মি. ম্যাকয়কে গম্ভীর দেখাল। ভয় পেয়ে গেলাম।
কী হলো? ত্রস্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম। আশঙ্কা করছি, ভয়ঙ্কর কিছু একটা শুনব।
তোমরা যখন মিশেলের হেডস্টোনটা বাসায় নিয়ে গিয়েছ তখন মিশেলও তোমাদের সাথে বাসায় চলে গেছে, ব্যাখ্যা দিলেন।
কিন্তু কেন?
ও তোমার মাধ্যমে আসতেই থাকবে, বাছা। ওর হেডস্টোনটা কোথায় ছিল খুঁজে পাচ্ছি না আমরা। মিশেল কারও সঙ্গ চাইছে, কেয়ার চাইছে। চাইছে কেউ একজন ওর সাথে থাকুক-এপারে।
একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম মি. ম্যাকয়ের দিকে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
এটা অনেকটা ঘুমের মধ্যে হাঁটার মত ব্যাপার। নিজের মা আর পরিবার হারিয়ে অস্থির হয়ে আছে মিশেল। ও একজন বন্ধু খুঁজছে, যার সাহায্যে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে আমাদের এখানে চলে আসতে পারে, বলে গেলেন মি. ম্যাকয়। ইজি।
আমি ওর বন্ধু হতে চাই না। আমাকে আমার জগতে ফেরত পাঠান, মি. ম্যাকয়কে বললাম।
শরীরটা ঠেলে দাও, যেখান থেকে এসেছ আবার সেখানে ফিরে যেতে পারবে।
মাথাটা গলাতেই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ক্লজিটের ভিতরে। কিন্তু মি. ম্যাকয় কী যেন বলছেন শুনে ঘুরে চাইলাম।
সাবধান, মুসা! অন্য দরজাগুলো দিয়ে ঢুকে পোডড়া না যেন!
অন্য দরজা মানে? চেঁচিয়ে উঠলাম। সেগুলো আবার কোথায়?
কিন্তু জবাব পাওয়ার আগেই বন্ধুরা টেনে বের করে নিল আমাকে।
আট
তোমার সাথে জরুরী আলাপ আছে, বলল কিশোর।
কী এত জরুরী আলাপ? ডুগি প্রশ্ন করল। সকালে উঠেই ওকে ফোন করেছি আমরা, ঝটপট চলে আসতে বলেছি।
কুঁকড়ে গেলাম আমি। ডুগি কি বিশ্বাস করবে এসব কথা? আমাকে পাগল ঠাওরাবে না তো?
কসপ্তা আগে ঝড়টা হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখানে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে, বললাম ডুগিকে।
যেমন? অ্যামপ্লিফায়ার অফ করে প্রশ্ন করল ও।
সত্যিকারের ভুতুড়ে অ্যাডভেঞ্চারের মত, বলল রবিন।
হ্যাঁ, একেবারে সত্যি। এবং ঘটছে মুসার ক্লজিটের ভিতরে, জানাল কিশোর।
ডুগিকে কাল রাতের ক্লজিটের ঘটনা, মি. ম্যাকয় ও মিশেলের কথা, গোরস্থানে আমার অভিজ্ঞতা সবই খুলে বললাম আমরা। কীভাবে। আমি দরজা গলে পড়ে যাই-এবং কোথায় হাজির হই তাও জানালাম।
আজ রাতে আবারও মুসার ঘরে থাকব আমরা, বলল রবিন। তবে এবার আমরা তৈরি থাকব।
কীসের জন্য তৈরি, খোদা মালুম।
আমিও থাকব, বলে উঠল ডুগি।
ভেরি গুড, খুশির গলায় বললাম আমি।
.
আরি, আন্টির গ্রীনহাউসে ওটা কীসের আলো? প্রশ্ন করল রবিন।
আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না, মনে মনে বললাম। মি. ম্যাকয় কি এটার কথাই বলতে চেয়েছিলেন?
