মুসার দিকে ফিরে বলল কিশোর, ঠিক আছে, তুমি যাও ওদের সঙ্গে। আমি রবিনকে নিয়ে চলে আসব সময়মত। মলে রেখে এসেছি ওকে, এনুডার ওপর নজর রাখার জন্যে।
*
পিকআপটাকে দেখে হাসল রবিন। তার গাড়ির পেছনে পিকআপ থামাল কিশোর। এনুডার বাড়ি থেকে ব্লকখানেক দূরে।
নেমে এগিয়ে এল সে। জানালার কাছে ঝুঁকে বলল, মলে গিয়েছিলাম। দেখলাম, শূটিং শেষ। তুমি নেই, এনু নেই। ভাবলাম, এখানেই এসেছ। তা খবর কি?
বিরক্ত হয়ে গেছি। শুটিং শেষ করে সোজা বাড়ি চলে এসেছে এনুডা। তারপর সেই যে গিয়ে ঘরে ঢুকেছে, বেরোনোর আর নামই নেই।
সন্দেহ হয় এমন কিছু চোখে পড়েছে?
নাহ্। একটা দৃশ্যেরই ছবি তোলা হলো কয়েকবার করে। অনেক দর্শক ভিড় করে বসে থাকল চারপাশে গোল হয়ে। কাজ শেষ করে ঘণ্টা দুয়েক আগে বাড়ি চলে এসেছে এনুডা।
কেউ দেখা করেছে তার সঙ্গে?।
করেছে, একটা মোটা লোক। মাথায় টাক। চোখে ভারী চশমা ছটার সময় ওকেই দেখা করতে বলেছে বোধহয় এনূড়া। ওর নামই হয়তো ফ্র্যাঙ্ক।
হু। ভেতরেই আছে এখনও?
না। এসে, কয়েক মিনিট থেকেই চলে গেছে।
বোঝা গেছে। এখানে আর কিছু করার নেই আমাদের। ভুরু নাচিয়ে মিটিমিটি হাসল কিশোর। রাতে খাবে কোথায়?
কেন, বাড়িতে! অবাকই হলো রবিন।
চলো না, কোন রেস্টুরেন্টে চলে যাই?
কিশোরের দিকে দীর্ঘ এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল রবিন। ব্যাপারটা কি, বলো তো? হঠাৎ এ ভাবে খাওয়ার দাওয়াত
খুলে বলল সব কিশোর, ছুরি হারানো থেকে শুরু করে, সব।
*
ডায়নার মনমেজাজ খারাপ থাকায় খাওয়াটা তেমন জমল না। বিল মিটিয়ে দিলেন নরিয়েমা। জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোথায় যাবে?
বাড়ি, নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল ডায়না। ঘুম পেয়েছে আমার।
গাড়ি মোট তিনটে। ডায়নার ল্যামবোরগিনি, কিশোরের পিকআপ, আর রবিনের গাড়ি। তিনজনকে ড্রাইভ করতে হবে।
কিশোরকে অনুরোধ কবে বসল ডায়না, কিশোর, তুমি চালাও না আমারটা! আমার চালাতে ইচ্ছে করছে না!
ঝট করে ডিন আর রবিনের দিকে চোখ চলে গেল কিশোরের। ডিনের চোখে রাগ। রবিনের মিটিমিটি হাসি। বোধহয় কিশোরকে ডায়নার শোফার হিসেবে কল্পনা করেই হাসি পাচ্ছে তার।
নিরাসক্ত দৃষ্টিতে ডিন আর রবিনের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসল কিশোর।
কিশোর আর ডায়না উঠল ল্যামবোরগিনিতে। রবিনের গাড়িতে রবিন একা। পিকআপে মুসা আর ডক্টর নরিয়েমা। ডিন কারও গাড়িতে উঠল না। সে আশা করেছিল গাড়িটা চালাতে বলবে ওকে ডায়না। সে-অপেক্ষাতেই ছিল। সেটা যখন হলো না, মেজাজ খারাপ করে চলে গেল সে। হুমকি দিয়ে গেল, ছুরিটা আর ফেরত পাবে না ডায়না!
