সন্দেহ মেশানো বিস্ময় দেখা দিল পলের চোখে। একবার মুসার দিকে একবার কিশোরের দিকে তাকাতে লাগল। এই মহিলা!
হ্যাঁ। মুসা জবাব দিল। তা আপনি এলেন কি করে এখানে?
পাতলা পলিথিনের ব্যাগে করে সিলভার-প্লেটেড একটা রিভলভার নিয়ে এসেছে পল। সেটা দেখিয়ে বলল, ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে বনের ভেতর পাওয়া গিয়েছিল এটা, তোমাদের মনে আছে নিশ্চয়। আমাদের ব্যালিস্টিক এক্সপার্ট পরীক্ষা করে বলেছে, এটা মিস্টার মরগানের জিনিস। সেজন্যেই আমরা এসেছি, মিস মরগানকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে।
হ্যাঁ, এটা এখন ডায়নারই! চেঁচিয়ে উঠলেন নরিয়েমা। অ্যারেস্ট করুন ওকে, অ্যারেস্ট করুন!
হুমম, বুঝলাম, মাথা দোলাল পল। আনমনে বিড়বিড় করল, পুরানো অভিশাপ…একজন বৃদ্ধা মহিলা, তরুণকে গুলি…এবং একটা মেয়ে, যাকে তার নিজের রিভলভার দিয়েই গুলি করা হয়েছে..তারমানে…
…ব্যাপার আছে, ফস করে বসল মুসা।
চোখ স্থির হলো পলের। হ্যাঁ, ব্যাপার আছে। লম্বা কোন গল্প। খপ করে হাত চেপে ধরল ডায়না আর নরিয়েমার। আপনাদেরকে থানায় যেতে হবে। সারারাতই থাকতে হতে পারে ওখানে।
পলের কথায় বিশেষ কান নেই ডায়নার। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে তিনতলার দিকে। ঘন ধোঁয়া উড়ছে এখন ওখান থেকে। আমি যাব না…যেতে পারব না…! প্রায় ফিসফিসায় বলল সে।
ওর বাড়ি পুড়ছে তো, বুঝতে পেরে বলল দ্বিতীয় অফিসার। দাঁড়াও খানিকক্ষণ। দমকল আসুক। দেখেই যাই, কি হয়।
দমকল! বিরক্ত ভঙ্গিতে নাক কুঁচকালেন নরিয়েমা। ওদের বুদ্ধি তোমাদের মত হলে আর দেখতে হবে না! সারারাতই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এখানে।
হাতকড়া বের করল পল। দেখে বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত নিয়ে গেলেন ডক্টর।
কমলা আগুন নাচানাচি শুরু করেছে প্রাসাদের ছাতে।
পাহাড়ের গোড়া থেকে ভেসে এল সাইরেনের শব্দ।
কিশোরের পেছনে ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছে রবিন। কিশোর তাকাতে বলল, না, কিছু না। শক পেয়েছি তো, সামলাতে সময় লাগছে।
তা লাগবেই। রবিনের হাত ধরে কিশোর বলল, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জনেই এখনও বেঁচে রয়েছি আমি।
প্রাসাদের ছাতে আগুন বাড়ছে। বিষণ্ণ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে ডায়না। কারও দিকেই নজর নেই তার।
*
জ্যাকেটের বোম এঁটে পিকআপের জানালা খুলে দিল মুসা। তাহলে কি জিনিস তোমার পছন্দ?।
দেখো, মুসা, কিশোর বলল তীক্ষ্ণ কণ্ঠে, আর যা-ই হোক, এই হ্যালোইন ক্যান্ডি অন্তত নয়। ওগুলো বাচ্চাদের খাবার। কতবার বলেছি, তোমার ইচ্ছে হলে খাও যত খুশি, আমাকে সাধাসাধি কোরো না। আমার ভাল্লাগে না।
ভাল, খুব ভাল। স্টিয়ারিং ঘোরাল মুসা। অক্টোবরের চমৎকার বাতাস। মলের দিকে চলেছে ওরা। তোমাকে অন্য কিছুই কিনে দেয়া হবে। রবিন, তুমি?
