মিস্টার ব্রাউন! আর সইতে না পেরে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠল মুসা, দয়া করে একটু থামবেন? গাড়ি চালাতে পারছি না…
মাছ ধরার সরঞ্জামের একটা দোকানের পরেই তীক্ষ্ণ মোড়। উইন্ডশীল্ডের ওপাশে চোখ পড়তেই মুখ থেকে রক্ত সরে গেল ব্রাউনের।
সাবধান! চিৎকার করে উঠল কিশোর।
ভুল সাইড দিয়ে ধেয়ে আসছে আরেকটা লাল স্পোর্টস কার। নাক বরাবর ছুটে আসছে যেন ওদেরকে তো মারার জন্যেই!
.
০২.
শাই করে ডানে স্টিয়ারিং কাটল মুসা। নাকের একপাশ দিয়ে একটা গার্ড রেইলে গুঁতো মারল গাড়িটা। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেলো। টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে পাশ দিয়ে প্রায় গা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল লাল ল্যামবোরগিনি গাড়িটা।
বিচ্ছিরি একটা ধাতব আওয়াজ ভরে দিল যেন বাতাসকে। পথের পাশে গাড়ি থামিয়ে দিল মুসা। ফিরে তাকিয়ে দেখল একটা টেলিফোন পোস্টে ধাক্কা লাগিয়েছে লাল গাড়িটা।
ঠিক আছে তো? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আছি। উফ, বড় বাঁচা বেঁচেছি! মুসা বলে উঠল।
দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে লাল গাড়িটার দিকে দৌড় দিল তিন গোয়েন্দা। ক্ষতি তেমন হয়নি, শুধু সামনের দিকে খানিকটা জায়গার ছাল উঠে গেছে।
আমিও ভাল আছি, বুঝলে! জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে চেঁচিয়ে বলল পেছনের সীটে বসা ব্রাউন। কিছুই জিজ্ঞেস করলে না আমাকে। আমার জীবনের কি কোন দাম নেই?
কানেও তুলল না তিন গোয়েন্দা। ওরা গাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে, এই সময় ঝটকা দিয়ে খুলে গেল বাঁ পাশের দরজা। শোনা গেল তীক্ষ্ণ মেয়েলী চিৎকার, এই, দেখেশুনে গাড়ি চালাতে পারো না?
গাড়ি থেকে নেমে এল এক তরুণী। বয়েসে ওদের একআধ বছরের বড় হতে পারে। লাল চুল। গলার তিনটে সোনার হারকে ঠিক করল। হাত দিয়ে ডলে সমান করে দিল আঁটো জাম্পসুটের ভাঁজ। নাকে সানগ্লাস বসানোর আগে একবার বিষদৃষ্টি হানল কিশোর, রবিন আর মুসার ওপর। তারপর গটমট করে এগিয়ে এল। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগল কিশোরের।
দেখো, আমার গাড়ির কি করেছ! ধমক দিয়ে বলল মেয়েটা। একেবারে শেষ!
না, খুব একটা ক্ষতি হয়নি, মুসা বলল। তবে দোষটা তো আপনার…
তোমার দোষ!
দোষ যারই হোক, মেয়েটাকে শান্ত করার চেষ্টা চালাল কিশোর, এখন আর বলে লাভ নেই। আর গাড়ির যা ক্ষতি হয়েছে, তার জন্যেও চিন্তা নাই। বীমা কোম্পানিই যা করার করে দেবে। আসল জিজ্ঞাসাটা হলো, আপনি জখম-টখম হয়েছেন কিনা। ভাল আছেন?
দাঁত খিঁচিয়ে বলল মেয়েটা, তোমাদের চাঁদমুখ দেখার আগে তো ছিলামই! কি যে বিপদে ফেলে দিলে! এখন গ্যারেজে খবর দিতে হবে। ট্যাক্সি নিয়ে যেতে হবে আমাকে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। ভাল ঝামেলা বাধিয়েছ।!
