শুনল, এক!
চুপ করে রইলাম আমরা। কিশোর কি করে দেখছি।
কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার বলল রবিগুণ্ডা, দুই!
কিশোর চুপ।
উসখুস করছে মুসা। আমারও অস্থির লাগছে।
ঠিক এই সময় একটা নড়াচড়া লক্ষ করলাম ওপরে। দেখলাম, ঢাকনার কাছে নীরবে এসে দাঁড়িয়েছে কাল। লোকটা তিন গোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘাউ করে একটা হাঁক ছেড়ে বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর।
.
০৯.
একসঙ্গে ঘটে গেল কয়েকটা ঘটনা। আমাকে ওপর দিকে তাকাতে দেখেই সন্দেহ হওয়ায় রবিগুণ্ডাও তাকিয়েছিল। সরে যাওয়ার চেষ্টা করল সে। তাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো কালু, টুটি কামড়ে ধরতে পারল না। তবে একেবারে বিফল হলো না তার। আক্রমণ। ঝাড়া লেগে হাত থেকে পিস্তলটা উড়ে চলে গেল নোকটার।
এ রকম একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল মুসা। চোখের পলকে গিয়ে পড়ল লোকটার ওপর। জাপটে ধরে এক ল্যাঙ মেরে ফেলে দিল মেঝেতে। আমিও চুপ রইলাম না। তুলে নিলাম পিস্তলটা।
আবার গলায় কামড় বসাতে গেল কালু। মার খেয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে, প্রতিশোধ নিতে চাইছে লোকটার ওপর। গলার কলার টেনে তাকে আটকাল কিশোর।
পিস্তলটা আমাদের দখলে চলে আসায় আর কিছু করতে পারল না রবি। তা ছাড়া একা সে, আমাদের তিনজনের সঙ্গে পারবে না, তার ওপর রয়েছে সাংঘাতিক খেপে যাওয়া একটা কুকুর। আর গোলমাল করল না সে।
তাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম আমরা। ছাড়া রাখতে সাহস পাচ্ছি না। তাই একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলার ব্যবস্থা করলাম। এরপর বসলাম আলোচনায়, কি করা যায়?
কিশোর বলল, থানা অনেক দূরে। অতটা পথ তাকে হটিয়ে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ না। তা ছাড়া একটা লোককে পিছমোড়া করে বেঁধে পিতলের মুখে নিয়ে চললে ভিড় করে আসবে লোকে। কেন নিয়ে চলেছি, কি করেছে সে, জিজ্ঞেস করে করে জান অস্থির করে দেবে। বলতে হবে আমাদের। গুপ্তধনের খোঁজ পেয়েছি যে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। চোর-ডাকাতের তো অভাব নেই। আরও অনেকেই এসে লুট করার চেষ্টা করবে তখন।
তাহলে কি করব? বললাম, একে এখানে এভাবেই বেঁধে রেখে যাই। থানায় গিয়ে পুলিশকে খবর দিই, পুলিশই এসে ধরে নিয়ে যাক।
এটাই ভাল, মুসা বলল। রবিগুণ্ডার দিকে তাকাল সে। হেসে বলল, কি মিয়া, থাকতে পারবে না? কালুকে পাহারায় রেখে যাব। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এখানে পাখি দেখবে। সময়টা খারাপ কাটবে না।
থানায় এসে দাদায় পরিচয় জানিয়ে, আমরা তার কি হই বলে, চোর ধরার খবরটা দিলাম। গাড়ি নিয়ে রওনা হলেন একজন সাব ইন্সপেক্টর। তাঁর নাম ফারুক হোসেন।
কিন্তু সাংঘাতিক একটা চমক অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্যে। গাছের কাছে। এসে দেখলাম, রবিগুণ্ডা পালিয়েছে। কয়েক টুকরো কাটা দড়ি পড়ে আছে গোড়ায়। কালুকে ছেড়ে রেখে গিয়েছিলাম, তাকে এখন বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের সঙ্গে। আমাদের দেখেই কেউ কেউ করে উঠল।
অপদার্থ কুকুর! মার খায়, ধরা পড়ে, এ একটা কুকুর হলো নাকি! গাধা! বিরক্ত হয়ে বলল মুসা। হত যদি জিনার রাফিয়ান, কিংবা আমাদের চিতা, টের পেত বাছাধন। পালাতে আর হত না। কিন্তু ছুটল কি করে লোকটা?
