হঠাই অনুভব করলাম কেমন ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা লাগছে। খাইছে! অদৃশ্য কেউ এসে হাজির হলো নাকি?
তোমরা ভূতে বিশ্বাস করো? মাউস নেড়েচেড়ে বলল কিশোর।
অনেকেই করে, বলল রবিন। তা ছাড়া নানারকম অভিজ্ঞতা তো আমাদের নিজেদেরই হয়েছে।
তা ঠিক, বলল কিশোর।
বোর্ড গেম খেলে, কিচেনে স্ন্যাক খেয়ে শেষমেশ আমার ঘরে চলে এলাম তিনজনে।
টিভিতে সত্যিকারের ভুতুড়ে অ্যাডভেঞ্চার শশা এখুনি শুরু হবে, বলল কিশোর।
আমার ঘরে যখন শব্দটা শুরু হবে তখন দেখা যাবে কার কত বড় বুকের পাটা, মনে মনে বললাম।
তোমাদেরকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম, শুরু করেছিলাম।
শো শুরু হচ্ছে, বলল রবিন। পর্দায় চোখ সঁটা। পলায়নপর এক লোককে ধাওয়া করছে আধ পচা এক জীব।
কিশোর আর রবিনকে বার দুয়েক বলার চেষ্টা করলাম, আমরা শুয়ে পড়ার পর এঘরে ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা ঘটতে পারে, কিন্তু কোন সুযোগই দিল না ওরা। খানিক পরে, ক্লান্ত হয়ে পড়লাম সবাই। এবার শোয়ার আয়োজন করতে হয়।
ঝড়টার কথা মনে আছে? চিত হয়ে শুয়ে আরেকবার চেষ্টা করলাম। বলেছিলাম না একটা দুম, দুম শব্দ শুনেছি, যেটা আমি ছাড়া আর কেউ শোনেনি?
হ্যাঁ, তো? কিশোর বলল।
মানে
কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। আমি এখনও ওটা শুনতে পাচ্ছি, বলে ফেললাম ফস করে।
এখন শুনলে? রবিনের প্রশ্ন।
না, মানে প্রতিদিন গভীর রাতে শুনি। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় আর শব্দটা শুনতে পাই।
হয়তো বাড়ির পিছনে রেকুনেরা শব্দ করে, বাতলে দিল কিশোর।
বাইরেটা চেক করে দেখেছি আমি, বললাম। যাকগে, শব্দটা কিন্তু আসছে আমার ক্লজিটের ভিতর থেকে।
চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল ওদের। হাঁ করে ক্লজিটের দিকে চেয়ে রইল। ওদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হলো ভিতর থেকে এই বুঝি একটা ভিনগ্রহী বেরিয়ে এল!
তোমার কাছে ফ্ল্যাশলাইট আছে? প্রশ্ন করল কিশোর। আমি আমারটা নিয়ে এসেছি।
আমিও, জানাল রবিন।
গুড। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। তা হলে কিছু ঘটলে তৈরি থাকতে পারব, বলল কিশোর।
হঠাই ঘর ঠাণ্ডা হয়ে উঠলে কেঁপে উঠলাম আমরা। প্রদীপটা নিভু নিভু হয়ে এল। পরস্পর মুখ তাকাতাকি করলাম তিন বন্ধু।
দুম!
শব্দটা শুরু হয়েছে।
আঁতকে উঠল রবিন।
কিশোরের মুখের চেহারা ফ্যাকাসে।
জিনিসটা কী দেখা দরকার, বললাম।
বাতি জ্বলছে, কাজেই ফ্ল্যাশলাইটের প্রয়োজন নেই
অন্তত এখনও না।
এসো, ডাকলাম ওদেরকে। ক্লজিটের দরজাটা খুলি। ক্লজিটের কাছে হেঁটে গেলাম। বন্ধুরা আমার সঙ্গে আসেনি।
দুম!
