- বইয়ের নামঃ গোরস্থানে সাবধান!
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
গোরস্থানে সাবধান!
এক
এটা দেখুন, মা বলল এক মহিলাকে। মার গ্রীনহাউসে বসে কফি পান করছে তারা। গ্রীনহিলস শহরের একটি প্রাচীন গোরস্থানের এক সমাধিস্তম্ভের ছবি দেখাচ্ছে মা। গরমের দিন। আকাশ মেঘলা।
কবরের মাথায় স্থাপন করা কোন কোন পাথরখণ্ড, অর্থাৎ হেডস্টোন, তিনশো বছরের পুরানো! মা ইদানীং প্রাচীন হেডস্টোনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অ্যাঙ্গেল আর কৌতূহল জাগানো লিপি খুব টানছে মাকে।
আমি যাই, বলে উঠে পড়লেন মার বান্ধবী। জিনিসপত্র গোছগাছ। করে নিলেন। মনে হচ্ছে ঝড় আসবে।
টোয়াং! মা আর তার বান্ধবী আঁতকে উঠলেন। কিশোর ওর ইলেকট্রিক গিটারে উদ্ভট এক কর্ড বাজিয়েছে। শব্দটা এমনই, কানে লাগারই কথা।
উপস, সরি, লাল হয়ে গেছে ওর মুখের চেহারা। কেউ শুনে ফেলেনি তো!
রবিন করতাল বাজিয়ে ব্যে ড্রামে বাড়ি দিল।
মনে হয় না শুনতে পেয়েছে, বলল ও। লিভিং রূম থেকে গ্রীনহাউসের দিকে চাইলাম আমরা।
সবার বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা আছে তো? মা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল। ঝড় আসবে কিন্তু।
ডুগি হেঁটে যাবে, পাল্টা চেঁচালাম। রাশেদ চাচা পাঁচটার সময় কিশোরকে তুলে নেবেন আর রবিনকে নেয়ার জন্যে শীঘি আন্টি আসবেন।
মুসা, আমার উদ্দেশে বলল কিশোর, মনে হচ্ছে বড় ধরনের ঝড় আসছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রয়েছে। পিছনের উঠনে গাছগুলোকে পাগলা হাওয়ায় দুলতে দেখছে।
তাই তো মনে হচ্ছে, বললাম।
.
সেরাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নানান কথা ভাবছিলাম। বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই।
আমাদের শহরে বড় বড় প্রাচীন গাছ আছে। আমাদের বাড়ির আশপাশের গাছগুলো দুলছে না, নুয়ে পড়েছে। ভয় হচ্ছে, বাড়ির উপর না এক-আধটা ভেঙে পড়ে।
প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। কখন গাছ ভাঙার প্রথম শব্দটা কানে আসবে সে অপেক্ষাই করছি। তীব্র শোঁ-শোঁ শব্দে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। বাবার অ্যান্টিকের দোকান, কিউরিও শপ-এর সাইনবোর্ডটা কীভাবে কাঁচ কাঁচ শব্দে সামনে-পিছনে দুলছে অনুমান করতে পারছি। পুরানো বাড়িটার শাটারগুলো বাজের শব্দ তুলে বাড়ি খাচ্ছে দেয়ালের গায়ে।
এবার অন্য এক শব্দ কানে এল। বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। নিথর শুয়ে রইলাম। কীসের শব্দ ওটা? কম্বল আঁকড়ে ধরেছি।
আধ সেকেন্দ্রে জন্য মনে হলো শাটারের শব্দ। থপ! খাইছে, পরমুহূর্তে মনে হলো এ বাড়িতে তো কোন শাটার নেই!
দুই
কয়টা পড়েছে? ফোনে কাকে যেন জিজ্ঞেস করল মা। চারধারে নজর বুলোম। উজ্জ্বল রোদ চুঁইয়ে ঢুকছে জানালার ফাঁক-ফোকর দিয়ে।
স্থানীয় হিস্টোরিকাল সোসাইটির কেউ একজন মাকে ফোন করেছেন পরামর্শের জন্য। রাতের ঝড়ে অনেক গাছ-পালা, বেড়া আর প্রাচীন গোরস্থানের বেশ কিছু হেডস্টোন উপড়ে পড়েছে।
বিছানা ছেড়ে উঠে আয়নায় চোখ রাখলাম। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে মনে হলো যেন ভূত দেখেছি।
মুসা, মা ডাকল, আমাকে ক্রসরোডের পাশের গোরস্থানটায় যেতে হচ্ছে। কালরাতে বেশ কিছু হেডস্টোন পড়ে গেছে। যাবি?
এখুনি আসছি, চেঁচালাম। মার সঙ্গে পুরানো বাড়ি কিংবা কবরস্থানে যেতে ভাল লাগে আমার। মা ইতিহাসের অনেক খুঁটিনাটি জানে। পুরানো আমলের মানুষ…এবং ভূতেদের কথাও তার নখদর্পণে।
মা ভুতুড়ে বাড়ির ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। এ বিষয়ে নানা ধরনের বই আছে তার।
মাঝে মাঝে ভূতেরা টের পায় না যে তারা মারা গেছে, মা বলেছে আমাকে। মনে করে এখনও বেঁচে আছে। প্রিয় জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়ায় তারা। প্রিয়জনদের দেখার জন্য রাতের পর রাত ঘোরে। ব্যাপারটা দুঃখজনক। তবে আমরা ওদের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি।
খাইছে, তারমানে? জিজ্ঞেস করেছি আমি। তুমি ভূতকে কীভাবে সাহায্য করবে?
ওদেরকে এই বলে শুরু করতে হবে যে তোমরা…মারা গেছ।
ভুতুড়ে ব্যাপার, বলেছি আমি।
তা না। ওরা কারও ক্ষতি করে না। ওরা স্রেফ নিজেদের রাস্তা খুঁজে পেতে চায়।
ওদের রাস্তা কোথায়? আমার প্রশ্ন।
পরের স্তরে। আত্মার স্তর বলে যেটাকে।
কিন্তু মানুষ ভূতের সাথে কথা বলে কীভাবে?
যেভাবে আমরা মানুষের সাথে কথা বলি, এমন দায়সারা ভাবে বলল মা, ব্যাপারটা যেন টেলিফোনে কথা বলার মতই স্বাভাবিক।
.
আমরা এখন ছোট্ট এক গির্জার সিঁড়ি ভেঙে উঠছি।
কালো সুট পরা একবৃদ্ধ এগিয়ে এলেন আমাদের উদ্দেশে। পরনে মান্ধাতা আমলের পোশাক। ভদ্রলোক মিনিস্টার কিনা কে জানে।
মিসেস আমান! আপনি আসাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। বললেন ভদ্রলোক। আমার নাম রয় ম্যাকয়।
গ্ল্যাড টু মীট ইউ, মিস্টার ম্যাকয়, হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল মা। এ আমার ছেলে মুসা।
আমার কাঁধ চাপড়ে দিলেন মি. ম্যাকয়। ঠোঁটে মৃদু হাসি। ভদ্রলোকের ছোঁয়া এতটাই হালকা, টেরই পেলাম না আমি।
হেডস্টোনগুলো কোথায় পড়েছে আসুন দেখিয়ে দিই, বললেন। মি. ম্যাকয়। ছোট এক পথ ধরে প্রাচীন গোরস্থানের উদ্দেশে এগোলাম আমরা। কাল রাতে কেউ মনে হয় এখানে এসেছিল। হেডস্টোনগুলোকে ইচ্ছেমত সরিয়েছে, বললেন ভদ্রলোক।