গাড়ি নিয়ে গেছে, ভাবল কিশোর। ফিরে চলল প্রাসাদে।
মাঝপথে থাকতেই দরজায় দেখা দিল ডিন। উত্তেজিত ভঙ্গিতে হাত নেড়ে ডাকল
দৌড় দিল কিশোর।
ড্যাগার! ড্যাগার! চেঁচিয়ে বলল ডিন।
কি হয়েছে? কিশোর জানতে চাইল।
ডিনের চোখে ভয়। নেই ওটা!
ডিনের পাশ কাটিয়ে ছুটে পারলারে ঢুকল কিশোর। আবার জায়গামত ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়েছে বুককেসটা, ছবিগুলো ঝোলানো রয়েছে ঠিকমতই। সোজা সাইডবোর্ডের দিকে এগোল সে। পড়ে রয়েছে কাঁচের বাক্স। ডালা খোলা। ছুরিটা নেই ভেতরে। দরজায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ডক্টর নরিয়েমার দিকে তাকাল সে!।
ডিন, ওপরতলায় খুঁজুন, কিশোর বলল। ডক্টর, আপনি হলওয়ে আর সিটিংরূমে দেখুন। আমি এখানে দেখছি। বলা যায় না, মুসাও লুকিয়ে রেখে যেতে পারে।
সমস্ত পারলারে তন্নতন্ন করে খুঁজল কিশোর। ড্রয়ার, কার্পেটের নিচে, বইয়ের ফাঁকে-মোট কথা ছুরি লুকানো যায় এ রকম কোন জায়গা বাদ দিল না
নেই।
ডিন আর ডক্টর নরিয়ে ফিরে এল শূন্য হাতে। দুজনেই মাথা নাড়ল।
কি হতে পারে বলো তো? ডিনের প্রশ্ন। ডায়নাকে কিডন্যাপ করল নাকি কেউ? সেই সাথে ছুরিটাও নিয়ে গেল?
আমার তা মনে হয় না। গাড়ি নেই যেহেতু মুসাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বেরোতে পারে। বসে থেকে থেকে বের হয়ে গিয়েছিল হয়তো। কোথায় যেতে পারে, বলুন তো?
কান্ট্রি ক্লাব! সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল ডিন।
কিংবা মলে!
বেশ। ডক্টর, আপনি আর আমি চলুন ক্লাবে যাই। ডিন, আপনি মলে যান।
বাইরে বেরোতেই দেখা গেল একটা গাড়ি আসছে। ডায়নার গাড়িবারান্দায় এসে থামল ওটা। দরজা খুলে নেমে এল ডায়না আর মুসা। অবাক দৃষ্টিতে ওদের মুখের দিকে তাকাতে লাগল।
ডায়না জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
কোথায় গিয়েছিলেন? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
ঘুরতে। ভাল্লাগছিল না বসে থেকে থেকে। কিন্তু হয়েছেটা কি? মুখ অমন করে রেখেছ কেন? কি ব্যাপার?
আপনার জন্যে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
আমার জন্যে? কেন? সাথে তো মুসাই আছে। আর আমি কচি খুকি না। বেরোতেই পারি যখন খুশি।
তা পারেন। ভাবতাম না, যদি বোরজিয়া ড্যাগারটা গায়েব না হয়ে যেত।
কি বললে!
