‘ব্রিক লেনে যেতে হবে আমাদেরকে,’ বলল আমাকে।
‘কেন?’
‘লন্ডনে ফিরে এসেছে ড্যামিয়েন ক্যুপার।’
‘একটু আগে আপনাকে ফোন করেছিল কে?’
সেটা জানা কি খুব জরুরি?’
‘প্রয়োজনীয় ইনফর্মেশন কোত্থেকে পাচ্ছেন আপনি, জানতে কৌতূহল হচ্ছে আমার।’
কিন্তু হোথর্ন কিছু বলল না।
সে চুপ করে আছে দেখে বলে চললাম, ‘আপনি জানতেন, দক্ষিণ কেনসিংটন স্টেশনে গিয়েছিলেন জুডিথ গডউইন। কেউ একজন সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে দিয়েছিল আপনাকে। আন্দ্রিয়া ক্লুভানেকের ক্রিমিনাল রেকর্ডের ব্যাপারেও জানা ছিল আপনার। অথচ আপনি এখন আর পুলিশে চাকরি করছেন না। তারপরও দেখা যাচ্ছে ইনফর্মেশনের কোনো অভাব হচ্ছে না আপনার।’
‘এসব তেমন জরুরি কিছু না।’
‘আপনার জন্য হয়তো না, কিন্তু আমার জন্য জরুরি। আপনাকে নিয়ে একটা বই লিখছি আমি। কাজেই পাঠককে জানাতে হবে, কোত্থেকে এসব তথ্য জোগাড় করছেন। নিশ্চয়ই বলবেন না, বাতাস থেকে এত কথা জানতে পারছেন? দরকার হলে বলুন কারও সঙ্গে কোনো একটা গ্যারেজে দেখা করছেন, আর সে-লোক এসব কথা জানাচ্ছে আপনাকে। তার নাম-পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে তাকে ‘ডিপ থ্রোট’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেও কোনো অসুবিধা নেই আমার। আচ্ছা, থাক, বাদ দিন। সত্যিটা জানা দরকার আমার। বোঝাই যাচ্ছে, আপনাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার মতো কেউ-না-কেউ আছে। আমি জানতে চাই, কে লোকটা?’
‘ঠিক আছে। বলছি। কিন্তু তার নাম বলা যাবে না। ধরে নিন, আমার এক পুরনো সহকর্মী সে। আমার সঙ্গে যা ঘটেছিল, সে-ব্যাপারে মোটেও খুশি ছিল না সে। মানে… আমি বলতে চাইছি… ওই ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না আসলে। যা-হোক, ঘটনাটার পর থেকে আমাকে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে ওই লোক।’
‘আপনারা এ-রকম কতজন কাজ করছেন পুলিশের পক্ষে?’
‘বলতে গেলে আমি একাই। কারণ অন্য যারা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছে, তারা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারছে না। তাদের পেছনে শুধু শুধু টাকা আর সময় খরচ করছে পুলিশ।’
‘ব্রিক লেনের ব্যাপারে কী যেন বলছিলেন?’
