নোরজিয়া ড্যাগারটা নিয়ে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে বেশি, নানা রকম ভাবে, গল্প বলে, সিনক্রিয়েট করে। খুনের চেষ্টাগুলো সব সাজানো-বন থেকে আমাকে সই করে গুলি ছোঁড়া, সুইমিং পুলে তার ফেলে রাখা, সব।
কেন?
বললাম না, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্যে। রিপোর্টাররা এসেছে। ফলাও করে খবর ছেপেছে। বিখ্যাত হয়ে পড়েছে বোরজিয়া ড্যাগার। ভাল দাম আশা করেছিলাম আমরা। তা-ই হতে যাচ্ছিল। দুএকজন টো টাকা অফারও দিয়ে ফেলেছে। ডিন আমাকে ভালবাসে, চোখ নামিয়ে দিল ডায়না। আমি বাসি না। কিন্তু তার এই দুর্বলতাটা কাজে লাগিয়ে তাকে দিয়ে এ সব করিয়ে নিয়েছি আমি। একটা মানুষকে কতদিন আর গাধা বানিয়ে রাখা যায়? বুঝতে পেরে সরে গেছে সে!
কয়েক সেকেন্ড নীরবতা।
তারপর মুসা জিজ্ঞেস করল, ছুরিটা কোথায়?
বাগানে। একটা ফুলের বেডের মধ্যে রেখেছিলাম…
কখন?
তুমি তখন বাথরূমে গিয়েছিলে। এই সুযোগে ওটা বাক্স থেকে বের করে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। দরজার দিকে রওনা হলো।
কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল ডায়না। পাবে না। এতক্ষণে নিয়ে গেছে নিশ্চয় ডিন।
তাহলে তাকে খুঁজে বের করব।
ঠিক এই সময় দপ করে নিভে গেল সমস্ত আলো।
.
১৩.
ডিন, ডিনের কাজ! চিৎকার করে বলল ডায়না। আমাকে খুন করবে এবার! প্রতিশোধ নেবে! পাগল হয়ে গেছে!
আল্লাহই জানে, কি করবে? বিড়বিড় করল মুসা। হতে ছুরি আছে যখন..
আছে কোথায় ও রবিনের প্রশ্ন।
আউফ! করে উঠল অন্ধকারে মুসা।
কি হলো? কিশোর উদ্বিগ্ন।
কে যেন পা মাড়িয়ে দিল! ডায়নাই হবে!
তোমার পা? জোরে নিঃশ্বাস ফেলল ডায়না। আমি টর্চ খুঁজছি…
ড্রয়ার খোলার শব্দ হলো। অন্ধকার চিরে দিল টর্চের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি।
দুটো আছে, ডায়না বলল।
আমাকে একটা দিন, বলল মুসা।
এই, চুপ! শোনো! ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। সবাই শুনতে পেল বিচিত্র শব্দটা। থেমে গেল হঠাৎ।
এল কোত্থেকে? বুঝতে পারছে না ডায়না।
কি জানি! বুঝতে পারল না মুসাও। মনে হয় নিচে কোন জায়গা থেকে। দেখি, আলোটা জ্বালানো যায় কিনা।
সেলারের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল মুসা। টান দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকল। সারকিট ব্রেকারের বাক্সটার কাছে এসে আলো ফেলল। মেইন সুইচ অফ করা। টান দিয়ে তুলে দিল ওটা। নিশ্চয় আলো জ্বলেছে, নিজেকে বলল সে।
বাইরে বেরিয়ে দেখল আগের মতই অন্ধকারে রয়েছে প্রাসাদ। আলো জ্বলেনি।
মেইন লাইনের তারটার কেটে দিয়েছে, অনুমান করল কিশোর আলো নেভাল, চিন্তিত শোনাল কিশোরের কণ্ঠ, অথচ আসছে না! ও কিছু করার আগে আমাদেরই ওকে খুঁজে বের করা উচিত। এসো তো।
