বোটের ইঞ্জিন বন্ধ করে ডেকের ওপর বেরিয়ে এসো! লাউড হেইলারের মাধ্যমে ভেসে এল একটা কর্কশ গলা। নইলে গুলি চালাব!
আর কিছু করবার নেই। ইঞ্জিন বন্ধ করে মাথার উপর হাত তুলে ডেকে বেরিয়ে এলেন ডিক কার্টার। সী-প্লেন থেকে একটা রো-বোটে করে তিনজন সশস্ত্র লোক এগিয়ে আসছিল, হঠাৎ দাঁড়ানো লোকটা চেঁচিয়ে উঠল, আরে! ডিক কার্টার না? শত্রু মনে করে তোমাকেই আক্রমণ করতে যাচ্ছিলাম নাকি?
মাথার উপর থেকে হাত নামিয়ে হাসলেন আঙ্কেল ডিক। তোমাকে দেখে কতটা যে খুশি হয়েছি তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, রিকি। আর একটু হলেই দ্বিতীয়বারের মত বন্দি হতে যাচ্ছিলাম পেছনের ওই লোকগুলোর হাতে। আমার মেসেজ তা হলে পেয়েছ তোমরা?
আঙ্কেলের গলার স্বস্তি একটানে দাঁড় করিয়ে দিল জিনা ও তিন গোয়েন্দাকে।
লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার! কিন্তু তুমি বোধহয় আমাদের একটা কথাও শুনতে পাওনি। আরে, তোমার পুরো দলবল হাজির দেখছি! চলো, উঠে পড়ো প্লেনে। গত কদিন তোমার খবর না পেয়ে বসের তো মাথা খারাপ হওয়ার দশা!
ওদের গ্রেফতারের কী ব্যবস্থা? জানতে চাইলেন ডিক কার্টার। বোট ঘুরিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে এখন ওরা।
তোমাদের তুলে নিয়ে আমরাই ধরব ওদের। আরও চারটে সী-প্লেন আর আটটা মোটর-বোট রওনা হয়ে গেছে। একটু পরেই শুরু হবে আমাদের চিরুনি অভিযান। একজনও পালাতে পারবে না। আরে, আরে! এগুলো কী! এরাও যাবে নাকি?
অরররররর! জবাব দিল সখা।
ওদের সঙ্গে সখা-সখিও রো-বোটে উঠে পড়ছে দেখে হাঁ করে চেয়ে রইলেন আঙ্কেলের কলিগ রিকি। তারপর হুশ-হাশ করে তাড়িয়ে নামিয়ে দিলেন ওদেরকে পানিতে। ঝট করে চাইল কিশোর আঙ্কেলের মুখের দিকে। আঙ্কেলকে মাথা নাড়তে দেখে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর। ওর কাঁধে। একটা হাত রাখলেন ডিক কার্টার।
এটাই ওদের বাড়িঘর, কিশোর। এখানেই জন্ম, এখানেই বড় হয়েছে, মারাও যাবে এখানেই। এখান থেকে উপড়ে ভিন্ন পরিবেশে নিয়ে গেলে রীতিমত কষ্ট হবে ওদের। বিশ্বাস করো, আর কদিন পরে ডিম পাড়বে, বাচ্চা তুলবে ওরা, ভুলে যাবে তোমাদের কথা। নিজেদের চেনাজানা পরিবেশেই থাক ওরা, কী বলে?
কোনও জবাব দিল না কিশোর। চেয়ে রইল ওর ভক্ত দুজনের দিকে। ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে সখা-সখি। মনে পড়ছে ওদের যেচে এসে ভাব করবার কথা, নিঃস্বার্থ ভালবাসার কথা, ওর জন্য মাছ ধরে আনবার কথা, ওকে মারছে দেখে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বার কথা। চুপচাপ চেয়ে রইল ও ওদের দিকে। দুফোঁটা পানি এসে গেল চোখে। কিশোরের চোখে পানি টলমল করতে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল জিনা। মুসা আর রবিনও চোখ মুছল শার্টের হাতায়।
সখা-সখিকে ওখানেই ছেড়ে সী-প্লেনে উঠে পড়ল জিনা ও তিন গোয়েন্দা। জানালা দিয়ে দেখা গেল, রো-বোটকে ঘিরে সাঁতার কাটছে ওরা, অপেক্ষা করছে কখন বড় পাখিটার পেট থেকে বেরিয়ে আসবে কিশোর। রো বোটটাও অদৃশ্য হলো বড় পাখির পেটে। অবাক হয়ে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওরা। ডাকল কিশোরকে, অররররররর! অ-অ! ককক!
বড় পাখিটা যখন দৌড় শুরু করল, ওরাও সঙ্গে আসবার চেষ্টা করল, কিন্তু পাল্লা দিয়ে পারল না। পিছিয়ে পড়ে হারিয়ে গেল সখা-সখি, চিরতরে।
যতক্ষণ দেখা যায় তাকিয়ে থাকল কিশোর, তারপর চোখ সরিয়ে নিল। ভাবছে, লেগুনটা চিনিয়ে দিয়েই মিলবে ছুটি। বাকি সব কাজ করবে এখন। সরকারী লোকজন।
এখানে আর এক মুহূর্তও ভাল লাগছে না ওর।
প্রথম সুযোগেই ফিরে যাবে ওরা রকি বিচে। ওখানে আবার সেই স্কুল, পড়া, হোমওঅর্ক, খেলা; চাচা-চাচির অফুরন্ত আদর-ভালবাসা আর নতুন কোনও রহস্য-রোমাঞ্চের জন্য ব্যাকুল প্রতীক্ষা।