোঝানোর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। বোঝাতে না পারলে বিপদ।
কী বলছেন?
সত্যি বলছি। আপনাকে এই বেশ ছাড়তে হবে। আমরা এগুলোকে এটমাইজ করে ফেলব–অবশ্য কারো চোখে ধরা না পড়ে যদি কোনো ডিজপোজাল ইউনিটের কাছে পৌঁছানো যায়, তবেই। তার আগে ট্র্যান্টরিয়ান পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার আকৃতি আমার চেয়ে খানিকটা কম, ব্যাপারটা আমার মাথায় আছে। অবশ্য জামা-কাপড়গুলো গায়ে একদম ফিট না হলেও ক্ষতি নেই।
হাত নাড়লেন সেলডন। দাম দেওয়ার মতো কোনো ক্রেডিট আমার কাছে। নেই। যা ছিল সব রয়ে গেছে হোটেলের সেফে।
এই বিষয়ে পরে কোনো এক সময় চিন্তা করব। দরকারী পোশাক জোগাড় করতে আমার এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। সেই সময়টা আপনি এখানে থাকবেন।
হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন সেলডন। বেশ, এতই যখন জরুরি, থাকছি আমি।
হোটেলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কথা দিন।
দিলাম। কিন্তু আমি বেশ বিব্রত বোধ করছি। আপনি আমার জন্য অনেক ঝামেলা করছেন। এখন আবার খরচও করবেন। ডেমারজেলের কথা যতই বলুন না কেন, নিশ্চয়ই আমাকে ধরে নিয়ে যেত না। শুধু পোশাকগুলো নিয়েই ওরা ভয় দেখাচ্ছিল।
মোটেই না। ওরা আপনাকে ধরে কোনো স্পেসপোর্টে নিয়ে যেত, তারপর হ্যালিকনের পথে কোনো হাইপারশিপে উঠিয়ে দিত।
এটাতো কথার কথা সত্যি সত্যি নিশ্চয়ই এমন করত না।
কেন?
আমি তো হ্যালিকনে ফিরেই যাচ্ছি–আগামীকাল।
এখনো আগামীকাল ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন?
অবশ্যই। যাব না কেন?
না যাওয়ার পিছনে হাজারো কারণ আছে।
হঠাৎ করেই ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড রেগে উঠলেন সেলডন। শুনুন, হামিন, এই খেলা আর চালিয়ে যেতে পারব না। এখানে কাজ শেষ, এখন আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। টিকেটগুলো হোটেলে রয়ে গেছে। নয়তো সেগুলো পাল্টে নিয়ে আজকেই ফিরে যেতাম। সত্যি বলছি।
আপনি হ্যালিকনে ফিরে যেতে পারবেন না।
এবার আর রাগ প্রকাশ না করে পারলেন না সেলডন। ওখানেও আমাকে ধরার জন্য কেউ অপেক্ষা করে থাকবে?
মাথা নাড়ল হামিন। রাগ করবেন না, সেলডন। ওখানেও কেউ না কেউ থাকবে। আমার কথা বোঝার চেষ্টা করুন। হ্যালিকনে ফিরে গেলে আপনি সহজেই। ডেমারজেলের হাতে ধরা পড়বেন। হ্যালিকন নিরাপদ এবং চমৎকার ইম্পেরিয়াল টেরিটোরি। হ্যালিকন কখনো বিদ্রোহ করেছে, কখনো সম্রাটের বিরোধীপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছে?
না, কখনোই না–এবং তার পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। আমাদের গ্রহটাকে ঘিরে রেখেছে অনেকগুলো বড়ো বড়ো গ্রহ। নিজের নিরাপত্তার জন্যই তাকে এম্পায়ারের শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করতে হয়।
ঠিক। আর তাই ইম্পেরিয়াল ফোর্স হ্যালিকনের স্থায়ী প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা পাবে। প্রতিটা মুহূর্ত আপনাকে তারা চোখে চোখে রাখতে পারবে। ডেমারজেল যখনই মনে করবে আপনাকে তার প্রয়োজন, তখনই আপনাকে সে হাতের মুঠোয় পাবে। আমি আপনাকে সতর্ক করে দিতে পারছি, নয়তো ঠিকই একটা মিথ্যে নিরাপত্তার ধারণা নিয়ে হাঁটে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াতেন।
হাস্যকর। যদি সে চায় আমি হ্যালিকনে ফিরে যাই, তাহলে এত ঝামেলা পাকাচ্ছে কেন? কেন দুটো গুণ্ডা পাঠিয়ে আমাকে সতর্ক করে তুলছে?
আপনাকে সে সতর্ক করবে কেন? সে কী আর জানত যে গুণ্ডাগুলোর সাথে মারামারি করার সময় আমি আপনার পাশে থাকব।
যাইহোক। ধরুন আপনি আমাকে সতর্ক করতে পারলেন না। আর গুণ্ডাদুটো তখন সফল হলে হয়তো দুচার ঘণ্টা আগে ফিরে যেতাম। তাতে কী লাভটা হতো?
হয়তো আপনি মত পাল্টাবেন মনে করে সে ভয় পাচ্ছে।
বাড়ি না ফিরলে, কোথায় যাব? হ্যালিকনে ধরতে পারলে যেকোনোখানেই ধরতে পারবে, হয়তো পালিয়ে এ্যানাক্রনে চলে গেলাম–এখান থেকে প্রায় দশ হাজার পারসেক দূরে। কিন্তু সেখানেও ধরে ফেলবে। হাইপারস্পেশাল শিপ-এর কারণে দূরত্ব আজকাল কোনো ব্যাপারই না। যত বিদ্রোহই করুক না কেন, কোন গ্রহ সম্রাটের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে বা আমার জন্য দাঁড়াবে? সবচেয়ে বড়ো কথা আমি হ্যালিকনের নাগরিক, অন্য কোথাও আমি এই সুবিধাটুকু পাব না।
ধৈর্য ধরে কথাগুলো শুনল হামিন, মাথা নাড়ল কয়েকবার, কিন্তু চেহারা ছিল বরাবরের মতোই গম্ভীর এবং ভাবলেশহীন। ঠিকই বলেছেন, বলল সে, কিন্তু একটা গ্রহ আছে যেখানে সম্রাট নিজেও তার পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সাহস করেন না। আর আমার ধারণা এই ব্যাপারটাই ডেমারজেলকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
চিন্তা করছেন সেলডন, স্মৃতির পাতা হাতড়াচ্ছেন। কিন্তু এমন কোনো গ্রহ খুঁজে পেলেন না যেখানে ইম্পেরিয়াল ফোর্সও অসহায়। বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোন গ্রহ?
আপনি এখন সেই গ্রহের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার ধারণা এই কারণেই ভয় পাচ্ছে ডেমারজেল। আপনাকে হ্যালিকনে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সে যতটা উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন আপনি না আবার এখানে থেকে যান। যদি হঠাৎ আপনার মনে হয়–নাহ, আরো কটা দিন থেকেই যাই।