মা আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর বলল, হ্যাঁ। আমি মিস্টার ম্যাকয়কে বলেছিলাম গ্রামের পুরানো রেকর্ড ঘাঁটব। হেডস্টোনগুলোর বেশিরভাগকেই জায়গামত বসাতে পারব বলে মনে করছি।
আরও কিছু কথার পর মা ফোন রেখে দিল। এবার আমার দিকে চাইল। চোখে কৌতূহলী দৃষ্টি।
মিস্টার ম্যায়ের কথা মনে আছে?
কী হয়েছে তার?
গির্জার কেউ নাকি এই নামের কাউকে চেনে না, মা বলল।
খাইছে!
কী হলো?
কিছু না। আমি…আমরা… রাতের ঘটনাটা কীভাবে বলব ভাবলাম।
কী হয়েছে রে তোর? মা প্রশ্ন করল। আমার কাঁধ চাপড়ে দিল।
তারমানে মিস্টার ম্যাকয় বলে কেউ নেই, তাই তো?
হ্যাঁ। তার সাথে দেখা করে বলতে চেয়েছিলাম কাজ ভালভাবে এগোচ্ছে। যাকগে, আমি এখন হিস্টোরিকাল সোসাইটিতে যাব। প্রাচীন ভিলেজ রেকর্ড দেখতে। খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। তুই যাবি আমার সাথে? মা বলল।
রাজি হয়ে গেলাম।
সঙ্গে কী কী নেব জড় করে ফেলি, মা বলল। পরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। একটা ব্যাগে ম্যাগনিফাইং গ্লাস, রুলার, কলম, নোটবুক আর কপি মেশিনের জন্য ভাঙতি নিয়ে নিল। জর্জ ওয়াশিংটনের চেয়েও প্রাচীন কারও কোনও লেখা পড়তে চলেছে মা। এ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গ্রীনহাউস থেকে বেরিয়ে পড়ল মা। পা বাড়াল গ্যারেজের দিকে।
আচ্ছা, কাল রাতে আমি ভূত দেখিনি তো? ম্লান আলোটা তা কীসের? আর মি. ম্যায়ের ব্যাপারটা আসলে কী?
কিন্তু গ্রীনহাউসের আলোটা নয়, আমাকে ভাবাচ্ছে ক্লজিটের দুম, দুম! শব্দটা। একমাত্র আমিই শুনতে পাচ্ছি আওয়াজটা। রাতের বেলা অমন শব্দ হতে থাকলে আমি ঘুমাব কীভাবে?
একটু পরে, রওনা হলাম আমরা। পৌঁছেও গেলাম। মা পুরানো দলিলের পাতা উল্টে যাচ্ছে একের পর এক। আমি খানিকটা বিরক্তি বোধ করছি।
মা হঠাৎই চমকে উঠল।
আশ্চর্য তো। এটা কীভাবে সম্ভব? ফিসফিস করে বলল। দৌড়ে গেলাম মার কাছে।
কী হলো? কিছু জানতে পারলে? প্রশ্ন করলাম।
অবিশ্বাস্য। এটা দেখ, মুসা, মা বলল, হলদেটে কাগজে হাতের লেখায় নাম আর তারিখের সারি। সাবধান, কাগজটা ধরিস না। দেখতে পাচ্ছিস? মার নির্দেশিত জায়গাটায় চোখ রাখলাম। কী লিখেছে পড়।
রয়…ম্যাকয়… মেরুদণ্ড বেয়ে হিমস্রোত বয়ে গেল আমার। মা
আরেকটু পড়লাম। ১৭০৩। মা-মিস্টার ম্যাকয়। কিন্তু এর মানে…
মুসা, বলে ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা নামিয়ে রাখল মা। এরমানে আমরা ভূতের দেখা পেয়েছি।
মিস্টার ম্যাকয়? ঢোক গিলোম। কিন্তু আমরা ওঁকে দেখেছি। ওঁর সাথে কথাও বলেছি। আমরা
আমরা সত্যিকারের এক ভূতের সঙ্গে কথা বলেছি, মা বলল। তার চোখে দূরের দৃষ্টি। টেবিলে আঙুলের তবলা বাজাচ্ছে। চিন্তামগ্ন।
মা, মিস্টার ম্যাকয় বলছিলেন আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।
আমরা বলতে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?
