যেন বলতে চাইছে, এসো! এখান থেকে বেরিয়ে যাই।
জুলিয়াদের ড্রাইভওয়ের শেষ মাথায় চলে এল কিশোর। কিন্তু বাঘা ওকে বাঁ দিকে টানল।
বোকা কোথাকার, বাসা ওদিকে নয়।
কিন্তু বাঘা ওকে টেনেই চলল। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিল কিশোর।
ঠিক আছে, তোর জন্যে ঘুরপথে বাসায় যেতে হবে দেখছি।
ব্লক ধরে অল্প কিছুদূর এগোল ওরা। জিম কেলিকে সামনের উঠনে দেখতে পেল।
কিশোরকে দেখামাত্র ডেকে উঠল ও।
অ্যাই, কিশোর, তোমার কুকুরটাকে একটু আদর করতে দেবে? ওকে কটা খেলা শেখাতে পারি? দৌড়ে এল কিশোরের কাছে।
এখন নয়, বলে বাঘাকে পিছনে টেনে ধরে রাখল ও। জিম যাতে ওকে ভয় দেখাতে না পারে।
জিম কুঁকে বসে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল বাঘার। জিমের মুখ চেটে দিল কুকুরটা। এবার জিমের জুতো কামড়াতে লাগল।
আরি, ও তো আমার জুতো চিবোচ্ছে। ওকে থামাও।
বাঘাকে টেনে সরাতে গিয়ে একটা জিনিস চোখে পড়ল কিশোরের। বুকের ভিতরে ধড়াস করে উঠল ওর।
সরাও না ওকে! আমার জুতোর ফিতে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে তো! চেঁচিয়ে উঠল জিম।
জানি, বলল কিশোর। সরাসরি জিমের চোখে চোখে চাইল। ও তোমার জুতোর ফিতে চিবোচ্ছে। এবং দুটো ফিতে ম্যাচ করেনি!
আট
তোমার জুতোর একটা ফিতে নতুন, এবং সাদা। অন্যটা পুরানো আর সাদা-কালো, বলল কিশোর।
বাঘার কাছ থেকে পা-টা সরিয়ে নিল জিম। ওর ফিতে খুলে গেল।
তাতে কী? বলে ঝুঁকে বসল বাঁধার জন্য। আমার ফিতে ছিঁড়ে গেছে।
জানি। কোথায় ছিঁড়েছে তাও জানি, আমাদের বাসায়-তুমি যখন চকোলেট চিপ মাফিন চুরি করছিলে! বলল কিশোর।
মিথ্যে কথা। ঝটপট জবাব দিল জিম। আমি চকোলেট খাই না। চকোলেটে আমার অ্যালার্জি।
তা ঠিক, ভাবল কিশোর। কিন্তু ও যদি মাফিন চুরি না-ই করে থাকে তা হলে ওর জুতোর ফিতে স্ক্রীন ডোরে আটকাল কীভাবে?
আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমার পকেটে, বলে ঘেঁড়া ফিতেটা বের করে দেখাল কিশোর।
জিম চুপ করে আছে।
গড় ফলাফী ও চ দেখলে! তোমার জুতোর ফিতের সাথে হুবহু মিলে গেছে। এতে প্রমাণ হয় তুমি গত শুক্রবার আমাদের কিচেনে ঢুকেছিলে।
আহ… হ্যাঁ,বলল জিম। তবে ঢুকেছিলাম কেউ আমার নাম ধরে ডেকেছে ভেবে। দরজা খুলি আমি, কিন্তু কেউ ছিল না বলে চলে আসি।
ওর কথা বিশ্বাস করল না কিশোর। কিন্তু ও কিছু বলার আগেই হাত থেকে ঝটকা মেরে ফিতে ছুটিয়ে নিল বাঘা।
থাম! ফিরে আয়! চেঁচাল কিশোর। বাঘাকে ধাওয়া করে। বাড়িটাকে পাক খেয়ে জিমদের পিছনের উঠনে চলে এল।
ওকে অনুসরণ করল জিম।
উঠনের এক টুলশেডের উদ্দেশে সোজা ছুটল বাঘা। দরজায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিতরে ঢোকার জন্য আঁচড়াতে লাগল। একই সঙ্গে তারস্বরে ঘেউ-ঘেউ করছে।
ভেতরে ঢুকিস না! চিৎকার ছাড়ল জিম।
কিশোর বাঘাকে অনুসরণ করে শেডের কাছে এল। হাত রাখল দরজার হাতলে।
খুলো না! খুলো না! জিমের চিৎকার।
কেন? বলে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।
জবাব দিল না জিম। কী লুকোতে চাইছে ও, ভাবল কিশোর।
জিম ওকে থামাতে পারার আগেই হাতল ধরে টান দিল কিশোর।
পরমুহূর্তে সাত করে সেঁধিয়ে পড়ল বাঘা। গন্ধ শুঁকছে।
বাদামি এক কাগজের ব্যাগ। সদাই রাখার!