আমার ক্যান্ডি খেতে আপত্তি নেই, হেসে বলল রবিন। কিশোরের মত তো আর ওজন বাড়ার আতঙ্ক নেই আমার।
পার্কিং লটে এসে গাড়ি রাখল মুসা। তিনজনেই নামল। এলিভেটরে উঠল শুধু ওরাই, আর কেউ নেই। চারতলায় এসে আস্তে করে থামল কোন ঝাঁকুনি ছাড়া।
খবরদার, মুসা! চেঁচিয়ে বলল কিশোর। দরজা খুলতেই এলিভেটরের অন্য পাশে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেছে সে। লাফিয়ে সরে এল মুসাও।
খাটো, টাকমাথা একজন লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতে মেশিনগান নিয়ে। মুখে মুখোশ। চুপ! ধমক দিয়ে বলল কিচকিচে কণ্ঠ, একদম নড়বে না!
এই, কি করছ? লোকটার পেছন থেকে বলল এক মহিলা। ঠেলে লোকটাকে এলিভেটরে ঢোকানোর চেষ্টা করল। ওদের ভয় দেখাচ্ছ কেন? বাজার করতে এসেছে বেচারারা। দাঁড়াও, আজ বাড়ি গিয়ে নিই। পাগলামি তোমার ছাড়াব ভালমত। খেলনা কেনার শখ বের করব!
এলিভেটর থেকে বেরিয়ে এসে হাসল তিন গোয়েন্দা।
চিড়িয়া একেকটা, হেসে বলল মুসা। পাগল যে কত আছে এদেশে। বাচ্চাদের মত ছিনতাইকারী সাজার শখ হয়েছে।
হ্যাঁ। আরেকটা জুভেনার।
যা-ই বলো, কিশোর, ওটা অনেক বেশি বড় পাগল। মিউজিয়ামের জিনিস ফেরত নেয়ার জন্যে কি কাণ্ডটাই না করল। যেন ওর নিজের জিনিস। ফিরিয়ে নিয়ে তারপর ছাড়ল।
ছাড়ল আর কই? মূর্তিটার জন্যেও কেস করে দিয়েছে ডায়নার বিরুদ্ধে। টাকা আদায় করে তবে ছাড়বে।
মেয়েটার জন্যে খারাপই লাগে। শেষ পর্যন্ত বাপদাদার বসতবাড়িটাও বিক্রি করতে হবে। ভাগ্যিস আগুনটা নেভাতে পেরেছিল দমকল বাহিনী। নইলে বিক্রির জন্যে ওটাও থাকত না।
কোনও চাকরি-টাকরি এখন পেলে হয়।
পাবে। পেয়ে যাবে। পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞাপন হয়েছে তো। টিভিতেও চান্স পেয়ে যেতে পারে। অনেক দিন দেখা নেই, ভাবছি দেখা করব…।
ইলেকট্রনিক্সের একটা দোকানের পাশ দিয়ে চলেছে ওরা, তীক্ষ্ণ চিৎকারে থেমে গেল। দোকানের ভেতর টিডি চলছে, চিৎকারটা এসেছে ওটার ভেতর থেকেই। পর্দায় দেখা গেল, পাগলের মত মাথার চুল ছিঁড়ছে আর চেঁচামেচি করছে এটা মেয়ে।
খাইছে। বলতে না বলতেই হাজির! অবাক হয়ে বলল মুসা। চিনেছ? আমাদের ডায়না মরগান! সত্যি সত্যি অভিনয় শুরু করে দিয়েছে টিভিতে!
ঘরময় ছোটাছুটি করছে ডায়না। চেঁচাচ্ছে, কাপ-প্লেট ছুঁড়ছে, চেয়ার উন্টে ফেলছে। হাতের কাছে একটা ফুলদানী পেয়ে সেটা নিয়ে তেড়ে গেল কাঁচুমাচু হয়ে থাকা খানসামার দিকে।
একেবারে নিজের জীবনের ঘটনা, কিশোর বলল। সেজন্যেই এত জীবন্ত।