আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে এগুলো আরো নিখুঁতভাবে কাজ করে। যাইহোক, এই দুটোকে ছেড়ে দেই। মারামারি করার খায়েশ বোধহয় আর নেই।
মারভীকে ছেড়ে দিল হামিন। মারভী প্রথমে তার কাধ ডলল, শ্বাস টানল শব্দ করে। তারপর ঘুরে তাকালো প্রতিপক্ষ দুজনের দিকে প্রচণ্ড বিদ্বেষ নিয়ে।
ভাগো এখান থেকে। কড়া গলায় বলল হামিন। অন্যথায় হামলা এবং খুনের চেষ্টার দায়ে জেলে যেতে হবে। এই ছুরি সব প্রমাণ করবে।
সেলডন এবং হামিন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখলেন। এলেম এখনো ব্যথায় কাতরাচ্ছে। মারভী তাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দু-একবার পিছন ফিরে তাকালো। কিন্তু তারা দুজন তাকিয়ে আছে নিষ্পলক।
এক হাত বাড়িয়ে সেলডন বললেন, আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো। অপরিচিত একজনের বিপদে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। আমি একা বোধহয় দুজনকে সামলাতে পারতাম না।
তেমন কিছু না ভঙ্গিতে হাত নাড়ল হামিন। আমি মোটেই ভয় পাইনি। ওরা রাস্তার দুই পয়সার মাস্তান। জানতাম কায়দামতো ধরতে পারলেই সোজা হয়ে যাবে।
যেভাবে ধরেছিলেন তাতেই তো ছোকরার কলিজা শুকিয়ে গেছে। কৌতুকের ভঙ্গিতে বললেন সেলডন।
শ্রাগ করল হামিন। আপনিও কম যান না। তারপর গলার স্বর পরিবর্তন না। করেই বলল, চলুন, সরে পড়ি। এখানে সময় নষ্ট করলে বিপদ আরো বাড়বে।
কেন? আপনি ভাবছেন ওরা আবার ফিরে আসবে।
জীবনেও আর এই মুখো হবে না। তবে পার্কে অনেক দুঃসাহসী মানুষ ছিল। দেখেননি গা বাঁচানোর জন্য কেমন দ্রুত কেটে পড়েছে। ওরাই আবার ভালোমানুষী দেখিয়ে পুলিশে খবর দেবে।
চমৎকার। গুণ্ডা দুটোর নাম আমরা জানি। চেহারার বর্ণনা দিতে পারব পুলিশের কাছে।
চেহারার বর্ণনা দেবেন? পুলিশ কী করবে?
ওরা অপরাধ করেছে
বোকার মতো কথা বলবেন না। আমাদের শরীরে আচড়টি পর্যন্ত নেই। আর ওদের দুজনকে হাসপাতালে যেতে হবে। এলেমের অবস্থাতো খুবই খারাপ। আমরাই বরং ফেসে যাব।
অসম্ভব। পার্কে যারা ছিল তারা দেখেছে-
সাক্ষী দেওয়ার জন্য কাউকে ডাকা হলে তো।–সেলডন, একটা ব্যাপার মাথাতে ঢুকিয়ে নিন। ওই দুজন এসেছিল আপনার জন্য শুধু আপনার জন্য। ওদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে আপনার পরনে হ্যাঁলিকনিয়ান পোশাক এবং চেহারার বর্ণনাও পরিস্কার দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত আপনার একটা হলোগ্রাফও দেখানো হয়েছে। আমার ধারণা ওদেরকে এমন কেউ পাঠিয়েছে যারা পুলিশকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চলুন আর অপেক্ষা করা যাবে না।
দ্রুত পা চালালো হামিন, এক হাত দিয়ে সেলডনের ঊর্ধ্বাঙ্গ ধরে টেনে নিয়ে চলেছে। জোর খাঁটিয়েও সেই হাত ছোটাতে পারলেন না সেলডন। নিজেকে তার সেই শিশুর মতো মনে হলো।
পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা খিলানওয়ালা ফুটপাথে উঠলেন তারা। স্বল্প আলোতে চোখ পিট পিট করতে লাগলেন সেলডন। এমন সময় কাছেই কোথাও একটা গ্রাউন্ড কার-এর ব্রেক কষার শব্দ হলো।
এসে পড়েছে। বিড়বিড় করল হামিন। জলদি, সেলডন। দ্রুত পা চালিয়ে একটা চলমান ফুটপাথে উঠে ভিড়ের সাথে মিশে গেলেন দুজন।
.