সাবধান, মুসা! অন্য দরজাগুলো দিয়ে ঢুকে পোডড়া না যেন! এখনও তার কথার প্রতিধ্বনি কানে বাজছে।
আমি থামাতে পারার আগেই সোজা গ্রীনহাউসে গিয়ে ঢুকল ডুগি। একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে আলোটার দিকে। এ দাঁড়াও! ফিসফিস করে পিছু ডাকলাম। চাই না বাবা-মা জেগে যাক। ডুগি!
দৌড়ে গেলাম, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ডুগি অদৃশ্য। গ্রীনহাউসে আরেকটা দরজা ছিল! তার ভিতর দিয়ে পড়ে গেছে ডুগি!
গলা শুকিয়ে গেল। কাঠ-পুতুল হয়ে গেছি। ওপারে পৌঁছে কতটা আতঙ্কিত বোধ করবে ডুগি কল্পনা করলাম। এখন আমাদের সমস্যা শুধু ভূতেদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া নয়। ডুগিকে যেভাবে তোক ফিরিয়ে আনতে হবে।
কিন্তু কীভাবে?
নয়
মুসা, আমি কোথায়? চেঁচিয়ে উঠল ডুগি। সন্ত্রস্ত। ওপার থেকে প্রতিধ্বনি তুলছে ওর কণ্ঠ। বাঁচাও! জলদি এসো! আমাকে নিয়ে যাও! আমি হাত-পায়ের ভিতর দিয়ে মাটি দেখতে পাচ্ছি। বাঁচাও!
চারধারে নজর বুলিয়ে বন্ধুদেরকে খুঁজলাম। কোথায় ওরা? ডেনে আলো জ্বলছে। কম্পিউটার অন করেছে ওরা। ওখানে ভয়ানক ঠাণ্ডা। তার মানে ভূত এবং আরও দরজা, মি. ম্যাকয় যেমনটা বলেছিলেন।
কী করছ তোমরা? চেঁচালাম। এখন গেম খেলার সময় নয়। ডুগি ওপাশে পড়ে গেছে!
শান্ত হও, মুসা, বলল কিশোর। আমি তোমার উপকারই করছি। এই ভূতের গেম থেকে বের করে ফেলব ওদের পরের মুভটা কী।
এটা কি যুদ্ধ নাকি? শীঘি এসো তোমরা। ডুগি পড়ে গেছে। এখানে আরেকটা ওপেনিং আছে! ওকে খুঁজতে যেতে হবে। রবিন কোথায়?
তারমানে? ও তো এখানেই আছে।
চারপাশে দৃষ্টি বুলালাম। কামরাটা ঠাণ্ডা আর ফাঁকা। পরস্পরের দিকে চাইলাম আমরা। উপলব্ধি করলাম, রবিনও পড়ে গেছে। আরেকটা দরজা! আমাদের অজানা এরকম আরও কটা দরজা আছে? কাল সকালে বাবা কিংবা মা যদি কোনও একটার ভিতর দিয়ে পড়ে যায়?
কিশোর, মুসা, বাঁচাও! আমি পড়ে গেছি! রবিনের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনি তুলল।
তোমরা আমাকে বাঁচাও! আমি ভূত হয়ে যাচ্ছি! আর্তনাদ ছাড়ল ও। এরপর আর ওর গলা শুনলাম না।
হাঁটুতে জোর পাচ্ছি না। কিশোর বাক্যহারা।
আমাদেরও ওখানে ঢুকতে হবে, বললাম ওকে।
তাই তো মনে হচ্ছে, বলল ও।
রবিন! চেঁচালাম, তুমি কথা বলতে থাকো যাতে আমরা তোমার গলা পাই। ডুগিও ওখানে আছে, খুঁজে দেখো! বেশি দূরে কোথাও যেয়ো না। ডুগিকে খুঁজে নিয়ে এক সাথে থাকো। আমরা আসছি!
আমরা আমার রুমে দৌড়ে এলাম ফ্ল্যাশলাইট নিতে। তারপর ক্লজিটের ভিতরে ডাইভ দিলাম পানিতে ঝাপানোর ভঙ্গিতে। যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছতে হবে ওপারে।
গোরস্থানের ভেজা মাটিতে গড়িয়ে পড়লাম আমরা। কেমন পুরানো ছাতা গড়া গন্ধ ভক করে নাকে এসে লাগল।