আমাদেরকে খুন করবেন? মুসা জিজ্ঞেস করল।
ডায়নার কাছে গিয়ে দাঁড়াও তোমরা তিনজন, তিন গোয়েন্দাকে নির্দেশ দিলেন তিনি। ডিনের কাছে। ডায়না, সরো। সেটটা এমনভাবে সাজাব, যাতে মনে হয়, তিনজনকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে ডিন। খিকখিক করে হাসলেন তিনি। খবরের কাগজে হেডিং কি বেরোবে, এখনই আন্দাজ করতে পারছি। দারুণ খবর ছাপবে ওরা। সব দোষ পড়বে ছুরিটার ঘাড়ে। ফলাও করে ওরা লিখবে, বোরজিয়া ড্যাগারের রক্তলালসার কারণে মারা পড়ল এতগুলো তরুণ প্রাণ। আহারে! পিস্তল নাড়লেন তিনি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও।
ধীরে ধীরে ডিনের দিকে এগোল ওরা।
প্লীজ, খালা…
চুপ! এখানে এসো! আমার পাশে!
পিস্তলটা এখন কিশোরের দিকে ধরে রেখেছেন ডক্টর। উঠে দাঁড়াল ডায়না, টলমল করছে শ, যেন যে কোন মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। আমি…আমি আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, খালা। আপনার কথা বলিনি ওদেরকে। কেন এলেন? কারোই তেমন কোন ক্ষতি হত না…
আমার হত! সব টাকা পানিতে যেত! জুভেনার সমস্ত মাল ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আমার টাকাগুলোর কি হত? মাথা নাড়লেন ডক্টর। আমি তা হতে দিতে পারি না।
ভাবনার ঝড় বইছে কিশোর-মুসার মাথায়। চোখ বোলাচ্ছে সারা ঘরে। মুক্তির উপায় খুঁজছে।
হাত তোলো! কড়া আদেশ দিলেন ডক্টর। সোজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তোমাদের ফন্দি বুঝতে পারছি না আমি মনে করেছ?
কিছু করার নেই ওদের। আদেশ মানতে বাধ্য হলো। হারিকেনের আলো কেমন ভূতুড়ে ছায়া ফেলেছে ঘরের ভেতর। ডিনের কাছাকাছি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তিনজনে। ডায়না এগোল দরজার দিকে।
এই মেয়ে, জলদি করো না! বেঁকিয়ে উঠলেন ডক্টর। সারারাত দাঁড়িয়ে থাকব নাকি?
বুকের ওপর ঝুলে পড়তে চাইছে ডায়নার মাথা, এতই ক্লান্ত মনে হচ্ছে তাকে। তবে নরিয়েমার আদেশ পালন না করে পারল না।
ধরো, হ্যারিকেনটা বাড়িয়ে দিলেন ডক্টর। শক্ত করে ধরে রাখে। খবরদার, ছাড়বে না! ডায়না বাতিটা হাতে নিতেই দুহাতে ধবলেন পিস্তলটা, যাতে গুলি করার সময় না নড়ে। প্রথমে কিশোরের দুচোখের মাঝখানে নিশানা করলেন।
মারতে খারাপই লাগছে। চালাক-চতুর ছিল। স্বভাবও ভাল, জোরে নিঃশাস ফেললেন ডক্টর। কিন্তু উপায় নেই।
তারপর ঘটতে লাগল একের পর এক ঘটনা। অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে গেল ঘরের আলো। গুলির শব্দ হলো। শোনা গেল আরেকটা চিৎকার।
দরজার দিকে ঘুরে গেল কয়েক জোড়া চোখ। হ্যারিকেনের সাতে পুরো বাড়িয়ে দিয়েছে ডায়না। ডক্টরের চোখের সামনে ধরে রেখেছে।