আবার ড্রাইভিং সীটের কাছে গিয়ে দাঁড়াল সে। ভেতর থেকে বের করল একটা মোবাইল টেলিফোন। কিশোর মনে করার চেষ্টা করছে, মেয়েটাকে কোথায় দেখেছে।
হাল্লো, মারলিন? ফোনে বলল মেয়েটা হাল্লো, আরে জোরে বলো না! হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি….ডায়না, ডায়না!…কী? হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে টেলিফোনটা প্রায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। যাই কি করে এখন? হাঁটব!
দৌড়ে যাও! মুখে এসে গিয়েছিল কথাটা মুসার। কিন্তু বলল না। তার বদলে বলল, আমার গাড়িতে করে যাবেন?
তুমি চালাবে? তিক্তকণ্ঠে বলল মেয়েটা।
হ্যাঁ।
যেতে পারি, যদি ও চালায়, বুড়ো আঙুল দিয়ে কিশোরকে দেখাল ডায়না। কারণ আমার মনে হচ্ছে ও ভাল চালাবে। তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। আবার গুঁতো লাগাবে কারও গাড়ির সঙ্গে।
কিশোরের দিকে একটা অদ্ভুত চাহনি দিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল মুসা। ফিরে চলল গাড়ির কাছে।
মুচকি হাসল রবিন।
মেয়েটার ব্যাপারে কৌতূহল বাড়ছে কিশোরের। কোথাও দেখেছে। ডাকল, আসুন।
ঝাঁকুনি দিয়ে মুখের ওপরে এসে পড়া সিল্কের মত নরম লাল চুলগুলো সরিয়ে দিল ডায়না। এগোল মুসার গাড়ির দিকে।
আপনাকে চিনে ফেলেছি আমি, বলে উঠল কিশোর। আপনি ডায়না মরগান। পত্রিকায় পড়েছি…
…পারসোনালিটি ম্যাগাজিনে, কিশোরের বাক্যটা শেষ করে দিল ডায়না। হ্যাঁ, আমিই সেই মেয়ে। উদ্ভট আর্টিকেল, তাই না? হেডিংটা কি দিয়েছে। পড়লেই গা জ্বলে! ওটা একটা লেখা হয়েছে। গরু ছাগল কতগুলোকে নিয়ে ভরেছে পত্রিকা অফিসে। আহারে, আমার জন্যে কি দুঃখ ওদের, আমার বাবা মায়ের অকাল মৃত্যুতে কেঁদেকেটে অস্থির। মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি। যত্তোসব!
কাছেই একটা ফোন বুঁদ দেখে এগিয়ে গেল ডায়না। ফোন সেরে ফিরে এসে উঠল গাড়িতে, সামনের প্যাসেঞ্জার সীটে। এমন ভঙ্গি করল, যেন মিউনিসিপ্যালিটির ময়লার গাড়িতে উঠেছে। নাক কুঁচকে নির্দেশ দিল কিশোরকে, রকি বীচ মিউজিয়ামে যাও। জলদি।
পেছনের সীটে তখন একেবারে গুটিয়ে গেছে ব্রাউন। মুসার দেয়া শাল দিয়ে ঢেকে ফেলেছে আপাদমস্তক। মুখও দেখা যায় না।
সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে তার দিকে তাকাল ডায়না। ব্যাপার কি? রোগী নাকি! এই, কি রোগ? এইডস
ব্রাউনের প্রতিক্রিয়া খুব একটা হলো না, সামান্য নড়েচড়ে বসল শুধু শালের তলায়। তার পাশে গাদাগাদি করে বসল মুসা ও রবিন।
না, রোগী না, জবাবটা দিল কিশোর। খুব দুর্বল। তা মিউজিয়ামে কেন? মরগানদের কালেকশন চেক করা হচ্ছে?
মুখ দিয়ে বিচিত্র একটা শব্দ করল ডায়না। চেক-ফেক না। যেখানকার জিনিস সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।