কিন্তু কুকুরটা ব্লকের শেষ মাথায় দৌড়ে গিয়ে উধাও হয়ে গেল।
ফিরে আয়, বাঘা! দৌড়চ্ছে আর চেঁচাচ্ছে কিশোর।
মুসা আর রবিন পিছু পিছু ছুটল কিশোরের। ব্লকের শেষ মাথায় পৌঁছে থমকে দাঁড়াল ওরা। বাঘা নেই!
কোথায় গেছে দেখতে পেয়েছ? শ্বাসের ফাঁকে প্রশ্ন করল রবিন।
না, জানাল কিশোর। অদৃশ্য হয়ে গেছে।
সরি, আমার শক্ত করে ধরে রাখা উচিত ছিল,বলল রবিন।
ঠোঁট কামড়াল কিশোর। গেল কোথায় বাঘা?
আচমকা এসময় ওদের পাশে ঝোপের মধ্যে নড়াচড়ার শব্দ উঠল।
পরমুহূর্তে, ঝোপের ভিতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল বাঘ।
কিশোর হাত বাড়াল ওর ফিতেটা ধরতে, কিন্তু ও কোনা ঘুরে আবারও দৌড়ে চলে গেল।
দাঁড়া! ফিরে আয় বলছি! চেঁচাল কিলোর। দৌড় দিল ও।
পিছু ধাওয়া করল মুসা আর রবিনও। মিসেস বার্বাটভের সামনের উঠন অবধি ওরা অনুসরণ করল বাঘাকে। বাড়ির সামনে এক ফ্লাওয়ার বেডের সামনে উবু হয়ে বসা মিসেস বার্বাটভ। ওঁর গোলাপি-হলুদ ফুলছাপা ব্লাউজটা চমৎকার মানিয়েছে বাগানের ফুলগুলোর সঙ্গে।
হোয়া? কী ব্যাপার? বাঘা দৌড়ে এসে তার গায়ে লাফাতে থাকলে অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন ভদ্রমহিলা।
ওকে একটু ধরুন। ও আমার কুকুর! চেঁচাল কিশোর।
ঝট করে বাঘার ফিতে ধরে ফেললেন মিসেস বার্বাটভ। কিশোর দৌড়ে এসে ফিতেটা চেপে ধরল শক্ত করে।
এভাবে আর পালাস না বকে দিল বাঘাকে।
হ্যালো, কিশোর, হাসি মুখে বললেন মিসেস বার্বাটভ। কুকুরটা খুব জ্বালাচ্ছে বুঝি?
আর বলবেন না, বলল কিশোর। খুব সমস্যা করছে।
কুকুরছানারা অমন করেই। তা কী ধরনের সমস্যা করছে? প্রশ্ন করলেন মিসেস বার্বাটভ।
খোয়া যাওয়া মাফিনগুলোর কথা বলল কিশোর। আরও জানাল চাচী বাঘাকে দায়ী করেছে।
বলো কী? আমার এখান থেকেও তো খাবার চুরি গেছে, বললেন ভদ্রমহিলা।
তাই নাকি? কখন? কিশোরের প্রশ্ন।
কালকে। গাড়ির বনেট থেকে কিছু সদাই খোয়া গেছে।
খাইছে, কী হয়েছিল? মুসা জিজ্ঞেস করল।
আমি পাঁচ ব্যাগ সদাই কিনেছিলাম, ব্যাখ্যা করলেন মিসেস বার্বাটভ। চার নম্বর ব্যাগটা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি এসময় একটা ফোন আসে। পাঁচ মিনিটের মত ফোনে কথা বলি। ফিরে এসে দেখি পাঁচ নম্বর ব্যাগটা হাওয়া!