মিসেস বার্বাটভের সদাই! আমি জানতাম! কিশোর বলে উঠল। তোমার জুতোর ফিতেটা দেখামাত্র বুঝে গেছি তুমিই চোর!
বোঁ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রাখল ও। জ্বলন্ত চোখে জিমের দিকে চেয়ে। মাথা নুয়ে পড়েছে ছেলেটির।
হ্যাঁ, স্বীকার করছি চকোলেট চিপ মাফিনগুলো আমিই নিয়েছি। আর মিসেস বার্বাটভের গাড়ি থেকে সদাইয়ের ব্যাগও।
আর মিস্টার রেসের ব্যাকইয়ার্ড থেকে হ্যামবার্গার? প্রশ্ন করল কিশোর।
ডানে জুলিয়া হার্ভেদের বাড়ির দিকে চকিতে চাইল। কাছেই। বাড়িটা। জুলিয়াদের বাড়ির ঠিক পিছনেই রবি রেসের বাড়ি। জিম সহজেই ওখানে পৌঁছতে পারে।
হ্যাঁ, হ্যামবার্গারগুলোও আমি নিয়েছি, স্বীকার করল জিম। কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে?
আছে, বলে মুচকি হাসল কিশোর। খুশি লাগছে ওর। এই-ই? নাকি আরও খাবার সরিয়েছ।
আর সরাইনি, বলে মাটির দিকে দৃষ্টি নামাল জিম। একটু পরে চোখে মিনতি নিয়ে কিশোরের দিকে চাইল। কাউকে বোলো না, প্লিজ।
কেন করলে এসব?
আমার জন্যে করিনি। করেছি আমার কুকুরের জন্য। কিশোরের প্রশ্নের জবাবে বলল।
তোমার কুকুর? কিন্তু তোমার তো কুকুর নেই।
বেওয়ারিশ কুকুর। আমি ওকে জিপসি বলে ডাকি। ওকে খেতে দেই, যে কারণে রয়ে গেছে।
ওহ, মাথা নেড়ে বলল কিশোর। বুঝতে পেরেছে কোন্ কুকুরটার কথা বলছে জিম-বেওয়ারিশ ট্যান কুকুরটা।
জিপসি আমাকে ফলো করছিল, মিসেস বার্বাটভ যেদিন বাড়ি ফেরেন, বলে চলল জিম। উনি বাড়ির ভিতর গেলে সদাই সরাই আমি।
সেজন্যেই ড্রাইভওয়েতে কুকুরের পায়ের ছাপ দেখা গেছে, আওড়াল কিশোর। জিপসি তোমার সাথে ছিল।
হ্যাঁ।
এবার শেডে রাখা সদাইয়ের ব্যাগটা নজরে এল কিশোরের।
কিন্তু ওটা তো এখনও প্রায় ভর্তি।
কাগজ দিয়ে ঠাসা। ন্যাপকিন, পেপার প্লেট, টিসু পেপার এবে। আর এক বাক্স ম্যাকারনি। খাবার বলতে ছিল এক প্যাকেট হ্যামবার্গার মিট।
কিশোর কাছ থেকে দেখল। জিমের কথাই ঠিক। বেশিরভাগই কাগজের জিনিস, তবে মাংসের রসের একটা দাগও রয়েছে।
বাঘা এটার গন্ধই পেয়েছিল, হঠাই অনুভব করল কিশোর। ঝুঁকে বসে বাঘাকে জড়িয়ে ধরল।
বাঘা লেজ নেড়ে কিশোরের নাক চেটে দিল।