শয়তান! উন্মাদ হয়ে গেছে ডায়না। যত নষ্টের গোড়া তুমি! ডিনকে জানোয়ার বানিয়ে ছেড়েছ! আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছ। তোমাকে শেষ করব এবার আমি…।
হ্যারিকেনটা ডায়নার হাত থেকে কেড়ে নিতে গেলেন নরিমো। টানাটানিতে ছুটে গেল ওটা ডায়নার হাত থেকে, উরও ধরে রাখতে পারলেন না, মেঝেতে পড়ে চুরমার হয়ে গেল কাঁচ, গড়িয়ে চলে গেল টেবিলটার তলায়। তবে আলো নিভল না।
ভেবেছিলাম তোকে কিছু করব না! ভীষণ রেগে গেছে নরিয়েমা। এবার তোকেও শেষ করব।
ডায়নার দিকে পিস্তল যোরালেন তিনি।
এটাই সঠিক সময়। নড়ে উঠল রবিন। লাফ দিয়ে গিয়ে পড়ল চারের সামনে। দা চালানোর মত করে কোপ মারল আর হতে। খসে পড়ে গেল।
আহত বিড়ালের মত চিৎকার করে উঠ পিলটা তুলে নেয়ার জন্যে পা বাড়ালেন ডক্টর। লাথি মেরে পিলটা সরিয়ে দিল রবিন। হ্যারিকেনের কাছে গিয়ে পড়ল ওটা।
দেখে প্রথমটায় কিছুক্ষণের জন্যে হয়ে গেল সবাই। পুরনো কাঠের মেঝেতে কেরোসিন পড়েছে, আগুন ধরে গেছে তাতে। শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে টেবিলের পায়া, তাতেও আগুন ধরল।
নেভাও! নেভাও! চিৎকার করে বলল ডায়না।
ফায়ার এক্সটিংগুইশার কোথায়! মুসা জিজ্ঞেস করল।
আমি জানি না…
এর বেশি আর শোনার অপেক্ষা করল না কিশোর-মুসা। যেভাবে শুকিয়ে রয়েছে কাঠ, দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে দেরি হবে না। একটানে রবিনকে নিয়ে দরজার দিকে এগোল কিশোর। বেরোনোর আগে ডক্টরের হাত চেপে ধরল। দুজনকেই টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
মুসাও দাঁড়িয়ে নেই। ডিনকে তুলে নিয়ে দৌড় দিয়েছে।
ডায়নাকে কিছু বলতে হলো না। সে নিজে নিজেই ছুটে বেরোল দরজা দিয়ে।
যত দ্রুত সম্ভব সিঁড়ি দিয়ে নামল ওরা। সদর দরজা দিয়ে ছুটে বেরোল কামানের গোলার মত সবাই, শুধু মুসা বাদে। ডিনকে বয়ে নিতে হচ্ছে তাকে।
বাইরে বেরিয়ে দেখল পুলিসের একটা গাড়ি এসে গেমেছে। দুজন পুলিস নেমে দৌড়ে এল প্রাসাদের দিকে।
বেরিয়েছে! চেঁচিয়ে বলল একজন।
কিশোরকে গালাগাল করতে করতে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন নরিয়েমা।
ছাড়ল না কিশোর। টানতে টানতে তাকে নিয়ে এগোল পুলিসের গাড়ির দিকে। দুজন পুলিসের একজন ওদের চেনা, পল নিউম্যান। উত্তেজিত কণ্ঠে তাকে জানাল কিশোর, তিনতলায় আগুন লেগেছে!।
দেখেছি, জবাব দিল পল। ফোন করে দিয়েছি দমকলকে। ভুরু কোঁচকাল সে। গুলির শব্দ শুনলাম মনে হলো?
দেখুন অফিসার, অভিযোগ শুরু করলেন ডক্টর, এই গুণ্ডাটা আমাকে…
কিশোর, ওভাবে টানাহেঁচড়া করছ কেন মহিলাকে? মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তোমার? ছাড়ো, ছাড়ো…
মিস্টার নিউম্যান, কিশোর বলল, গুলি যেটা শুনেছেন, এই মহিলাই ছুঁড়েছে। আমাকে মারার জন্যে।