- বইয়ের নামঃ দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট
- লেখকের নামঃ অ্যালেক্স মাইকেলিডিস
- প্রকাশনাঃ ভূমিপ্রকাশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, গোয়েন্দা কাহিনী
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট
১.১ অ্যালিসিয়া বেরেনসনের ডায়েরি
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট / মূল : অ্যালেক্স মাইকেলিডিস
অনুবাদ : সালমান হক / প্রথম প্রকাশ : জুলাই ২০২০
অনুবাদকের উৎসর্গ : কালকের দিনটা হয়তো আজকের চেয়ে ভালো কাটবে, এই আশায় বুক বাঁধা সবাইকে…
.
পূর্বকথা
অ্যালিসিয়া বেরেনসনের ডায়েরি : জুলাই ১৪
জানি না কেন লিখছি এসব।
বলা যায় না, জানতেও পারি। কিন্তু নিজের কাছে স্বীকার করতে চাইছি না।
এই লেখাকে কী নাম দেব, সেটাও জানি না। ডায়েরি বলাটা একটু নাটুকে শোনাবে বোধহয়। এমন তো না যে কিছু বলার আছে আমার। অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের মত মানুষদেরই কেবল ডায়েরি লেখা মানায়। জার্নাল বললে বড় বেশি আঁতেল মার্কা শোনায়। তখন আবার মনে হবে, প্রতিদিনই লিখতে হবে এখানে, ফলে নিয়মিত লেখার প্রতি অনীহা জন্মাবে।
নাম না দিলেও কিছু আসে যায় না। মাঝে মাঝে শুধু এখানে কিছু কথা লেখবো, ব্যস। একবার কোন কিছুর নাম দিলে দেখা যায় সেই নামটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। ঘুরে ফিরে সেই শব্দগুলোই মাথায় ঘোরে। কিন্তু শব্দ তো গোটা চিত্রের খুবই ছোট একটা অংশ, সমুদ্রের উপরের পৃষ্ঠে বেরিয়ে থাকা হিমশৈলের চুড়ার মতন। তাছাড়া কথা বা শব্দে কখনোই সুবিধে করতে পারিনি আমি, বরং ছবির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই বলা যায় যে গ্যাব্রিয়েল জোরাজুরি না করলে এখানে লেখা শুরুই করতাম না বোধহয়।
কিছুদিন যাবত বিষণ্ণতা জেঁকে বসেছে আমার মধ্যে, কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত। ভেবেছিলাম ঠিকঠাক লুকোতে পেরেছি ব্যাপারটা, কিন্তু ওর চোখে ঠিকই পড়েছে। জানতাম যে পড়বে, সবকিছুর প্রতি খেয়াল থাকে ওর। জিজ্ঞেস করেছিল, আমার আঁকাআঁকি কেমন চলছে। সত্যিটাই বলেছিলাম-চলছে না। তখন এক গ্লাস ওয়াইন এনে দেয় আমাকে, টেবিলে বসে ওর রান্না দেখতে থাকি।
গ্যাব্রিয়েলের রান্নার একটা আলাদা ধরণ আছে, দেখতে ভালো লাগে। চমৎকার রাধুনি সে-ছিমছাম, গোছানো। আমার পুরো উল্টো।
“কিছু বলল,” বলে সে।
“বলার কিছু থাকলে না বলবো। মাঝে মাঝে নিজের মনেই আটকে যাই, জানো? মনে হয় কাদাভর্তি জলার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি।”
“তাহলে লেখার চেষ্টা করলেও তো পারো। মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোও গোছাতে পারবে তখন।”
“খারাপ বলোনি। চেষ্টা করে দেখবো।”
“আমাকে খুশি করার জন্যে না বলে আসলেও লেখা শুরু করো, ডার্লিং।”
“করবো।”
