হাত নেড়ে ডাকল কিশোর, হাই, ডিন!
ফিরে তাকাল ডিন। কিশোরকে দেখেই চোখ জ্বলে উঠল। কী?
ডায়না এসেছে নাকি?
না, এল আর কই? বডিগার্ডের সঙ্গে রয়ে গেছে! বডিগার্ড শব্দটা ব্যঙ্গের সুরে বলল সে।
আমাদের ওপর অযথাই রেগে আছো। হাহ হাহ! তা কি জন্যে এসেছ?
গারেজ থেকে গাড়িটা নিতে, ল্যামবোরগিনটা দেখাল ডিন। ডায়নাই অনুরোধ করল।
পিকআপ থেকে নামল কিশোর। এত পত্রিকা কার জন্যে?
ওর জন্যেই। আজকের কাগজেও ওর ছবি বেরিয়েছে। বলল সব কটার একটা করে কপি কিনে নিয়ে যেতে।
ওর কাজ করে দিতে আপনার ভাল লাগে, না?
লাগলেই বা কি? তোমার জ্বালায় কিছু করতে পারব নাকি? আর তোমাকেই বা দোষ দিয়ে কি হবে? যতবারই ওর কাছাকাছি যেতে চাই, কেউ না কেউ এসে মাঝখানে পড়ে বাগড়া দেবেই।
এ-জন্যেই আমার ওপর রাগ, না? হেসে বলল কিশোর। বিশ্বাস করুন, বাগড়া দিয়ে শয়তানি করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
তাহলে ওভাবে পিছে লেগে রয়েছ কেন?
রহস্যের লোভে। দারুণ একটা কেস পেয়ে গেছি। বোরজিয়া ড্যাগারকে ঘিরে জমে উঠেছে রহস্য। এর কিনারা করার জন্যেই ঘোরাফেরা করি ম্যানশনে।
সত্যি বলছ?
হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইল ডিন। মনে হলো না, কথাটা বিশ্বাস করেছে।
ডিন, আপনাকে পেয়ে ভালই হলো। হয়তো বুঝতে পারছেন, ডায়নাকে কেউ খুন করার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে সাহায্য করেন না কেন?
ডায়নার ওপর কড়া নজর রাখছি আমি।
কই আর রাখলেন? এই তো, চলে এলেন এখানে। যদি এই সময়ের মধ্যে কিছু হয়ে যায়?
কেন, তোমার বন্ধু আছে না ওখানে?
হ্যাঁ, আছে। সেজন্যেই তো বলছি, চোখ রাখার দরকার নেই। অন্যভাবে সাহায্য করুন আমাদেরকে।
কি ভাবে?
আসুন আমার সঙ্গে। রকি বীচ মিউজিয়ামে যাব। এ সবের পেছনে জুভেনারের হাত থাকতে পারে। তাহলে তাকে ঠেকাতে হবে। সাহায্য দরকার আমার। আপনি এলে ভাল হয়।
কি যেন ভাবল ডিন। তারপর মাথা নাড়ল, বেশ, চলুন তাহলে।
*
মিউজিয়ামে ঢোকার সময় চুলে হাত চালাল ডিন, অস্বস্তি বোধ করছে। শেষে বলেই ফেলল, কিশোর, আমি গোয়েন্দা নই। এ সব কাজ আমাকে দিয়ে কি হবে? তারচেয়ে আমি ম্যানশনে চলে যাই, ডায়নার কাছে কাছে থাকলে কাজ হবে।
আসুন। বেশিক্ষণ লাগবে না। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব শুধু জুভেনারকে।
রিসিপশনিস্ট জানাল, অফিসে নেই জুনোর। কোথায় গেছে, বলতে পারল না। ফিরতে দেরি হবে। বসা যাবে কিনা, জিজ্ঞেস করল কিশোর। রিসিপশনিস্ট বলল, ঠিক আছে, ওর অফিসে গিয়ে বসো।
এসে বসে আছে তো আছেই ওরী। জুভেনারের দেখা নেই।
উঠে যাবে কিনা ভাবছে কিশোর, বিশেষ করে ডিনের চাপাচাপিতে বিরক্ত হয়েই অনেকটা, এই সময় দরজা খোলার শব্দ হলো। ফিরে তাকাল দুজনে।
জুভেনার নয়। বাদামী সুট এ দুজন বিশালদেহী লোক।
জুভেনার কই? জিজ্ঞেস করল একজন।
তার জন্যেই তো বসে আছি আমরা, জবাব দিল কিশোর।
আসবে কখন?