‘গতকাল ফিরে এসেছে ড্যামিয়েন ক্যুপার। একটা বিজনেস ক্লাস ট্রিপে সওয়ার হয়ে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে এসেছে সে। সঙ্গে তার বান্ধবীও আছে। মেয়েটার নাম গ্রেস লভেল। তাদের সঙ্গে আবার একটা বাচ্চাও আছে।’
‘ড্যামিয়েন ক্যুপারের যে কোনো সন্তান ছিল, আগে বলেননি।
‘আগে বলেছিলাম, ওই লোকের কোকেন খাওয়ার বদভ্যাস আছে। যা-হোক, ব্রিক লেনে নিজের একটা ফ্ল্যাট আছে তার। এখন সেখানেই যাচ্ছি আমরা।
হোথর্ন আমাকে কবে বা কখন বলেছিল কোকেন খাওয়ার বদভ্যাস আছে ক্যুপারের, মনে করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। যা-হোক, হ্যাঁরো স্কুলটা পার হলাম দু’জনে, এগিয়ে যাচ্ছি স্টেশনের দিকে। এই কেসে নিজের ভূমিকা নিয়ে ভাবছি। লন্ডনের এখানে-সেখানে যাচ্ছে হোথর্ন, ওকে স্রেফ অনুসরণ করছি আমি… তার বেশি কিছু না। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে আমার মনে। কারণ পশ্চাদ্গমনের এই ব্যাপারটা বই-লেখার-ক্ষেত্রে কীভাবে সাহায্য করবে আমাকে, ঠিক বুঝতে পারছি না। ব্রিটানিয়া রোড থেকে ফিউনারেল পার্লার, তারপর সাউথ অ্যাক্টন, মার্বেল আর্চ, হ্যাঁরো-অন-দ্য-হিল… আর এখন যাচ্ছি ব্রিক লেনে। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা এখন একটা হত্যারহস্যের তুলনায় লন্ডনের এ টু জেড’ বলে মনে হচ্ছে।
জেরেমি গডউইনের সঙ্গে দেখা করেও কোনো ফায়দা হয়নি… ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর ঠেকছে আমার কাছে। অথচ ডায়ানা ক্যুপার টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, জেরেমিকে দেখেছিলেন তিনি। আবার একইসঙ্গে এ-কথাও ঠিক, একা একা বাড়ির বাইরে বের হওয়া অথবা লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোটা সম্ভব না জেরেমির পক্ষে। আর নৃশংস ও সুপরিকল্পিত কোনো হত্যাকাণ্ডের কথা যদি বলি… ও-রকম কোনো কিছু ওই ছেলের দ্বারা এককথায় অসম্ভব। এখন কথা হচ্ছে, জেরেমি যদি মিসেস ক্যুপারের গলায় ফাঁস আটকে না- থাকে, তা হলে কে করেছে কাজটা?
ব্রিক লেনে যাওয়ার জন্য একটা টিউব ট্রেনে সওয়ার হলাম আমরা। টিউবে না-উঠে যদি ট্যাক্সি নিতাম, তা হলে সারাদিনেও পৌঁছাতে পারতাম কি না জায়গামতো, সন্দেহ আছে
আমাদের কামরার ভিতরটা বলতে গেলে খালি। হোথর্নের মুখোমুখি বসেছি আমি।
দরজাটা লেগে যাওয়ামাত্র সে জানতে চাইল, ‘কোনো নাম রেখেছেন?’
‘নাম? কীসের?’
‘বইটার!’
‘এখনও নাম রাখার সময় হয়নি। কারণ, এখন পর্যন্ত সমাধান করতে পারেননি আপনি রহস্যটার। যদি করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আমি বুঝতে পারবো, কী নিয়ে একটা বই লিখতে যাচ্ছি।’
‘কোনো বই লেখার সময় নামটা কি আগেই ভেবে নেন না? ‘
‘না।’
বইয়ের নামকরণের ব্যাপারটা কখনোই সহজ কোনো কাজ বলে মনে হয় না আমার। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর দুই লক্ষের মতো বই প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো বই লেখেন স্বনামধন্য লেখক বা লেখকেরা। কোনো কোনো বইয়ের নামকরণ করা হয় মাত্র দুই কি তিন শব্দ ব্যবহার করে। পুরো প্রচ্ছদের বড়জোর ছয় থেকে নয় ইঞ্চির মতো জায়গা দখল করে ওসব নাম। আমার মতে, বইয়ের নাম হতে হবে সংক্ষিপ্ত, স্মার্ট, এবং সেটার একটা অর্থ থাকতে হবে। এমনভাবে করতে হবে নামকরণের কাজটা, যাতে সহজেই পড়তে পারে পাঠক, এবং সহজেই মনে রাখতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, নামটা হবে হবে মৌলিক। এত কিছু মিলিয়ে নামকরণের কাজটা দুরূহ হয়ে যায় কখনও কখনও।