“কিন্তু কোনো গোলমাল হলে। কোনো কোনো-” রোবটের ভিতরের কলকজা সম্পর্কে মিসেস, ওয়াটসন ক অক্ষর গোমাংস, “ভেতরে একটা কোনো নাট খুলে গিয়ে ভয়াল যন্ত্রটা ধরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং এবং–” সে তার কল্পনাটাকে আর বাক্যে প্রকাশ করতে সাহস পায় না।
“যত সব উদ্ভট কল্পনা,” একটা অনভিপ্রেত বিচলিত কাঁপুনির সাথে ওয়েসটন তাকে নাকচ করে দেয়।”তোমার যুক্তি শুনে গাছের পাতাও হাসবে। রোব্বিকে কেনার আগে তোমার সাথে রোবটিকসের প্রথম সূত্র নিয়ে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। তুমি ভালো করেই জানো কোনো রোবটের পক্ষে মানুষের অনিষ্ট করা সম্ভব না; প্রথম সূত্রকে নাকচ করতে যতখানি বিঘ্ন ঘটানো প্রয়োজন তার অনেক আগেই একটা রোবট অকার্যকর হয়ে পড়বে। গাণিতিকভাবেই ব্যাপারটা অসম্ভব। তাছাড়া প্রতিবছর ইউ.এস রোবটস থেকে একজন বিশেষজ্ঞ দু’বার এসে বেচারার কর্মকুশলতা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে যায়। এসব কথা কেন বলছো, তোমার বা আমার সহসা মানসিক ভারসাম্য হারাবার চাইতে রোব্বির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেবার সম্ভাবনা অনেক কম- নেই বললেই চলে। তাছাড়া, গ্লোরিয়াকে তুমি কিভাবে তার কাছ থেকে আলাদা করবে?”
সে আরেকবার বৃথা চেষ্টা করে খবরের কাগজটা হাতাবার এবং তার স্ত্রী সেটা ছুঁড়ে ফেলে অন্য ঘরে চলে যায়।
“এটাই আমার শেষ কথা জর্জ! সে আর কারও সাথে খেলবে না। পাড়ায় গণ্ডা খানেক তার বয়সী ছেলে মেয়ে আছে কিন্তু মহারানী কারও সাথেই মিশবেন না। আমি জোর না করলে সে তাদের ধারেকাছেও যাবে না। একটা বাচ্চামেয়ের বেড়ে ওঠার জন্য এটা মোটেই কোনো স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি না। তুমি চাও না আর দশটা স্বাভাবিক মেয়ের মতো সে বেড়ে উঠুক, চাও না? সমাজের অগ্রগতিতে সে অংশগ্রহণ করুক এটা তুমিও চাও?”
“গ্রেস, রজ্জুতে তোমার সর্প ভ্রম হচ্ছে। রোব্বি একটা পোষা কুকুর, এমনটা ভেবে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। আমি এমন অন্তত একশটা ছেলের নাম বলতে পারি যারা তাদের পোষা কুকুরকে নিজের বাবার চাইতে বেশী পছন্দ করে।”
“জর্জ, কুকুরের ব্যাপারটা আলাদা। আমি ঐ জবরজংটার হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছি। কোম্পানির কাছে ফিরিয়ে দেয়া যায় না। আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, এবং সেটা করা সম্ভব।”
“তুমি খোঁজ নিয়ে দেখেছো? গ্লোরিয়া শোনো, ব্যাপারটাকে আর বেশী জটিল কোরো না। গ্লোরিয়া আরেকটু বড় না হওয়া পর্যন্ত রোবট থাকবে আর আমি এই বিষয়টা নিয়ে ভবিষ্যতে আর আলাপ করতে চাই না। আর বিষয়টা এই ঘরের ভিতরেই যেন সীমাবদ্ধ থাকে।”
.
দুইদিন পরে এক সন্ধ্যাবেলা মিসেস. ওয়াটসন তার স্বামীকে সদর দরজার কাছে পাকড়াও করে। “জর্জ, ব্যাপারটা তোমার শোনা উচিত। গ্রামের সবাই কানাঘুষো করছে।”
“আর সেটা কি?” ওয়াটসন জানতে চায়। সে প্রক্ষালন কক্ষে ঢুকে এবং উত্তরের ___নাটুকু পানির তোড়ে ভাসিয়ে দেয়।
মিসেস. ওয়াটসন বাইরে অপেক্ষা করে। সে বলে, “ব্যাপারটা রোব্বিকে নিয়ে।”
তোয়ালে হাতে নিয়ে ক্রোধান্বিত মুখে ওয়াটসন প্রক্ষালন কক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। “তুমি আবার শুরু করেছো?”
“ওহ, শোনো, মানুষের মুখ তো আর তুমি বন্ধ করতে পারবে না। আমি ব্যাপারটাকে এতদিন তোমার কথামতো গুরুত্ব দেইনি কিন্তু আমার পক্ষে আর মুখ বুজে থাকা অসম্ভব। গ্রামের সবারই ধারণা রোব্বি বিপজ্জনক। বিকালবেলা কেউ তাদের বাচ্চাদের আমাদের বাসার আসেপাশে আসতে দেয় না।”
“আমরা আমাদের বাচ্চার আশেপাশে জিনিসটার উপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাই না।”
“বেশতো, লোকজন এসব জিনিসের ব্যাপার যুক্তি দিয়ে বিচার করতে চায় না।”
‘‘তাহলে, তাদের নরকে যেতে বলো।”
“এ কথা বললে তো আর সমস্যাটার সমাধান হবে না। আমাকে কেনাকাটা করতে প্রায়ই দোকানে যেতে হয়। তাদের সাথে প্রতিদিনই আমার দেখা হয়। আর রোবটের ব্যাপারে শহরের লোকদের সাম্প্রতিক মনোভাব নিশ্চয়ই তোমার অজানা নেই। নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মধ্যে শহরের রাস্তায় রোবটের চলাফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটা আইন পাশ করেছে।”
“সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার মানে তো আর এই না যে আমরা আমাদের বাড়িতে কোনো রোবট রাখতে পারবো না।- জেস, তোমার এই রোবট বিতাড়ন প্রকল্প এবার বন্ধ করো। আমি সবই বুঝতে পারি। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না। আমার উত্তর এখনও না! রোব্বি আমাদের সাথেই থাকছে!”
.
এত কিছুর পরেও সে তার স্ত্রীকে ভালোই বাসে- আর তার চেয়েও ভয়াবহ হল, স্ত্রীও ব্যাপারটা খুব ভালো করেই জানে। জর্জ ওয়েসটনও তো একটা ___মানুষ– বেচারা এবং তার স্ত্রীও ভয়ে, কারণে অকারণে, সম্ভাব্য সব আনাড়ি __ যুক্তি কৌশলের পূর্ণ ব্যবহার করে।
সেই চিৎকার করে বলে, এইবার নিয়ে এই সপ্তাহে দশবার হল, “রোব্বি থাকছে, আর এটাই আমার শেষ কথা!” তবে প্রতিবারই তার প্রতিবাদ আগের চাইতে দুর্বল শোনায় আর সেই ঘাটতি ঢাকতে চিৎকারের মাত্রা এবং যন্ত্রণার ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।
অবশেষে সেই দিন আসে, যখন ওয়েসটন তার মেয়েকে অপরাধী কণ্ঠে গ্রামে আসা ‘তুখোড়’ পুতুলনাচ দেখতে নিয়ে যাবার কথা বলে।
আনন্দে হাততালি দিয়ে গ্লোরিয়া জানতে চায়, “বাবা, রোব্বি আমাদের সাথে যেতে পারে?”