যারা কাজ করে না তাদেরকে বেতন দিই না আমি, ডায়না বলল। আপনারাই বলুন, বসে বসে কারও টাকা নেয়া কি উচিত? কিছু করে না। দিন রাত চব্বিশটা ঘন্টা টিভির সামনে বসে থাকে, আর পুরানো ছবির ডায়লগ নকল করে।
বেশ, আমি নাহয় কাজ করি না, কিন্তু বাড়িতে অন্য যে সব কাজের লোক ছিল? তাদেরকে তাড়িয়েছ কেন? সবাই কি অকাজের? তাড়াবেই তো। সবাই বাপের আমলের লোক যে। তোমার পাটিতে যাওয়া, আড্ডা মারা, অকাজ-কুকাজ সইতে না পেরে কিছু বলতে আসে যদি…
হয়েছে, হয়েছে, থামুন, হাত তুলল পল। মিস, ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চান?
হঠাৎ ভয় দেখা দিল এনুর চেহারায়। দোহাই তোমার ডায়না, এই কাজটা অন্তত কোরো না! আমাকে রেহাই দাও। তুমি জানো, আমি লোক খারাপ নই। মাঝে মাঝে মাখাটা বিগড়ে যায়, তখন কি যে করে বসি!…সময় খুব খারাপ যাচ্ছে
মাথা নাড়ল ডায়না। না, অফিসার, ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাই না। আমি আশা করব, এরপর থেকে ভাল হয়ে যাবে এনুডা। আমার ব্যাপারে আর নাক গলাতে আসবে না।
অবাক হলো পল। বেশ, আপনি যখন বলছেন… হাতকড়া খুলে দিল এনুডার।
থ্যাংক ইউ, মৃদু স্বরে বলল এনুডা। ঝাড়া দিয়ে কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করল, যদিও লাভ হলো না খুব একটা, ভালমতই লেগে গেছে। চিবুক সোজা করে, কারও দিকে না তাকিয়ে হেঁটে চলে গেল।
ওকে ছাড়াটা বোধহয় ঠিক হলো না, কিশোর বলল। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।
মাথা ঝাঁকাল ডায়না। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মাঝে মাঝেই করে ওরকম। দেখে নেয়, কাছাকাছি লোক আছে কিনা। থাকলে করে, যাতে সময়মত ওকে থামাতে পারে ওরা। অভিনয় করতে পারেনি বলেই বোধহয় ওর এই ক্ষোভ। মাথায় ছিট আছে, তবে কারও কোন ক্ষতি করে না।
এনুডা দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলে পল বলল, লোকটাকে একটুও ভাল লাগল না আমার। হশিয়ার থাকবেন। কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন আমাদেরকে। কিশোর, মিস মরগানকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবে? মুসার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল একবার, হাসল, তারপর সহকারীকে নিয়ে এগিয়ে গেল নিজেদের গাড়ির দিকে।
উষ্ণ, উজ্জ্বল একটা হাসি উপহার দিল কিশোরকে ডায়না। যে ভাবে সামলেছ না পাগলটাকে, খুব ভাল লেগেছে আমার। আর ওই মিউজিয়ামের শয়তানগুলোকে যে সামাল দিলে, সে তো অবিশ্বাস্য।
ও কিছু না, মুসার জ্বলন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি বোধ করছে কিশোর।
শোনো, কিশোরের হাত ধরে বলল ডায়না, আজ রাতে বাড়িতে একটা বিরাট পার্টি দিচ্ছি। তুমি এলে খুব খুশি হব।
অযথাই কাশল কিশোর। মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল, চোখে অস্বস্তি। সেটা নজরে পড়ে গেল ডায়নার। তাড়াতাড়ি বলল, তোমার বন্ধুদের নিয়ে আসবে।
মুহূর্তে চোখের আগুন নিভে গেল মুসার। চওড়া হাসি ছড়িয়ে পড়ল মুখে। হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল, আমি মুসা আমান।
খুশি হলাম, ডায়না বলল। ও কে?
ওর নাম রবিন মিলফোর্ড, কিশোর বলল।
পরিচয়ের পালা শেষ হলে ডায়নাকে বলল কিশোর, এখনও কি আমি গাড়ি চালাব? মুসা কিন্তু অনেক বেশি ভাল চালায়। তা ছাড়া গাড়িটাও ওর।
তা চালাক, নিমরাজি হলে, ডায়না। কিন্তু ও চালালে ভটভটানি কি কিছুটা কমবে?
হাসি চাপতে পারল না রবিন।
কিশোর বলল, কি জানি, কমতেও পারে। হাজার হোক, ওর গাড়ি যখন, ওর কথা শুনতেও পারে। কি বলো, মুসা?
মাথা নাড়ল মুসা, সরি। আমি চালালে আওয়াজ বরং আরও বাড়বে। কিশোর গাড়িটার কাছে পর মানুষ, ওর সঙ্গে তো রাগ-ঝাল দেখাতে পারে না। তবে আমার সঙ্গে হরহামেশাই দেখায়।
আঁতকে উঠল ডায়না। বলে কি! আরও বেশি শব্দ করবে! থাক বাবা, থাক। কিশোর, তুমিই চালাও।
হাসিমুখে গিয়ে পেছনের সীটে উঠে বসল মুসা। পাশে রবিন। ব্রাউন নেই। ঠাসাঠাসি হলো না আর। আরামেই বসতে পারল।
*
পার্টিটা নিশ্চয় দারুণ জমবে আজ! বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল মুসা।
পায়ের মোজা খুলে কার্পেটে ছুঁড়ে ফেলল কিশোর। কি জানি। তোমার মত এতটা ভাবতে পারছি না। তাক থেকে একটা পার্সোনালিটি ম্যাগাজিনের কপি নিয়ে এসে ছানায় বসল।
বলতে বিশ্বাস করবে না, বাথরূম থেকে বেরিয়ে এল মুসা। যা-ই বলল, অত বড় বাড়ি কমই দেখেছি। বনের মধ্যে এ রকম বাড়ি বানিয়ে বসে আছে কেউ, কল্পনাই করতে পারিনি!
হুমম! ছবি আছে এখানে। পত্রিকাটা নাড়ল কিশোর। সেজন্যেই বের করলাম। তা ছাড়া আরও একটা জিনিসের কথা মনে পড়ল।
কিশোরদের বাড়িতে কিশোরের বেডরূমে কথা বলছে ওরা।
কী? কৌতূহলী হয়ে ফিরে তাকাল রবিন।
মরগানদের আরেক সংহ-মারাত্মক বোরজিয়া ড্যাগার! পত্রিকাটা উল্টে দেখাল কিশোর। এই দেখো হেডলাইন। ওটাও ছিল মিউজিয়ামে। রত্ন বসানো একটা ছুরি। চারশো বছর আগে ওটার প্রথম মালিক ছিল সেই নিষ্ঠুর ইটালিয়ান পরিবার, বোরজিয়ারা, নাম শুনেছ নিশ্চয়। গোড়া ধার্মিক ছিল ওরা, সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার ছিল, সবচেয়ে বড় কথা, ওরা ছিল ভয়াবহ খুনী। শোনা যায়, ওদের এই ড্যাগারটা নাকি অভিশপ্ত।
কি অভিশাপ।
কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে, যেন ভয়াবহতা বোঝানোর জন্যেই ফিসফিসিয়ে বলল মুসা, ছুরিটা ছোঁয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যাবে ছুরির মালিক।
*
অন্ধকারে ম্যানশনের দিকে নিঃশব্দে এগিয়ে চলল তিন গোয়েন্দা।