গম্ভীর হয়ে কিশোর বলল, গিটগুলো হয়তো শক্ত করে দাওনি। ভুল হয়ে গেছে। আমাদের একজনের থাকা উচিত ছিল এখানে।
আমরা যে মিথ্যে বলিনি, বিশ্বাস করলেন সাব-ইন্সপেক্টর। কাটা দড়িগুলো আছে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো পিস্তলটা। ওটা তার হাতে তুলে দিলাম আমরা। চোরটাকে ধরার সব রকম চেষ্টা করা হবে-এই আশ্বাস দিয়ে চলে গেলেন তিনি।
আপাতত আর কোন কাজ নেই। খাওয়া-দাওয়া সেরে হাসপাতালে রওনা হলাম আমরা। দাদার খোঁজও নেব, গুপ্তধন পাওয়ার সুখবরটাও তাঁকে জানাব।
বলো কি বিশ্বাসই করতে পারলেন না দাদা। সত্যি পেয়েছ! গোয়েন্দা বটে তোমরা! কিন্তু আর ও বাড়িতে ফিরে যাওয়া চলবে না তোমাদের। হোটেলে থাকবে। বলা যায় না, দলবল নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে রবিগুণ্ডা। ক্ষতি করবে তোমাদের।
তা পারবে না, কিশোর বলল। সাবধান থাকব। ওর মত গুণ্ডাকে কেয়ার করি না আমরা। এর চেয়ে অনেক বড় বড় চোর-ডাকাতের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। আমাদের। ও কিছু করতে পারবে না। হোটেলে থাকলে গুপ্তধনগুলো পাহারা দেবে কে?
পুলিশকে বলোনি ওগুলোর কথা? অবাক হলেন দাদা।
না। বলেছি, পিস্তল দেখিয়ে ঘরে ডাকাতি করতে এসেছিল রবিশুণ্ডা। কালুর সাহায্যে আটকে ফেলেছি।
ইস, অ্যাক্সিডেন্ট করার আর সময় পেলাম না। এখন বাড়ি থাকা উচিত ছিল আমাদের।
অ্যাক্সিডেন্টটা ইচ্ছে করে ঘটানো হয়েছে, আপনাকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে। রবিগুণ্ডা একা নয়, আরও লোক আছে। আমার বিশ্বাস, দলের নেতা অন্য কেউ। আড়ালে থেকে যে কলকাঠি নাড়ছে। ওরা ভেবেছিল, আপনি হাসপাতালে গেলে দাদীও বাড়ি থাকবে না। তাহলে আমাদেরকেও অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। এই সুযোগে গুপ্তধনগুলো বের করে নিয়ে যেতে পারবে ওরা। আমরা যে থেকেই যাব, বাগড়া দেব, এটা ভাবেনি।
সেই জন্যেই তো ভয়। রাগ করে এখন তোমাদের ওপর শোধ তোলার চেষ্টা করবে। অ্যাক্সিডেন্টে আমি মরেও যেতে পারতাম। কেয়ার করেনি ওরা। তারমানে তোমাদের খুন করতেও হাত কাপবে না ওদের। তাই বলছি…
বলাবলির কিছু নেই, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর, আমরা ও বাড়িতেই ফিরে যাব। দেখাই যাক না, ওদের কতখানি দৌড়। গিয়েই জিনিসগুলো নিরাপদ কোথাও সরিয়ে ফেলব। আগের জায়গায় রাখা ঠিক হবে না।