টর্চের আলোয় পথ দেখে সামনের দরজার দিকে এগোল চারজনে। গ্রীষ্মের রাতের ভ্যাপসা গরম, আঠা আঠা করে দেয় ঘাম। এই পরিবেশে ওদের মনে হলো সব কিছুই যেন খুব ধীরে ঘটছে, স্লো মোশন ছায়াছবির মত। পুরানো কাঠ আর ধুলোয় ঢাকা কার্পেটের গন্ধ ভাসছে ঘরের বাতাসে। একের পর এক ঘরে ঢুকছে ওরা, আর একই রকম গন্ধ পাচ্ছে।
হঠাৎ থ্যাক করে একটা শব্দ হলো। ঝটকা দিয়ে মুখ তুলল কিশোর। ওপরে তাকাল। এক দৌড়ে হল পেরিয়ে এসে উঠল সিঁড়িতে। ঠিক পেছনে রয়েছে মুসা। সিঁড়ির মাথায় উঠে হলঘরে টর্চের আলো ফেলে দেখল। শূন্য ঘর।
ভুল করছেন আপনি, ডিন, চেঁচিয়ে বলল কিশোর। আমরা চারজন, আর আপনি একা। কিছুতেই পারবেন না। গোলমাল না করে বেরিয়ে আসুন। কিছু বলব না আপনাকে।
সাড়া নেই।
ডান দিকে হয়েছিল শব্দটা, ফিসফিস করে বলল কিশোর।
দেয়ালের দিকে পিঠ করে পা টিপে টিপে সেদিকে এগোল সে আর মুসা। দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল। বন্ধ। পাথর হয়ে পঁড়িয়ে রইল কয়েকটা সেকেন্ড।
তারপর হঠাৎ এক লাথি মেরে পাল্লা খুলে ফেল্প কিশোর। পরক্ষণেই সেটে গেল দেয়ালের সঙ্গে।
ঝটকা দিয়ে খুলে দেয়ালের সঙ্গে খটখট করে বাড়ি খেলো পাল্লাটা। কেউ বেরিয়ে এল না ঘর থেকে। টর্চ জ্বেলে ঘরে আলো ফেলল কিশোর। বড় একটা বিছানা রয়েছে, চানপাশে বেশ কিছু আসবাবপত্র। একটা আলমারির কাছে এসে টান দিয়ে খুলল দরজা। ভেতরে তিনটে কোট ঝুলছে হ্যাঁঙারে।
পালিয়েছে, মুসা বলল।
কিন্তু কোন পথে? কিশোরের প্রশ্ন। আবার বেরিয়ে এসে হলঘরে আলো ফেলল। ডায়না আর রবিনই বা কোথায়? কোন সাড়া নেই!
তার কথার জবাবেই যেন উল্টো দিক থেকে ভেসে এল তীক্ষ্ণ চিৎকার।
দৌড় দিল দুজনে। একটা ঘরে শব্দ শোনা গেল। ছুটে ভেতরে ঢুকল ওরা। মেঝেতে লুটিয়ে রয়েছে একটা দেহ, টর্চের আলো পড়ল তার ওপর।
রবিন! উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠল কিশোর। কি হয়েছে, রবিন? হাঁটু মুড়ে বসল তার পাশে।
উফ, কানটা…! কান চেপে ধরে আছে রবিন।
দেখি তো, রবিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে কানের দিকে তাকাল কিশোর। আরি, রক্ত পড়ছে তো! অবশ্য বেশি কাটেনি।
এখানে কি করছিলে তুমি? মুসা জিজ্ঞেস করল।
তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি আর ডায়না ভাবলাম পেছনের সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাই। ও সোজা তিনতলায় উঠে গেল। আমি দোতলায় উঠতেই একটা শব্দ কানে এল।
তারপরেই তুমি এখানে এসে ঢুকেছ? কিশোর বলল। টর্চ ছাড়া?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। এখানে ঢুকতেই শুনলাম, পেছনে কে যেন ফিসফিস করে ডায়নার নাম ধরে ডাকছে। ফিরে চেয়ে আবছা একটা মৃর্তিকে দেখলাম, ডিনের মতই লাগল। ছুরি চালাল। সরে গিয়েছিলাম, ফলে শুধু কানে একটু খোঁচা লেগেছে। চিৎকার করে উঠলাম। ও বুঝে ফেলল আমি কে। গাল দিয়ে উঠে দৌড়ে চলে গেল। কেঁপে উঠল রনি। লোকটা পুরো পাগল হয়ে গেছে।