ঠিকই বলছে, বললেন নরিয়েমা। খুলে বললেন, কি হয়েছে।
থমথমে হয়ে গেছে ডায়নার চেহারা। একটা কথাও আর না বলে চুপচাপ ঘরে ঢুকল, ছুরির বাক্সটা দেখার জন্যে।
*
আমি জুভেনারের ওখানে যাচ্ছি, ঘোষণা করল কিশোর। সারাটা বিকেল ওর অফিসে বসে থেকে এসেছি। ফেরেনি। সে-ও এসে ছুরিটা চুরি করে নিয়ে পালাতে পারে।
তা পারে, ডায়না বলল। কারণ বাড়ির দরজা-জানালা খোলাই ছিল।
ভুল করেছ, গম্ভীর হয়ে বললেন ডক্টর। এত দামী দামী জিনিস রয়েছে ঘরে। তালা দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
যায়নি যখন, কি আর করা? কিশোর বলল। জুভেনারের বাসার ঠিকানা নিয়ে এসেছি। কারও ইচ্ছে করলে আসতে পারেন আমার সঙ্গে।
মাথা নাড়ল ডায়না আর ডিন। আর ডায়না যেহেতু থাকছে, মুসাও যাবে না। ডক্টর নরিয়েমা বললেন, আমি যাব। লোকটার সঙ্গে একটা বোঝাঁপড়া আছে আমার। জিজ্ঞেস করব, মেয়েটাকে এত জ্বালাচ্ছে কেন?
ক্লিফসাইড হাইটস পেরিয়ে এল ওরা। শর্ট নেক চেনেন নরিয়েমা, কিশোরকে পথ বলে দিতে থাকলেন। পথের দুধারে এখন ঘোট ঘোট বাড়ি আর টাওয়ারের মত উঁচু হয়ে উঠে যাওয়া বিশাল ম্যাপল গাছ। বাড়িঘরগুলো দেখতে সব প্রায় একই রকম। সাদা রঙ করা দেয়াল, ছিমছাম সন আর সুন্দর ফুলের বাগান। ঠিকানাটা তার হাতে তুলে দিয়েছে কিশোর। নম্বর দেখছেন নরিয়েমা। একটা বাড়ি দেখিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, ওটাই।
অন্য বাড়িগুলোর মত পরিচ্ছন্ন নয় এটা। আগাছা সাফ হয় না বহুদিন। সর্বত্র। অযত্নের ছাপ।
গাড়িটাড়ি তো দেখছি না, কিশোর বলল। বোধহয় বাড়ি নেই।
এখন কি করবে তাহলে?
আপনি গাড়িতে বসুন। আমি দেখে আসি।
শূন্য ড্রাইভওয়ে ধরে হেঁটে চলা কিশোর। প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ময়ল, জল ফেলে রেখেছে যেখানে সেখানে। নোংরা করে রেখেছে জায়গাটা।
সামনের দরজায় এসে ঘন্টা বাজল সে।
জবাব নেই।
আবার বাজাল। সাড়া মিলল না এবারেও। তুতীয়বার বাজিয়ে, জবাব না পেয়ে পাশে একটা জানালার কাছে চলে এল। ভেতরে উকি দিয়ে দেখল কেউ নেই। ফিরে এল পিকআপের কাছে।
কি আছে? জিজ্ঞেস করলেন নরিয়েমা।
না। বিছানা এলোমেলো। টেবিলে পড়ে আছে অধোয়া থালা-বাসন দেখে মনে হয়, তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে।
তার মানে পালিয়েছে। ছুরিটা চুরি করে।
হতে পারে। কিন্ত এর কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না আমি! জুভেনার চায় সময় জিনিস যেগুলো মিউজিয়াম থেকে নিয়ে এসেছে ডায়না। শুধু একটা ছুরি চুরি করে পালাবে কেন? প্রশ্নটা এখন হঠাৎ করেই উদয় হলো কিশোরর মাথায়।
.
১২.
একটা মুহূর্তও আর এ ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছে না আমার, ডায়না বলল। কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে সব।
তা ঠিক, মাথা দোলালেন নরিয়েমা। ভাল না লাগলে, চলো, বাইরে থেকে ঘুরে আসি। রাতের খাওয়াটাও কোন রেস্টুরেন্টে সেরে নেয়া যাবে। চলো, আজ আমিই খাওয়াব তোমাদের।
আইডিয়াটা মন্দ না, কিশোর বলল। কোন রেস্টুরেন্টে যাবেন?
ডিলমারস প্লেস।
চমৎকার জায়গা!তুড়ি বাজাল মুসা। রান্না খুবই ভাল। দামও বেশি।
দামের জন্যে ভাবতে হবে না তোমাদের, হাসলেন ডক্টর।