নিজের অসহিষ্ণুতাকে সযত্নে লুকিয়ে রেখে, গ্লোরিয়া অপেক্ষা করতে থাকে, রোবট মহাশয়ের উত্তরের জন্য এমন সময়ে তার পেছন থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে ‘ঐ যে ওখানে ‘ এবং বুঝতে পারে সেটা তার মায়ের কণ্ঠস্বর।
“নচ্ছাড় মেয়ে, এখানে একা একা কি করছো?” এতক্ষণের উৎকণ্ঠা ক্রোধে রূপান্তরিত হতে তিনি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করেন। “তুমি জানো তোমার কথা ভেবে ভেবে তোমার বাবা আমার কি দশা হয়েছে? পালিয়ে এসেছো কেন?”
রোবট বিশেষজ্ঞও ঠিক একই সময়ে আক্ষরিক অর্থে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে এসে জানতে চায় উপস্থিত দর্শনার্থীদের ভিতরে কে যন্ত্রটার এই বেহাল দশা করেছে। “কেউ কি পড়তেও জানে না?” সে চিৎকার করে বলে। “সহায়তাকারী ছাড়া যে এখানে প্রবেশ করা নিষেধ।
হট্টগোল ছাপিয়ে গ্লোরিয়ার বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর শোনা যায়। “মা, আমি কথা বলা রোবট দেখতে এসেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু তারা দু’জনেই রোবট তাই সে বোধহয় জানে রোব্বি কোথায়।” আর রোব্বির কথা মনে হতেই তার অভাব। স্পষ্টভাবে তার কাছে প্রতিভাত হয় এবং অদম্য কান্নায় সে ভেঙে পড়ে বলে, “মা, রোব্বিকে আমার খুঁজে বের করতেই হবে। আমাকে খুঁজে পেতেই হবে তাকে।”
কান্না আটকে মিসেস, ওয়েসটন কোনোমতে বলেন, “ওহ, ঈশ্বর রক্ষা করো। জর্জ বাসায় চলো। এসব আর একটুও আমার সহ্য হচ্ছে না।”
সেদিন সন্ধ্যেবেলা জর্জ ওয়েসটন কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে যান এবং পরদিন সকাল বেলা বোকার স্বর্গে বাস করার মতো একটা ধারণা নিয়ে সে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলে।
“গ্রেস, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।”
“কি বিষয়ে?” বিমর্ষ, অনিচ্ছুক জিজ্ঞাসা।
“গ্লোরিয়াকে নিয়ে।”
“তুমি নিশ্চয়ই সেই রোবট আবার ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছো না?”
“না, অবশ্যই না।”
“তাহলে বলতে পারো। তোমার ধারণা শুনতে আমার বাধা নেই। আমার চেষ্টাতে কোনো ফল হল না সেটা দেখতেই পাচ্ছি।”
“ঠিক আছে। বলি তাহলে, আমি কি চিন্তা করেছি। আমাদের সমস্যা হল সে রোব্বিকে একটা মানুষ মনে করছে, যন্ত্র হিসাবে কল্পনা করছে না। স্বাভাবিক কারণে সে তাই তাকে ভুলতে পারছে না। এখন আমরা যদি তাকে বোঝাতে পারি যে রোব্বি আদতে স্টিল আর তামার পিণ্ড, পাত আর তারের রূপে যার আকৃতি এবং বিদ্যুৎ হল তার চালিকাশক্তি, তাহলে তার এই আকুতি কতদিন টিকবে বলে তোমার মনে হয়? তাকে মানসিকভাবে আলোড়িত করা, আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝতে পারছো।”
“তুমি কিভাবে করবে সেটা?”
