এখানে থাক, বলল। আমি এখুনি, আসছি।
এক দৌড়ে বাড়ি ঢুকে নিজের কামরায় উঠে এল ও। ডেস্ক থেকে নীল নোটবইটা তুলে নিল। এক হাতে নোটবই আর অন্য হতে কলম নিয়ে তড়িঘড়ি নেমে এল নীচে।
কিন্তু স্ক্রীন ডোর ঠেলতেই চমকে উঠল ও।
পিছনের গেটের পাশে দাঁড়িয়ে জর্জ বেস্ট। ওর কোলে বাঘা!
চার
বুক ধড়াস-ধড়াস করছে কিশোরের। বাঘার সঙ্গে কী করছে জর্জ বেস্ট?
গাঁট্টাগোঁট্টা, বয়স্ক লোকটার কাছে ছুটে গিয়ে তার বাহু চেপে ধরল। উদ্বিগ্ন কিশোর।
আমার কুকুরকে ছেড়ে দিন! চেঁচিয়ে উঠল।
আমি তো ওকে ব্যথা দিচ্ছি না, ভরাট স্বরে বলল লোকটা। এই একটু নেড়েচেড়ে দেখছি আর কী।
মোটা, পেশীবহুল হাত দিয়ে বাঘার গলী চুলকে দিচ্ছে সে। এবার, মাটিতে নামিয়ে দিল।
সুন্দর কুকুর! মৃদু হেসে বলল কিশোরকে।
আপনি এখানে কী করছেন? কিশোর জবাব চাইল।
তোমার চাচা আমাকে ইয়ার্ডে কিছু কাজ করতে বলেছেন। তোমার চাচী গ্যারেজে গেছেন আমার জন্য হোস আনতে।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জর্জের মুখের চেহারা পরখ করল কিশোর। দেখে মনে হলো না মিথ্যে বলছে। তবে সন্দেহ পুরোপুরি কাটল না ওর। প্রথমে মিসেস বার্বাটভের সদাই যখন চুরি গেল ও তখন ওখানে। আর এখন মাফিন খোয়া যাওয়ার দিনে কিশোরদের বাড়িতে!
চকিতে জর্জের জুতোর দিকে চাইল কিশোর-দেখে নিল ফিতে জোড়াও। ফিতে দুটো বাদামি, সাদা-কালো ডোরা কাটা নয়। কিচেনের দরজায় পাওয়া সূত্রটার সঙ্গে কোন মিল নেই।
তুমি ভয় পেয়ে গেছ নাকি? বলল জর্জ।
না, একটু চমকে গেছিলাম আরকী।
বাঘাকে পিছনে নিয়ে উঠন পেরোল ও। বসল এক গাছের তলায় গিয়ে। নোটবইটা উল্টে সাদা এক পাতা বের করল।
উপরে লিখল: হারানো মাফিন-রহস্য
নীচে লিখল:
সন্দেহভাজন
জর্জ বেস্ট, রয়হার্ভে, জিম কেলি।
এবার লিখল:
সূত্র ১. ছেঁড়া সাদা-কালো জুতোর ফিতে
সূত্র ২. খুঁড়ো, যেটা বাঘা সাবড়ে দিয়েছে
সূত্র ৩. মিসেস বার্বাটভের গাড়ির কাছে কুকুরের ভেজা পদচিহ্ন
জর্জের জুতোর ফিতে-বাদামি।
জিম-চকোলেটে অ্যালার্জি আছে।
রয়-প্রচুর খায়!
সন্দেহভাজনদেরকে আর সূত্রগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইল। কিশোর। কিন্তু বাঘা তা হতে দিল না। বারবার কিশোরের কোলে চড়ে কান চেটে দিচ্ছে।
নাম বলছি, ধমকে বলল কিশোর।
এসময় গেটের কাছ থেকে হাঁক ছাড়ল মেরি চাচী।
কীরে, মাফিনগুলোর কী খবর? চোখের তারা নাচিয়ে প্রশ্ন করল।
জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
ও তোমার মাফিন চুরি করেনি!
হয়তো…হয়তো নয়, কিশোরকে জ্বালানোর জন্য বলল চাচী। কিন্তু ও যদি খেয়ে না থাকে তবে কে খেল?