সবাই চলল ওরা মরগান ম্যানশনের দিকে। ডিনই বা এ কথা বলল কেন, আর ডায়নাই বা ডিনকে উঠতে না দিয়ে কিশোরকে গাড়ি চালাতে বলল কেন, দুর্বোধ্য ঠেকল সবার কাছে। তবে এ নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা ঘামাল না কেউ।
পথে নরিয়েমার বাড়িতে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হলো।
রাস্তায় কোন অঘটন ঘটল না।
তবে বাড়ি পৌঁছে ডিনের ছুরি না দেয়ার কথাটা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কিশোর। প্রথমে রেগে উঠল ডায়না। তারপর আমতা আমতা করতে লাগল। চেপে ধরল তাকে কিশোর, ছুরিটা কোথায় আপনারা জানেন, তাই না?
না না…আ-আমি…কিছু… থেমে গেল ডায়না। তারপর রেগে উঠল, আমাকেই চোর ভাবছ?
সব কথা জানতে চাই আমি, ডায়না, ভারী হয়ে গেছে কিশোরের কণ্ঠস্বর। খুলে বলুন।
এমন কিছু ছিল কিশোরের কণ্ঠে, প্রতিবাদ করার সাহস করল না আর ডায়না। ঠোঁট কেঁপে উঠল তার। ধপ করে বসে পড়ল একটা সোফায়। আঁকুনি লেগে চুল এসে পড়ল মুখের ওপর, সরানোর চেষ্টা করল না। আমাকে খুন করার চেষ্টা কে করেছে, জানি, মোটা খসখসে হয়ে গেছে তার কণ্ঠ।
কে? এনুডা?
মাথা নাড়ল ডায়না। না। এনুডাও নয়, জুভেনারও না।
তাহলে?
দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল ডায়না। চোখে পানি নিয়ে তাকাল কিশোরের দিকে, যেন করুণার আশায়।
কে, ডায়না? কোমল গলা জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চোখের পানি আর ঠেকাতে পারল না ডায়না। আমি আর ডিন! সমস্ত ব্যাপারগুলো ছিল সাজানো!
চমকে যাওয়া সব কটা মুখের দিকে এক এক করে তাকাল সে। আর পেটে রাখতে পারল না কথা, গড়গড় করে বেরিয়ে আসতে লাগল সব, আব্বার রেখে যাওয়া সব টাকা বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে, বেহিসেবী খরচ করে শেষ করেছি। আমি। উড়িয়ে দিয়েছি কিছুদিনের মধ্যেই। টাকা ওড়ানো যে এত সহজ, জানতাম না! হঠাৎ একদিন দেখি খালি হয়ে গেছে অ্যাকাউন্ট। চাকর-বাকরের খরচ দিতে পারছি না। বিদেয় করে দিতে হলো ওদেরকে। শুধু যে অ্যাকাউন্টই খালি হয়েছে, তা নয়, ধারও হয়েছে অনেক। ম্যানশনটা বিক্রি করে দিলেও সে-ধার শোধ করে খুব সামান্যই বাকি থাকে। ওই টাকা দিয়ে রকি বীচে কোনমতে ছোটখাট একটা বাড়ি কেনা যায়। খাওয়া-পরার জন্যে একটা কাজ জুটিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না আমার। সেজন্যেই মিউজিয়াম থেকে আর্ট কালেকশনগুলো ফেরত নিয়ে এসেছি আমি, বলে গেল ডায়না। জানি, বেআইনী ভাবেই করেছি কাজটা। দলিলটা হারিয়ে ফেলেছে জুভেনার, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। নিয়ে এসেছি বিক্রি করার জন্যে। চোখের পানির সঙ্গে কালো মাসকারা গাল বেয়ে নামছে তার।
বলে যান, কিশোর বলল। এর সাথে ড্যাগার চুরি আর খুনের চেষ্টার সম্পর্ক কি?