আরেক রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে ধরব ব্যাটাকে?
মুসার কাঁধে হাত রাখলেন আঙ্কেল। নাহ্, আমি বরং যাই। তোমাদের কাছে কিছু রাখা তো দেখছি এখন আর নিরাপদ নয়। তোমাদের জন্যেই বিপজ্জনক।
এক মিনিট, আঙ্কেল! ডিক কার্টার সত্যিই চলে যেতে উদ্যত দেখে কিশোর বলল, আমাদের এই মোবাইল হোমে আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইচ্ছে করলেই আমরা ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দিতে পারি। এখুনি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে না গিয়ে শান্ত হয়ে বসেন। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে একটা বুদ্ধি বেরিয়ে যাবেই। কথাগুলো বলে চারটে সুইচ অফ করে দিল কিশোর, নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল মোবাইল হোমে ঢুকবার বা বেরোবার সব পথ।
প্রথমে শোনা যাক, খাওয়া হয়েছে আপনার? যেহেতু প্রশ্নটা মুসার, খাওয়ার কথাটা প্রথমে তো আসবেই।
একদম ভরপেট, মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন ডিক।
আমরাও খেয়ে নিয়েছি। কাজেই কারও কোনও তাড়া নেই, বলল মুসা। তা হলে এবার শোনা যাক, রবিনের প্ল্যানটা কেমন লাগল আপনার।
চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবলেন ডিক কার্টার। তার কারণে ছেলে-মেয়েদের কোনও ক্ষতি বা বিপদ হতে দেবেন না তিনি কিছুতেই। কিন্তু চিন্তা করে রবিনের প্রস্তাবে কোন খুঁতও বের করতে পারলেন না। ঠিকই তো, একজন অরনিথলজিস্ট বা ন্যাচারালিস্ট তো ছাত্র নিয়ে এক্সকারশনে যেতেই পারেন। আর ওরকম নিরিবিলি জায়গায় তাকে খুঁজতে যাবে না কোনও দুবৃত্ত।
মোটামুটি খারাপ লাগছে না, মুচকি হেসে বললেন তিনি। তবে তোমাদের গার্জেনদের কাছে কেমন লাগবে তা তারাই বলতে পারবেন। তারা অনুমতি দিলে…
ধরে নিন, অনুমতি পেয়ে গেছি। তা হলে?
তা হলে আর কী, কাল সকাল দশটায় বেরোবে তোমরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে। সাড়ে দশটায় পৌঁছবে বাস স্টেশনে। টিকেট কাটবে ভেনচুরার। ওখানেই রেল স্টেশনে দেখা করব আমি তোমাদের সঙ্গে। অবশ্যই ভিন্ন নাম ও ভিন্ন চেহারায়। নাম-ধরো, প্রকৃতিবিজ্ঞানী ডক্টর ওয়ালটার। কার্পিনটেরিয়ায় পৌঁছব আমরা ট্রেনে।
তারপর?
তারপর ভেসে পড়ব বোট নিয়ে।
খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল সবার চেহারা। চারটে ছোট ছোট প্যাকেট বের করলেন আঙ্কেল পকেট থেকে। প্রত্যেকের হাতে একটা করে দিয়ে বললেন, তোমাদের যার যার বাসায় লুকিয়ে রাখবে এগুলো। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। আমি চললাম এখন। আমি বেরিয়ে যাওয়ার দশমিনিট পর তোমরাও একজন। একজন করে এখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে যাবে। ঠিক আছে?