সেটাই তো জানতে চাই আমি, মনে মনে বলল কিশোর।
.
পরদিন সকাল। বিছানা থেকে নেমে সোজা নীচে চলে এল কিশোর। আজ শনিবার।
গুড মর্নিং, কিশোর, কিচেনে কিশোরকে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকতে দেখে বলল রাশেদ চাচা।
হাই, চাচা, বলল কিশোর।
কিচেনের ছোট কামরাটায় গিয়ে ঢুকল ও। ক্রেটের দরজার হুড়কো খুলে দিল। ব্ল্যাঙ্কেট থেকে লাফিয়ে পড়ল বাঘা। লেজ নাড়তে নাড়তে ছুটে এল।
বাঘাকে এক পাত্র পানি আর কিছু খাবার দিল কিশোর। এবার মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল।
এসময় কিশোরের গাউনের বেল্ট ধরে জোরসে টান দিল বাঘা।
দেখো, ও পার্কে যেতে চায়! বলল কিশোর। আমিও।
নাস্তা খেয়ে তারপর যাবি, বলল রাশেদ চাচা।
নাস্তার পরে আর বাঘাকে নিয়ে পার্কে গেল না কিশোর। ব্লু জিন্স, টেনিস শু আর টিশার্ট পরে নিল। তারপর বাঘাকে নিয়ে বেড়া ঘেরা পিছনের উঠনে চলে এল। ও যখন পার্কে থাকবে, যত খুশি ছোটাছুটি করুক বাঘা।
পার্কে পৌঁছে ঘাসের বুকে হেঁটে বেড়াল ও, ড্যাণ্ডেলিয়ন তুলল। তারপর দৌড়ে চলে এল দোলনার কাছে।
দুলতে শুরু করেছে এসময় একজনকে দেখতে পেল-রয় হার্ভের মত দেখতে।
পিকনিক টেবিলগুলোর কাছে স্কেট করছে ও।
দোলনা থেকে লাফিয়ে নেমে টেবিলগুলোর কাছে শশব্যস্তে চলে এল কিশোর।
কাছিয়ে এলে দেখতে পেল বড়সড় এক, পরিবার তাদের সমস্ত খাবার সাজিয়েছে দুটো টেবিলে। তবে এখনও খাওয়ার পাট শুরু করেনি। ফ্রিসবি খেলছে।
এসময় রয় স্কেট করে চলে এল এক টেবিলের কাছে। চোখের পলকে প্লেট থেকে একটা কুকি ছোঁ মেরে তুলে নিল। মুখ হাঁ হয়ে গেল কিশোরের। ওটা একটা চ কালেট চিপ কুকি।
রয় এবার স্কেট করে চলে গেল দ্রুতগতিতে!
পাঁচ
দাঁড়াও! ফিরে এসো! চিৎকার ছাড়ল কিলোর। কিন্তু থামল না রয়।
কিশোর ওর পিছু ধাওয়া করল। কাঁধের উপর দিয়ে কিশোরের দিকে চাইল রয়। ওর মুখে ধূর্ত হাসি দেখতে পেল কিশোর।
এবার কুকিটা মুখে চালান করে দিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে চলে গেল দৃষ্টিসীমার আড়ালে।
পিকনিক টেবিলগুলোর দিকে ফিরে চাইল কিশোর। পরিবারটা ফিসবি খেলছে। একটা কুকি খোয়া গেছে বলে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই।
কিশোর ঠিক করল বাড়ি ফিরবে। হাঁটছে, সাইডওয়কে একটা আঁচড়ানির শব্দ শুনতে পেল। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল বেওয়ারিশ ট্যান কুকুরটা দুলকিচালে ওর পিছে পিছে দৌড়চ্ছে। মনে হচ্ছে অনুসরণ করছে।
না, আসিস না, আমার কুকুর আছে, বলে উঠল কিশোর। কথাগুলো বলামাত্র কুকুরটা কিশোরের কাছে এসে ওর হাত উঁকল।
থাম, দৃঢ় কণ্ঠে বলল কিশোর। থাম।
এবার রাস্তা পেরোল ও। পিছু ফিরে চাইল। উল্টোদিকের সাইডওয়কে বসে কুকুরটা। মনে হলো থাম মানে বোঝে ওটা।