জানি না। সেক্রেটারি বলল, দেরি হবে। কোথায় গেছে, জানে না।
হারামজাদাকে পেলে মজা দেখাতাম আজ! হাত মুঠো করে ফেলেছে লোকটা। টাকা দেবে না, ওর বাপ দেবে।
এই, কি বলছ! ধমক দিয়ে বলল দ্বিতীয়জন। মাথা সব সময়ই গরম হয়ে থাকে! চলো, পরে আসা যাবে।
প্রথম লোকটাকে প্রায় টেনে বের করে নিয়ে গেল দ্বিতীয়জন।
টানাটানিতে একজনের কোটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হোলস্টার, কিশোরের চোখ এড়ায়নি সেটা। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, দেখলেন?
কী? অবাক হলো ডিন।
পিস্তল। দুজনের কাছেই পিস্তল আছে।
বলে কি! ভয় পেয়ে গেল ডিন। তবে কি জুভেনারকে খুন করতে এসেছিল?
কি জানি!
আমি আর বসব না। চলো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ঘড়ি দেখল কিশোর। হ্যাঁ, সাড়ে চারটে বাজে। চলুন।
সেক্রেটারির কাছে এসে জুভেনারের বাড়ির ঠিকানা চাইল কিশোর।
একটা কাগজে খসখস করে কিছু লিখে বাড়িয়ে দিল সেক্রেটারি।
লেখাটা পড়ে কিশোর বলল, হার্ড লেক। পাশের শহরটাই। ডায়নাদের বাড়ি থেকে দূরে না। ডিনের দিকে তাকাল। যাবে নাকি?
না, বাবা, আমি পারব না! দুহাত নাড়ল ডিন। পারলে তুমি যাও। আমি ম্যানশনে যাচ্ছি।
হাসল কিশোর। এত ভয় পেলেন? চলুন, আমিও যাব। মুসার সঙ্গে কথা আছে। রসিকতার ভঙ্গিতে চোখ টিপল সে। দেখি, ও সরতে রাজি হয় কিনা। তাহলে খানিকক্ষণের জন্যে একলা পাবেন আপনি ডায়নাকে। ওর বডিগার্ড হওয়ার খায়েশটা পূরণ হবে।
*
মরগান ম্যানশনের কাছে পৌঁছল দুটো গাড়ি। লাল ল্যামবোরগিনিটা আগে আগে রয়েছে, পেছনে কিশোরের পিকআপ।
ড্রাইভওয়ে পেরিয়ে আসতেই গাড়ি-বারান্দায় আরেকটা গাড়ি চোখে পড়ল।
ওটার কাছে এসে পিকআপ থামিয়ে নামল কিশোর।
এই যে, তোমরা এসেছ। ডায়না কোথায়?
ফিরে তাকল কিশোর। প্রাসাদের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়লেন তার দিকে ডক্টর নরিয়েমা। প্রশ্নটা তিনিই করেছেন।
ল্যামবোরগিনির দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামল ডিন। কেন, মুসার সঙ্গেই তো ছিল! এখানেই থাকার কথা!
অবাক হলেন ডক্টর। বলো কি? আমি এসে দেখি, দরজা খোলা। ওরা নেই!
কিশোর আর ডিনও অবাক হলো। শঙ্কা ফুটল ডিনের চোখে।
খোঁজ করা দরকার। জরুরী কণ্ঠে বলল কিশোর। ডিনকে পাঠাল প্রাসাদে খুঁজতে। সে চলল গ্যারেজে দেখতে।
চারটে দরজাই খোলা। লনে কাজ করার যন্ত্রপাতি আর কিছু গ্রিল পড়ে থাকতে দেখা গেল গ্যারেজের দুটো ঘরের ভেতরে, বাকি দুটো পুরো খালি।