- বইয়ের নামঃ রূপালী মাকড়সা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
রূপালী মাকড়সা
০১.
আরে, আরে! হ্যানসন! চেঁচিয়ে উঠল রবিন মিলফোর্ড।
আরে লাগল…লেগে গেল তো…! প্রায় একই সঙ্গে বলে উঠল মুসা আমান।
বনবন স্টিয়ারিং ঘোরাল হ্যানসন, ব্রেক কষল ঘ্যাচ করে। পেছনের সিটে উল্টে পড়ল তিন গোয়েন্দা। টায়ারের কর্কশ আওয়াজ তুলে চকচকে একটা লিমোসিনের কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল বিশাল রোলস রয়েস।
চোখের পলকে লিমোসিন থেকে বেরিয়ে এল কয়েকজন লোক। ড্রাইভিং সিট থেকে সবে নামছে হ্যানসন। তাকে এসে ঘিরে ফেলল। আঙুল তুলে শাসানর ভঙ্গি করছে, উত্তেজিত। কথা বলছে অদ্ভুত ভাষায়।
লোকগুলোকে পাশ কাটিয়ে গেল হ্যানসন। গাড়িতেই বসে আছে। লিমোসিনের শোফার। লাল পোশাক, কাঁধ আর হাতার কাছে সোনালি কাজ করা।
এই যে, মিস্টার, বলল হ্যানসন, এটা কি করলে? দিয়েছিলে তো মেরে!
আমি ঠিকই চালাচ্ছিলাম! উদ্ধত কণ্ঠ লোকটার। দোষ তোমার! সামনে পড়লে কেন? প্রিন্স দিমিত্রির গাড়ি দেখেছ, সরে যেতে পারনি?
ইতিমধ্যে সামলে নিয়েছে তিন গোয়েন্দা। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোকগুলোর দিকে। উত্তেজিত হয়ে প্রায় আস্ফালন শুরু করেছে হ্যানসনকে ঘিরে। ওদের মাঝে সবচেয়ে লম্বা লোকটা ইংরেজিতে বলে উঠল, বুদ্ধু কোথাকার! দিয়েছিলে তো প্রিন্সকে শেষ করে! সর্বনাশ করে দিয়েছিলে আরেকটু হলেই! তোমার শাস্তি হওয়া দরকার!
আমি ঠিকই মেনেছি, আপনাদের ড্রাইভারই ট্রাফিক আইন মানেনি, দৃঢ় গলায় বলল হ্যানসন। পুরোপুরি ওর দোষ।
কি প্রিন্স প্রিন্স করছে ওরা! রবিনের কানের কাছে বিড়বিড় করল মুসা। দুজনেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে এক জানালার ওপর।
খবরের কাগজ পড় না নাকি? নিচু গলায় বলে উঠল রবিন। ইউরোপের ভ্যারানিয়া থেকে এসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সাতটা দেশের একটা। আমেরিকা দেখতে এসেছে।
খাইছে! কিশোরের মুখে শোনা বাঙালী বুলি ঝাড়ল মুসা। আরেকটু হলেই তো গেছিল!
দোষটা হ্যানসনের নয়! এই প্রথম কথা বলল কিশোর পাশা। চল নামি। সত্যিই কার দোষ, ওদেরকে বুঝিয়ে দেয়া দরকার।
তাড়াহুড়া করে নেমে এল তিন গোয়েন্দা। তাদের পর পরই লিমোসিনের পেছনের সিট থেকে নেমে এল আরেক কিশোর। রবিনের চেয়ে সামান্য লম্বা। কুচকুচে কালো চুল, লম্বা করে ইউরোপিয়ান ছাদে কাটা। বছর দুয়েকের বড় হবে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ।
থাম তোমরা! নিজের লোকদের ধমক লাগাল সে। সঙ্গে সঙ্গেই চুপ হয়ে গেল লোকগুলো। হাত নাড়তেই ঝটপট পেছনে সরে গেল ওরা। হ্যানসনের কাছে এগিয়ে এল ছেলেটা। ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি, চমৎকার শুদ্ধ ইংরেজি। আমার শোফারেরই দোষ।
কিন্তু, ইয়োর হাইনেস… বলতে গিয়েও বাধা পেয়ে থেমে গেল। লম্বা লোকটা। হাত নেড়ে থামিয়ে দিয়েছে তাকে প্রিন্স দিমিত্রি। ফিরে চাইল তিন গোয়েন্দার দিকে।
কাজটা খুব খারাপ হয়ে গেছে, বলল প্রিন্স। দুঃখিত। তোমাদের ড্রাইভার খুব ভাল, তাই রক্ষে। নইলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেত!…বাহ্, গাড়িটা তো খুব সুন্দর! রোলস রয়েসটা দেখিয়ে বলল। কিশোরের দিকে তাকাল। মালিক কে? তুমি?
