কুকুরটার থাকার জায়গা নেই, দুঃখজনক। দেখতে একটু রুক্ষ হলেও স্বভাব ভাল কুকুরটার।
হঠাই ভরাট এক কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠল।
হাই, আবার দেখা হয়ে গেল।
কে? চারধারে নজর বুলিয়েও কাউকে দেখতে পেল না কিশোর।
এই যে এখানে, বলল কণ্ঠটি। মাথা নামাও। কিশোর মাথা নামিয়ে দেখতে পেল জর্জ বেস্টকে। এক প্রতিবেশীর ঝোপের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে। হাতে মোটা চামড়ার দস্তানা। গর্ত খুঁড়ছে।
ওহ, হাই, ভয় পেয়ে গেছিলাম। কী করছেন আপনি? কিশোর পিছে সরে প্রশ্ন করল। কিছু মাটিচাপা দিচ্ছেন নাকি?
না, আগাছা সাফ করছি। তবে সহজে উপড়ানো যাচ্ছে না এগুলোকে, হেসে বলল জর্জ।
হুম, ভাবল কিশোর, আজকে আজব এক দিন। প্রথমে রয় হার্ভের। সঙ্গে দেখা হলো। তারপর বেওয়ারিশ কুকুরটা ওকে অনুসরণ করতে শুরু করল। আর এখন ও যেখানে যাচ্ছে সেখানেই জর্জ বেস্টকে দেখতে পাচ্ছে।
সন্দেহভাজনরা আমাকে যেন অনুসরণ করছে, ভাবল ও।
ড্রাইভওয়েতে পৌঁছে, দৌড়তে দৌড়তে পিছনের উঠনে চলে এল কিশোর। কোলে তুলে নিল বাঘাকে।
.
সেদিন ডিনারের পর চাচার সঙ্গে হাঁটতে বেরোল কিশোর। জর্জ বেস্ট যে বাড়িটায় কাজ করছিল সেটা পেরিয়ে হাঁটতে লাগল ওরা।
আচ্ছা, চাচা, তুমি জর্জ বেস্টকে বিশ্বাস করো? প্রশ্ন করল কিশোর।
নিশ্চয়ই। কেন রে?
কারণ যখনই খাবার চুরি যায় সে আশপাশে থাকে, বলল কিশোর।
চাচাকে ও খুলে বলল কীভাবে সদাই চুরি যায় মিসেস বার্বাটভের বাড়ি থেকে। এবং মাফিনগুলো খোয়া যাওয়ার পরপরই জর্জ বেস্টকে দেখা গেছে ওদের বাড়িতে।
এতে কিছু প্রমাণ হয় না, বলল চাচা।
আমি জানি, কিন্তু–
ঠিক এ সময় রবি রেসের বাসার পিছন থেকে একটা শব্দ শোনা গেল। জর্জ এ বাড়িতেই আগাছা সাফ করছিল।
কিশোর জমে গেল। ভয় পেয়েছে। এবার আবারও শব্দটা শুনতে পেল।
কীসের শব্দ? জিজ্ঞেস করল ও।
জানি না, বলল রাশেদ চাচা। আর্তনাদের মত শোনাল!
ছয়
চিৎকারটা রবি রেসের ব্যাকইয়ার্ড থেকে এসেছে, বলল রাশেদ চাচা। পিছনের গেটের উদ্দেশে ধেয়ে গেল ওরা।
হ্যাল্লো, রবি, গলা ছেড়ে বলল রাশেদ চাচা। সব ঠিক আছে। তো?
রবি রেস মুখ তুলে চাইলেন। হাতে ধরা স্পেটুলাটা নাড়লেন।
এবার ওদের সঙ্গে কথা বলতে গেটের কাছে হেঁটে এলেন।
হাই, পাশা। হাই, কিশোর, বললেন। বললে বিশ্বাস করবে না, কিন্তু কে যেন আমার পিকনিক টেবিল থেকে এইমাত্র চারটে হ্যামবার্গার চুরি করে নিয়ে গেছে!
তাই নাকি? প্রশ্ন করল কিশোর। চোখের তারা জ্বলে উঠল ওর। আবারও খাবার চুরি!