সঙ্গের ভূতেদের, বলল মা। বাহু ঘষল। হঠাত্র ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করেছে। উনি এখানে আছেন, মুসা।
খাইছে।
কাছেপিঠে ভূত থাকলে ঘর হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে।
ভয় পাচ্ছি আমি। এখন বুঝলাম গ্রীনহাউস কেন সেদিন ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। তারমানে কাল রাতে ওখানে অদ্ভুতুড়ে কিছু একটা ব্যাপার ঘটেছিল! মাকে বলতে চাই না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার দফা রফা।
আজব না ব্যাপারটা? মা বলল।
আজব বলে আজব। বাসায় যে ঘটনাগুলো ঘটল তার সঙ্গে মি. ম্যায়ের কোন সম্পর্ক নেই তো? যদি থেকে থাকে তা হলে মি. ম্যায়ের দলে ভূতের সংখ্যা কত?
এটুকু জানি, রাতে শোয়ার সময়টা আমার জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে। কে জানে, জেগেই রাত কাটাতে হয় কিনা।
পাঁচ
শোনো না, বাবাকে ডিনারের টেবিলে বলল মা। হলদে কাগজে বাদামি কালিতে লেখা ছিল ওটা। আমরা দুজনেই দেখেছি। তাই না রে, মুসা? আমার দিকে চেয়ে বলল। এ হু? ও হ্যাঁ, ঘরের মধ্যে বললাম। শোয়ার সময় কী হবে তাই নিয়ে চিন্তিত আমি।
দলিলটা খাঁটি কিনা আমি বলে দিতে পারব, বাবা বলল মাকে।
আমার কাছে অনেক পুরানো রেকর্ড আছে।
কিন্তু, বাবা, দলিলটা যদি ভুয়াও হয়, মিস্টার ম্যায়ের ব্যাপারটা কী হবে? আমরা তাঁকে দেখেছি, তাঁর সাথে কথা বলেছি। এবং রেকর্ডে তার নামটাও লেখা আছে।
বাবা শ্রাগ করল।
জানি না, স্বীকার করল। এখন তো হ্যালোউইন না যে কেউ মান্ধাতা আমলের ড্রেস পরে চার্চে যাবে।
বুড়ো মানুষটাকে আমার খুব সিনসিয়ার মনে হয়েছিল। ওরকম কেউ একজন নেই শুনে দুঃখ পেয়েছি, থাকলেই খুশি হতাম, মা বলল।
মার কথা শুনে শিউরে উঠলাম। মনে পড়ল মি. ম্যাকয় আমার উদ্দেশে মৃদু হেসে কাঁধ চাপড়ে দিয়েছিলেন, অথচ আমি তার হাতের স্পর্শ অনুভব করিনি। এর মানে একটাই…এবং আমি সেটা ভাবতে চাই না।
কালকে দলিলগুলো দেখব, বলল বাবা। মিসেস ফিনলেকে বলব দোকানটা দেখে রাখতে।
নীরবে বসে রইলাম। খাবার নাড়াচাড়া করছি। এবার হঠাই একটা বুদ্ধি ঘাই মারল মাথায়।
মা, আজ রাতে আমি বাসায় বন্ধুদেরকে ডাকতে পারি? থাকার জন্যে! প্রশ্ন করলাম। স্কুল বসতে আরও সপ্তাহখানেক বাকি। সময়টা মোক্ষম। আওয়াজটা একা সহ্য করতে হবে না আমাকে। কিংবা গ্রীনহাউসের আলোটা।
বাবা-মা আপত্তি করল না। তড়াক করে টেবিল ছেড়ে কিশোর আর রবিনকে ফোন করলাম। ওরা বাসায় অনুমতি নিয়ে চলে আসবে। যাক, এবার অন্তত একা থাকতে হবে না আমাকে।
সে রাতে নীচে বাবার কম্পিউটার রুমে কম্পিউটার গেম খেলে। কিছু সময় পার করলাম আমরা।