এবার পকেট থেকে মিশকালো একটা পাতলা রাবারের মুখোশ বের করে পরে ফেললেন ডিক কার্টার। হাতে কালো গ্লাভস পরে নিয়ে সাদা একটা মাঙ্কিক্যাপ চাপালেন মাথায়। এখন দেখে কারও সাধ্য নেই যে বলে এই লোক। খাস নাইজেরিয়ান নিগ্রো নয়।
পেরিস্কোপে চোখ রাখো, বললেন তিনি কিশোরকে। যদি দেখ আমাকে কেউ অনুসরণ করছে, তা হলে বাইরের সিকিউরিটি লাইটটা একবার নিভিয়েই জ্বেলে দেবে।
আপনি তখন ওর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বেন? জিজ্ঞেস করল জিনা।
না। আমার লোকেরা লাফিয়ে পড়বে। ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখবে অন্তত একমাস। আর এই ছদ্মবেশে যদি ওকে ফাঁকি দিতে পারি তা হলে তো কেটেই পড়লাম নির্বিঘ্নে।
.
রাতে হাজার হাজার পাখির স্বপ্ন দেখল রবিন, ছবির পর ছবি তুলছে ও। কিশোর স্বপ্ন দেখল, ট্রেন থেকে নামতে পারছে না, কোন স্টেশনে যে নামতে হবে ভুলে গেছে বেমালুম। মুসা দেখল, ওর প্রাণপ্রিয় কিকোকে কেড়ে নিতে চায় ট্রেযার আয়ল্যান্ডের খোঁড়া জলদস্যু লং জন সিলভার। আর জিনা দেখল, হঠাৎ বেঁকে বসেছে ওর বদরাগী বাবা, চ্যানেল আইল্যান্ডসে যেতে দেবে না।
সকাল ঠিক সাড়ে দশটায় পৌঁছে গেল ওরা বাস স্টেশনে। ঠিক সময় মতই ছাড়ল বাস, ভেনচুরায় পৌঁছে গেল সময় মতই। তারপর রেল স্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা। ট্রেন আসে, যায় কিন্তু আঙ্কেলের দেখা নেই। এর-ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝবার চেষ্টা করে ইনিই ছদ্মবেশী আঙ্কেল কি না। হয় তারা লক্ষই করে না, নয়তো ওদের দিকে মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে চলে যায় আর এক দিকে।
দূরো! বিরক্তি প্রকাশ করল মুসার তোতাপাখি কিকো।
শঙ্কিত হয়ে উঠছে ওরা ক্রমে। কোনও বিপদ-আপদ হলো না তো। আঙ্কেলের? ধরা পড়ে গেল শত্রুপক্ষের হাতে?
ইয়া মোটা এক লোক হাসিমুখে এগিয়ে এল ওদের দিকে। ওদের ব্যাগ ব্যাগেজ, গগলস-ক্যামেরা-বিনকিউলার দেখে সবাই বুঝতে পারছে ওরা কোথাও এক্সকারশনে চলেছে, কিন্তু এই লোক পারছে না। গায়ে পড়ে আলাপ জুড়ল। কোথায় চলেছে, সাগরে না পাহাড়ে, কোন দিকে, কতদিনের জন্য, বড় কাউকে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে না কেন–সব কিছুই তার জানা চাই। রবিন কাটা কাটা জবাব দেওয়ায় ফিরল মুসার দিকে।
পড়ো তো, খোকা। বলো, বিএটি ব্যাট, সিএটি ক্যাট… নরম গলায় বলল কিকো।
আরে! দারুণ পাখি তো! সব কটা দাঁত বেরিয়ে পড়ল মোটা লোকটার।
ইয়াহ! দ্যাস রাইট! জবাব দিল কিকো খোশমেজাজে। এবার যাও।
যাওয়ার নাম করে না লোকটা। মুগ্ধ চোখে দেখছে কিকোকে। কিন্তু যেই হাত বাড়াল আদর করবে বলে, তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে এক ঠোকর লাগিয়ে দিল কিকো ওর মাংসল হাতে। রাগী কুকুরের মত ধমক দিল, গর-র-র-র-র-র-র-র!
মুহূর্তে হাসি মুছে গেল মোটার মুখ থেকে। এক লাফে পিছিয়ে গিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল, অসম্ভব পাজি তো পাখিটা! দ্রুতপায়ে মিলিয়ে গেল সে ভিড়ে।