“সেটা সহজ। আমি কাল রাতে কোথায় গিয়েছিলাম বলে তোমার মনে হয়? আমি ইউএস রোবটস এণ্ড মেকানিক্যাল মেন ইনক-এর রবার্টসনকে বহু কষ্টে রাজি করিয়েছি, সে কাল তার কারখানাটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখাবে। কাল আমরা তিন জন যাব আর আমার বিশ্বাস পুরো কারখানাটা ঘোরা শেষ হবার আগেই গ্লোরিয়া নিজেই বুঝতে পারবে রোবটের প্রাণ নেই।”
মিসেস, ওয়েসটনের চোখ ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে এবং একটা সময়ে বোধহয় তার চোখে প্রশংসার ঝিলিকও দেখা যায়। “ওহ, জর্জ, আশা করি এতে কাজ হবে।”
জর্জের জ্যাকেটের বোতাম টান খায়। “আমার মতো আর কেউ পারবে,” সে বলে।
.
মি.স্ট্রথার্স একজন বিবেকবান জেনারেল ম্যানেজার আর সেই কারণেই হয়তো একটু বক্কানোসরাস। এই দুই গুণের সংমিশ্রণের কারণে কারখানা ভ্রমণটা একটা পূর্ণাঙ্গ পাঠশালায় পরিণত হতে দেরী হয়না। অবশ্য মিসেস, ওয়েসটন বিরক্তবোধ করেন না। তিনি বরং কথার মাঝে তাকে কয়েকবার থামান এবং অনুরোধ করেন। বক্তব্য বিষয়কে আরেকটু সহজ করে বিশ্লেষণ করতে যাতে গ্লোরিয়ার পক্ষে বুঝতে সুবিধে হয়। মি. স্টুথার্স নিজের বাগিতায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যান আর চেষ্টা করেন যতটা তার সাধ্যে কুলায় ব্যাখ্যা করতে।
জর্জ ওয়েসটনের মাঝে ক্রমশ বিরক্তি প্রকাশ পেতে থাকে।
“স্টুথার্স, মার্জনা করবেন,” ফটো-ইলেকট্রি সেল নিয়ে বক্তৃতার মাঝপথে সে কথা বলে উঠে, “আপনাদের কারখানায় একটা অংশ আছে না, যেখানে কেবল রোবট শ্রম ব্যবহৃত হয়?”
“ওহ! হা! অবশ্যই, অবশ্যই!” মিসেস. ওয়েসটনের দিকে তাকিয়ে সে মৃদু হাসে। “একটা দুষ্ট-চক্র বলতে পারেন, রোবট আরও রোবট তৈরী করে চলেছে। আমরা অবশ্য ঢালাও ভাবে এটা তৈরী করি না। আর তাছাড়া, ইউনিয়নও আমাদের সেটা করবার ছাড়পত্র দিবে না। কিন্তু আমরা একটা কাজ করেছি, সুনির্দিষ্টভাবে কেবলমাত্র রোবট শ্রম ব্যবহার করে কিছু রোবট বানিয়েছি, কাজটা অবশ্য আমরা করেছি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অংশ হিসাবে। তুমি দেখো,” নাক থেকে স্প্রিং লাগানো চশমাটা খুলে নিয়ে হাতের তালুতে আনমনে আঘাত করতে থাকে, “লেবার ইউনিয়ন যেটা বুঝতে পারছে না- এবং আমি এ কথা বলছি যে কিনা সারা জীবন শ্রম আন্দোলনের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল- যে রোবটের আগমনের সাথে সাথে, শুরু কিছু কিছু স্থানচ্যুতি ঘটলেও, অনিবার্যভাবে
“হ্যাঁ, তোমার কথা আমি বুঝতে পেরেছি,” ওয়েসটন বলে, “কিন্তু কারখানা যে অংশের কথা বলছো সেটার কি হল- আমরা কি সেটা দেখতে পারি? আমার মনে হয় ব্যাপারটা খুব আকর্ষণীয় হবে।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই, সেতো বটেই,” সহসা নড়ে উঠে চশমাটা সে পুনরায় নাকে খুঁজে দেয় এবং বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে কাশতে থাকে, “আমার পেছন পেছন এসো।”