মনে হচ্ছে এলাকায় খাবারচোরের উৎপাত শুরু হয়েছে, বলল রবিন।
বলতে চাই না, কিন্তু আমি মনে হয় ধরতে পেরেছি কাজটা কার, বললেন মিসেস বার্বাটভ।
কার? সাগ্রহে প্রশ্ন করল কিশোর।
ঠোঁট কামড়ালেন মিসেস বার্বাটভ। ওঁর ভঙ্গি দেখে মনে হলো, না জেনে গুজব রটাতে চান না।
জর্জ বেস্ট, আমার ইয়ার্ডে কিছু কাজ করিয়েছি ওকে দিয়ে, শেষমেশ বললেন।
আমি চিনি লোকটাকে। আমরাও তাকে দিয়ে কয়েকবার কাজ করিয়েছি। অনেকেই করিয়েছে, বলল কিশোর।
হ্যাঁ, ও বিশ্বাসী লোক ছিল, কিন্তু ইদানীং সে হার্ডওয়্যার স্টোরের চাকরিটা হারিয়েছে। পকেটে হয়তো পয়সা নেই, তাই খিদের জ্বালা সইতে না পেরে চুরি শুরু করেছে, বললেন মিসেস বার্বাটভ।
কিন্তু আপনি তাকে গতকাল আশপাশে দেখেছেন? কিশোরের জিজ্ঞাসা।
হ্যাঁ, আমার লন মো করছিল। আমি মুদি দোকান থেকে ফেরার পরপরই চলে গেছে সে।
একই সময়ে অন্য আর কাউকে দেখেছেন?
মিসেস বার্বাটভ মাথা চুলকে কী যেন ভাবলেন।
হ্যাঁ, বললেন অবশেষে। ওই ছেলেটা, রয় হার্ভে।
জুলিয়ার ভাই? কৌতূহলী রবিন প্রশ্ন করল। জুলিয়া ফোর্থ গ্রেডে পড়ে। তবে অন্য স্কুলে।
হ্যাঁ, ও রাস্তায় স্কেট করছিল। আমি যখন মালপত্র নামাচ্ছিলাম।
ও কিন্তু বিশালদেহী ছেলে। রাগবি খেলে, বলল রবিন।
কিশোরের মনে পড়ল, জুলিয়া প্রায়ই বলে প্রচুর খায় ওর ভাই। ও-ই হয়তো পাড়ায় স্কেট করছে আর মানুষের খাবার চুরি করে বেড়াচ্ছে।
ওর স্কেটের ফিতের রং কী কে জানে, বলে উঠল কিশোর।
খেয়াল করিনি, তবে অন্য একটা কথা মনে পড়ে গেল, বললেন মিসেস বার্বাটভ।
কী? মুসার প্রশ্ন।
থাবার ছাপ। মোইং শেষে স্প্রিংকলার অন করে জর্জ। ফলে ঘাস ভেজা ছিল। ড্রাইভওয়েতে, আমার গাড়ির পাশে কুকুরের ভেজা পায়ের ছাপ দেখেছি।
ওটা বাঘার ছাপ নয়, বলল রবিন। ও গতকাল বাঁধাই ছিল।
ও আচ্ছা, বলে হেসে উঠলেন মিসেস বার্বাটভ।
হুম, মনে মনে বলল কিশোর। কুকুরের থাবার ছাপ একটা সূত্র। বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠল ও। গোয়েন্দা নোটবইতে তথ্যগুলো টুকবে।
মিসেস বার্বাটভের কাছ থেকে বিদায় নিল ওরা। এবার মুসা আর রবিনকে বিদায় জানাল কিশোর। ওদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।
ফিতে শক্ত করে ধরে বাঘাকে হটিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর।
হঠাত্র প্রকাণ্ড এক ট্যান কুকুর বেরিয়ে এল এক গাছের আড়াল থেকে। কুকুরটা নোংরা, কলার নেই গলায়। দেখে মনে হলো বেওয়ারিশ। কিশোর চট করে চিনে ফেলল ওটাকে। পাড়ায় ছুটোছুটি করে বেড়াতে দেখেছে আগে। মা বাঘা ফিতেয় টান দিল কুকুরটার কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিশোর তা হতে দিল না।
যাবি না, বাঘাকে শাসাল ও।
বড় কুকুরটাকে রাস্তা পেরোতে দেখে একটা চিন্তা এল ওর মাথায়।
অ্যাই, দাঁড়া।
কুকুরটা কানে তুলল না ওর কথা।
এই কুকুরটাই কি মিসেস বার্বাটভের গাড়ির কাছে থাবার ছাপ ফেলে এসেছে? এটাই কি খাবারচোর ?
উঁহু, সিদ্ধান্তে এল শেষমেশ। কুকুর বড় এক ব্যাগ ভর্তি সদাই বইবে কীভাবে?
হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে বাঘাকে পিছনের উঠনে রাখল ও।