ভিতরে কী আছে জানতেই হবে, জোর গলায় বললাম।
এবার একটানে ক্লজিটের দরজাটা খুললাম। সভয়ে ঢোক গিলোম। বিশাল ক্লজিট, ভিতরে হেঁটে ঢুকে পড়া যায়। দূরের কিনারা থেকে স্নান আলো আসছে। ওখানে আমার ক্যাম্পিং গিয়ার রয়েছে। মুখের সামনে থেকে কাপড়-চোপড় সরালাম। পরমুহূর্তে যা দেখলাম, কেউ বিশ্বাস করবে না।
কোঁকড়াচুলো এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আমার ক্লজিটে। পরনে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুল-খাওয়া প্রাচীন পোশাক। ক্লজিটের ভিতরে ফ্রীজারের হিম। থরথর করে হাঁটু কাঁপছে আমার। তবে সে সঙ্গে মাথাও কাজ করছে। আলোটা কোথায় দেখেছি মনে পড়ে গেছে। আতঙ্ক চেপে বসল বুকে।
ছয়
ক্লজিটের কাছ থেকে পিছাতে শুরু করলাম। মেয়েটার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না, আবার মুখে কথাও জোগাচ্ছে না।
শেষমেশ মুখ খুলতে পারলাম।
কে… কে তুমি?
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল মেয়েটি।
আমি মিশেল। তোমাকে আমার দরকার, জন!
বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। মিশেল তো মারা গেছে।
আমি জন নই। কে জন? প্রশ্ন করলাম।
আমার ভাই, জবাব এল। ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। মাকেও পাচ্ছি না। তুমি আমার মাকে দেখেছ?
মেয়েটি ওর প্রিয়জনদের খুঁজছে। শিউরে উঠলাম।
পিছিয়ে এসে দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। ভয় পেলাম, শব্দে বাবা-মা জেগে না যায়। ক্লজিটের দরজায় হেলান দিয়ে হাঁপাচ্ছি। চোখ বিস্ফারিত।
আমার দিকে চেয়ে রয়েছে কিশোর আর রবিন।
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ভূত দেখেছ, বলল কিশোর।
ঠিকই বলেছ। তোমরা দেখতে চাও? ক্লজিটের দরজা খুললেই দেখতে পাবে। লম্বা ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে, জবাবে বললাম।
অসম্ভব, বলল রবিন।
মোটেই না। নিজের চোখেই দেখো।
আচ্ছা, দেখছি, বলে ফ্ল্যাশলাইটটা তুলে নিল কিশোর।
ওটার দরকার হবে না, জানালাম।
আমার দিকে চেয়ে রইল ওরা, কী বলছি বুঝতে পারছে না। তবে শীঘ্রিই টের পাবে। ক্লজিটের উদ্দেশে এগোল দুজনে।
আমিও যোগ দিলাম ওদের সঙ্গে। নিজেই খুলে দিলাম দরজাটা। উঁকি মারলাম ভিতরে।
আলোটা তখনও জ্বলছে। ঠাণ্ডা বাতাসে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে পাচ্ছি। ভিতরে পা রাখলাম। মিশেলকে খুঁজছি। কোথায় গেল, ও! পিছনের কোনার দিকে এগোলাম, ওকে যেখানে দেখেছিলাম। বন্ধুরা অনুসরণ করল আমাকে।
কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না, বলল কিশোর।
ও এখানেই আছে, বললাম। এবার অনুভব করলাম আমাকে কীসে যেন টানছে, অনেকটা গায়ের চামড়ার কাছে আসা ভ্যাকিউম ক্লিনারের হোসের মতন। আমাকে কাছে টানছে ওটা।
হাত বাড়ালাম অনুভব করার জন্য। বরফ পানি চলকে উঠল বুকের মধ্যে। হাতটা স্রেফ দেয়াল ভেদ করে চলে গেছে।
খাইছে!
আরি, এটা দেখো, বন্ধুদেরকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকলাম।
তোমরা নাও বিশ্বাস করতে পারো, কিন্তু এই দেয়ালে একটা গর্ত আছে। দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু হাতটা যদি এভাবে বুলাতে থাকো…