এরপর থেকে প্রায়ই আমাকে ব্যাপারটা নিয়ে তোতে শুরু করে সে, কিন্তু পাত্তা দেই না আমি। কিছুদিন পর এই ছোট্ট নোটবুকটা নিয়ে আসে আমার জন্যে। কালো চামড়ায় মোড়ানো, ভেতরে খালি পৃষ্ঠা; গতানুগতিক কাগজের চাইতে কিছুটা পুরু। প্রথম খালি পৃষ্ঠাটায় হাত বুলাই একবার-মসৃণতাটুকু অনুভব করি চোখ বুজে। এরপর পেন্সিল চেঁছে নিয়ে লেগে পড়ি।
ঠিকই বলেছিল ও। আসলেই লিখতে শুরু করার পর ভালো লাগছে। মনের গুমোট পরিবেশটা হাল্কা হচ্ছে, অনেকটা থেরাপির মতন।
গ্যাব্রিয়েল মুখ ফুটে বলেনি, কিন্তু ও যে আমাকে নিয়ে চিন্তিত সেটা ঠিকই বুঝতে পেরেছি। সত্যি কথা বলতে (এখানে সত্যটাই লিখবো সবসময়), আমি এখানে লেখা আসলে শুরুই করেছি ওকে আশ্বস্ত করার জন্যে। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে সে, এটা ভাবতে ভালো লাগে না একদমই। আমার কারণে কষ্ট পাচ্ছে গ্যাব্রিয়েল, এমনটা হতে দিতে পারি না। ওকে যে ভীষণ ভালবাসি! নিজের পুরোটা উজাড় করে ভালোবাসি। এই ভালোবাসার কারণেই মাঝে মাঝে মনে হয়
নাহ। ঐ ব্যাপারে কিছু লিখবো না।
আমার ছবিগুলো আঁকার পেছনের গল্প, অনুপ্রেরণার গল্প-এসবই লিখবো এখানে। ইতিবাচক, হাসিখুশি, স্বাভাবিক চিন্তাগুলোকে শব্দে রূপান্তরের চেষ্টা করবো।
উল্টোপাল্টা ভাবনার কোন জায়গা নেই।
.
প্রথম পর্ব
দর্শন ও শ্রবণশক্তি সম্পন্ন প্রতিটা মানুষই ভাবতে পারে যে কারো পক্ষেই কোন কিছু গোপন রাখা সম্ভব নয়। যদি তার মুখ বন্ধ থাকে, তাহলে তার আঙুলগুলো কথা বলতে শুরু করে। আর তার অস্তিত্বের প্রতিটা রন্ধ্র হতে ঠিকরে পড়ে বিশ্বাসঘাতকতা।
— সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ইন্ট্রোডাকটরি লেকচারস অন সাইকোঅ্যানালাইসিস
১.১
তেত্রিশ বছর বয়সে স্বামীকে হত্যা করে অ্যালিসিয়া বেরেনসন। কদিন আগেই সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছিল তারা। দুজনই শিল্পী-অ্যালিসিয়া চিত্রশিল্পী, আর গ্যাব্রিয়েল একজন বিখ্যাত ফ্যাশন ফটোগ্রাফার। ছবি তোলার একটা স্বকীয় ভঙ্গিমা আছে গ্যাব্রিয়েলের। অদ্ভুত সব কোণ থেকে একহারা গড়নের, অর্ধনগ্ন সব নারীদের ছবি। মৃত্যুর পর ছবিগুলোর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। আমার কাছে অবশ্য তার কাজগুলো একদমই খেলো মনে হয়। বিষয়বস্তুর কোন গভীরতা নেই। অ্যালিসিয়ার ভালো কাজগুলোর সামনে ধোপেই টিকবে না। নিজেকে অবশ্য শিল্প সমঝদার দাবি করবো না, কালের পরিক্রমায় অ্যালিসিয়ার কাজগুলো টিকে থাকবে কি না তা সময়ই বলবে। তবে তার এই মহান(!) কীর্তি অন্য সবকিছুকে ম্লান করে দিবে, এটা নিশ্চিত। আপনারা অবশ্য বলতে পারেন যে আমি পক্ষপাতিত্ব করছি। ধরে নিন, আপাতত নিজের মতামতটুকু দিচ্ছি, এই যা। আর আমার মতে অ্যালিসিয়া জিনিয়াস। কৌশলগত দক্ষতার কথা বাদ দিলেও, তার ছবিগুলো আপনা থেকেই প্রবলভাবে যে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করবে। কিংবা বলা যায়, বাধ্য করবে মনোযোগ দিতে।