কীভাবে চুরি গেল? জিজ্ঞেস করল রাশেদ চাচা।
গ্রিলে হ্যামবার্গার করছিলাম। একটা প্লেটে চারটে বার্গার সাজিয়ে টেবিলে রাখি। তারপর বাড়ির ভিতরে যাই সালাদ আনতে। বেরিয়ে এসে দেখি হ্যামবার্গার হাওয়া, বললেন রবি রেস।
কোন বেওয়ারিশ কুকুর হয়তো খেয়ে নিয়েছে, রাশেদ চাচা বলল।
উঁহু, বলে স্পেটুলা দিয়ে নির্দেশ করলেন রবি। গোটা ইয়ার্ড ঘিরে বেড়া। গেটও বন্ধ ছিল। কুকুর এখানে ঢুকবে কীভাবে?
জর্জ বেস্টের ব্যাপারে… শুরু করল কিশোর।
কী? প্রশ্ন করলেন রবি।
আজকে তাকে আমি এখানে দেখেছি।
তা দেখতে পারো। ও কয়েক ঘণ্টা আগেই বাড়ি ফিরে গেছে, জানালেন রবি।
হেসে উঠল রাশেদ চাচা।
রহস্য বেশ জমাট বেঁধেছে দেখা যাচ্ছে। আমার ভাতিজা রহস্য ভালবাসে জানোই তো? ও হয়তো কালকের মধ্যেই রহস্যের সমাধান করে ফেলবে।
মৃদু হাসলেন রবি।
অত সময় কই? আজ রাতে ডিনার করতে হবে না?
ফিরতি পথে চুপ করে রইল কিশোর। চিন্তামগ্ন।
পেয়েছি! বাড়ি পৌঁছতেই বলে উঠল ও।
কী? চাচার জিজ্ঞাসা।
মিস্টার রবির পেছনের বাসাটা। ওখানে জুলিয়া থাকে, বলল কিশোর।
তো? তোর ধারণা জুলিয়া খাবারগুলো চুরি করেছে! চোখ টিপে বলল রাশেদ চাচা।
না, ওর বড় ভাই রয় হার্ভে। চলে গিয়ে দেখি রয় বাসায় আছে। কিনা।
এখন না, অনেক রাত হয়ে গেছে। যা করার কালকে করিস, বলল চাচা।
.
পরদিন ঝটপট নাস্তা করল কিশোর। তারপর পোশাক পাল্টে নিল।
তবে বাড়ি ত্যাগের আগে ডিটেকটিভ নোটবইটা খুলল। একটা তালিকা করল কেন রয় হার্ভেকে সন্দেহ করছে।
কিশোর লিখল:
১. সদাই চুরির দিনে মিসেস বার্বাটভের বাড়ির বাইরে দেখা গেছে। ওকে।
২. চকোলেট চিপ কুকি চুরি করেছে ও। এর মানে চকোলেট চিপ পছন্দ ওর। ও কি চকোলেট চিপ মাফিনও চুরি করেছে?
৩. ওর বাড়ি রবি রেসের বাড়ির ঠিক পিছনে।
এবার তড়িঘড়ি নীচে নেমে এল ও। বাঘার লাল কলারে লাল ফিতে বেঁধে দিল।
এত সকাল সকাল কই চললি? চাচী জিজ্ঞেস করল। কিশোর আর বাঘাকে কিচেন দরজার দিকে এগোতে দেখেছে।
জুলিয়াদের বাড়িতে। হারানো মাফিনের রহস্য এখনও ভেদ করতে পারিনি। তার সাথে যোগ হয়েছে এক ব্যাগ সদাই, চারটে বার্গার আর একটা চকোলেট চিপ কুকি।
ওহ, তোর বাঘা হয়তো চুরিগুলো করেনি, বলল চাচী।
অবশ্যই না। এত খাবার ও চুরি করবে কীভাবে?
ঠিকই বলেছিস। আমার আসলে ওকে দোষ দেওয়া ঠিক হয়নি।
বাদ দাও, হওয়ার হয়েছে, বলে দরজার দিকে পা চালাল কিশোর।
বাঘাকে নিয়ে বেরিয়ে এল ও। তাজা বাতাস আর ঝলমলে রোদ পেয়ে ফুর্তি ধরে না বাঘার। লেজ নাড়ছে আর কিশোরের পা চাটছে।
ওর কাণ্ড দেখে হেসে ফেলল কিশোর।
ওরা জুলিয়ার বাসার কাছে পৌঁছে সাইডওয়কে মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে রইল।