ঠিক মালিক নই, বলল কিশোর। তবে মাঝে মধ্যে মালিকের মতই ব্যবহার করি। রোলস রয়েস কি করে পেয়েছে ওরা, কতদিনের জন্য, সব কিছু ব্যাখ্যা করে বলার সময় এটা নয়।
কঙ্কাল দ্বীপ অভিযানের রিপোর্ট দিতে গিয়েছিল তিন গোয়েন্দা মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে। ওখান থেকে ফেরার পথেই এই অঘটন।
আমি দিমিত্রি দামিয়ানি, ভ্যারানিয়া থেকে এসেছি, নিজের পরিচয় দিল রাজকুমার। এখনও প্রিন্স পদবী পাইনি। তবে আগামী মাসেই অভিষেক অনুষ্ঠান হবে। আমার লোকেরা জানে, আগে হোক পরে হোক, প্রিন্স আমিই হব, তাই ছোটবেলা থেকেই ওই নামে ডাকে। তোমরা কি পুরোদস্তুর আমেরিকান?
পুরোদস্তুর বলে কি বোঝাতে চাইছে দিমিত্রি, বুঝতে পারল না রবিন আর মুসা। চুপ করে রইল।
জবাব দিল কিশোর। ওরা দুজন আমেরিকান, দুই বন্ধুকে দেখিয়ে বলল সে। এখন আমিও তাই। বাবা এখানকার ন্যাশন্যালিটি পেয়ে গিয়েছিল। তবে, আসলে আমি বাঙালী, বাংলাদেশী।
পরস্পরের দিকে চেয়ে হাসল রবিন আর মুসা। জীবনে কখনও চোখেও দেখেনি, তবু বাংলাদেশকে কতখানি ভালবাসে কিশোর পাশা, জানা আছে তাদের। তাই তার কথায় আহত হল না। আর তাছাড়া তেমন আহত হবার কোন কারণও নেই। ওরাও পুরোপুরি আমেরিকান নয়। একজনের রক্তে রয়েছে আইরিশ রক্তের মিশ্রণ, আরেকজনের দাদার বাবা ছিল খাঁটি আফ্রিকান।
পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে বাড়িয়ে ধরল কিশোর। আমাদের পরিচয়।
কার্ডটা নিল দিমিত্রি।
তিন গোয়েন্দা
???
প্রধান: কিশোর পাশা
সহকারী: মুসা আমান
নথি, গবেষক: রবিন মিলফোর্ড
অপেক্ষা করে রইল তিন গোয়েন্দা কার্ড দেখে নতুন সবাই যা করে, তাই হয়ত করবে দিমিত্রি। প্রথমেই প্রশ্ন করবে, প্রশ্নবোধকগুলোর মানে কি।
ব্রোজাস! বলে উঠল দিমিত্রি। হাসল। সুন্দর করে হাসে রাজকুমার। ঝকঝকে সাদা দাঁত, মুসার মত। তবে মাড়ি বাদামী নয়, টুকটুকে লাল, ঠোঁটও তাই। ও, শব্দটার মানে বোঝনি? ভ্যারানিয়ান ভাষায় এর মানে, চমৎকার। তা, এই প্রশ্নবোধকগুলো নিশ্চয় তোমাদের প্রতীক চিহ্ন?