০৭.
সেলডন বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তিনি হোটেল রুমে ফিরতে চান। কিন্তু হামিনের এক কথা, হোটেলে ফেরা যাবে না।
আপনি পাগল হলেন নাকি? প্রায় ফিসফিস করে বলল সে, ওখানেও আপনাকে ধরার জন্য কেউ না কেউ অপেক্ষা করছে।
কিন্তু আমার মাল-সামান তো সব ওখানেই।
থাকুক। কিছু হবে না।
এই মুহূর্তে তারা রয়েছেন এক কামরাবিশিষ্ট ছোট এক এ্যাপার্টমেন্টের ভিতর। জায়গাটা ট্র্যান্টরের ঠিক কোন অংশে তিনি বলতে পারবেন না। কামরার পুরোটাই দখল করে রেখেছে একটা ডেস্ক এবং চেয়ার একটা বিছানা এবং একটা কম্পিউটার আউটলেট। ওয়াশরুম ডাইনিংরুম বলে কিছু নেই। তবে সকলের ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে একটা ওয়াশরুম আছে। হামিন তাকে সেখানে নিয়ে গেল। ভিতরে। কেউ একজন ছিল আগে থেকেই। বেরিয়ে এসে সেলডনের চাইতে তার পোশাকের দিকেই মনোযোগ দিল বেশি।
সেলডন বলে দেওয়ার পর হামিনও সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ল। আপনার এই পোশাক ছাড়তে হবে। মান্ধাতা আমলের হ্যাঁলিকনিয়ান পোশাক-
এর কতটুকু আপনার কল্পনা, হামিন? অধৈর্য ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন সেলডন। প্রথমে আপনার কথা আমি অর্ধেক বিশ্বাস করেছি আর এখন মনে হচ্ছে এটা শুধু… শুধু
আপনি বোধহয় বলতে চাইছেন, ভয় দেখানো।
ঠিকই বলেছেন। আপনি বোধহয় অদ্ভুত কোনো কারণে আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন।
মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখুন। আমি গাণিতিকভাবে বুঝিয়ে বলতে পারব না। যাইহোক, আপনি সম্রাটের সাথে দেখা করেছেন। অস্বীকার করবেন না। তিনি। আপনার কাছে কিছু চেয়েছিলেন, আপনি তা দেন নি। এটাও অস্বীকার করবেন না। আমার ধারণা সম্রাট আপনার কাছে চেয়েছিল ভবিষ্যতের বিস্তারিত বর্ণনা, আপনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সম্ভবত ডেমারজেল মনে করে আপনি আরো চড়া দাম দিয়ে অন্য কারো কাছে আপনার আবিষ্কার বিক্রি করবেন। আমি তো বলেছি যদি ডেমারজেল আপনাকে চায়, তাহলে কোথাও গিয়ে মুখ লুকাতে পারবেন না। আপনাকে সে ঠিকই খুঁজে বের করবে। বদমাশ দুটো ঝামেলা বাধানোর আগেই এই কথাটা আমি। আপনাকে বলেছি। আমি একজন সাংবাদিক এবং একজন ট্র্যান্টরিয়ান। ভালোভাবেই জানি কোন ঘটনা কীভাবে সাজানো হয়। মনে আছে, একপর্যায়ে এলেম বলেছিল ওরা আপনাকেই চায়?