পায়ে পা বেধে উড়ে গিয়ে পড়ল এনু। ধড়াস করে পড়ল যেন ময়দার বস্তা। হাত থেকে ছুটে উড়ে চলে গেল পিস্তলটা। দোকানের জানালা-দরজা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে খরিদ্দারেরা। বাধা দিতে বা কোন কিছু করতেই এগোচ্ছে না কেউ।
এই, থামো! খ্যাখ্যান করে উঠল একটা কণ্ঠ। ছেলেটা কে?
চিনি না, টম, জবাব দিল দাড়িওয়ালা লোকটা। আমার হাত সরিয়ে দৌড় দিল।
ঘুরে তাকাল রবিন। সার্চলাইটের উজ্জ্বল সাদা আলো প্রতিটি কোণ থেকে এসে পড়েছে তার ওপর। মেঝেতে এঁকেবেঁকে পড়ে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার। হেসে উঠল কয়েকজন মানুষ, টিভি ক্যামেরা হাতে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। একজন চিৎকার করে বলল, ফিল্মটা রেখে দিও টম। দারুণ দৃশ্য! কাজে লাগবে পরে!
যথেষ্ট হয়েছে, বলল প্রথম কণ্ঠটা। এই সরাও তো সব, পরিষ্কার করো। দশ মিনিটের মধ্যেই আবার শূটিং করব।
গুঞ্জন উঠল জনতার মাঝে। এদিক ওদিক সরে যেতে লাগল ওরা। কয়েকজন এগিয়ে গেল একটা টেবিলের দিকে, হালকা খাবার আর কোমল পানীয় রাখ ওটাতে।
ঢোক গিলল রবিন। দাড়িওয়ালা লোকটাকে তার দিকে আসতে দেখে লাল হয়ে গেল গাল। সব ভজকট করে দিয়েছ। আবার নতুন করে করতে হবে পুরো দৃশ্যটা।
সরি, স্যার, আমি ভেবেছিলাম…
যা করার করেছ। আর করবে না।
দাড়িওয়ালা লোকটা চলে গেলে ফিরে তাকাল রবিন। কিশোর এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। রবিন কাঁধে হাত রেখে সান্তুনার সুরে বলল, ওরকম ভুল সবাই করতে পারে। তুমি না করলে আমি করতাম, বাধা দিতে যেতাম এনুডাকে।
পেছন থেকে বলে উঠল এনুডা, আবার আমার পেছনে লেগেছ!
ফিরে তাকিয়ে শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, ভুল হয়ে গেছে, মিস্টার এনুডা। দেখলেনই তো…
একেবারে স্পষ্ট দেখেছি! চিবিয়ে চিবিয়ে বলল এনুডা, এনুডা এনুডা করবে না। এখানে আমি নিভার ব্রাউন। আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে এসেছ নাকি?
না, মিস্টার এনুডা। জানতে এলাম, ডায়না মরগানকে খুনের চেষ্টা আপনি কেন করছেন?
বড় বড় হয়ে গেল এডার চোখ। বুক চেপে ধরে মাতালের মত টলে উঠল। ইংরেজি নাটকের সংলাপ নকল করে বলে উঠল, ইউ ভাইল, ইভিল জুভেনাইল ডেলিংকোয়েন্ট! এত্তোবড় সাহস তোমার, আমাকে খুনী বলতে এসেছ…
করব না-ই বা কেন? প্রাসাদে সে-রাতে রিভলভার হাতে কাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি? যে পথে দেখা গেছে আপনাকে, ওই পথ দিয়েই সার্ভেন্টস কোয়ার্টার থেকে এসে প্রাসাদের বেসিমেন্টে নামা যায়, সার্কিট ব্রেকারগুলো যেখানে আছে।
সার্কিট ব্রেকার? কি বলছ!
আরও বলতে পারি। আপনার সিলভার-প্লেটেড রিভলভারটাই বনের মধ্যে পাওয়া গেছে। গতকাল। ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে ডায়নাকে গুলি করার পর।
ফালতু কথা রাখো! আমার ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার ভয় আছে, নইলে ধরে তোমাকে এখন এমন ধোলাই দিতাম! তুমি বলছ কান্ট্রি ক্লাবে গিয়েছিলাম, আর আমি বলছি সারাদিন আমি এখানে ছিলাম। আমার পার্ট আসার অপেক্ষায়। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে একটা খাতা নিয়ে এল। ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, এই যে দেখো, আমার হাজিরা।
কিশোর পড়ল:
ব্রাউন, নিভার।
এসেছে-সকাল ৭.৩০।
বেরিয়েছে-বিকাল ৬.৩৫।
বিশ্বাস হলো তো? আরেকটা কথা, আমি বেসিমেন্টে ঢুকিনি।
কি করে বুঝব? সেরাতে গিয়েছিলেন ম্যানশনে। চাকরদের ঘরে ঢুকেছিলেন…
পার্টি চলছিল। সবার চোখ এড়িয়ে কটেজে ঢোকার উপযুক্ত সময় ছিল ওটা।
পাঁচ মিনিট! চিৎকার করে বলল একটা ভারী কণ্ঠ। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। সবাই রেডি?
গুঙিয়ে উঠল এনুডা। হায়, হায়, অনেক সময় নষ্ট করলাম বকবক করে! আমি যাই! তাড়াহুড়ো করে চলে গেল সে।
এখনও আমি বিশ্বাস করি না ওকে, কিশোর বলল।
এখানে থেকেও আর লাভ নেই। এনুডার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। চলো।
ওদের পেছনে হুস করে খুলে গেল এলিভেটরের দরজা। ঢুকে পড়ল দুজনে। এবার ভেতরে আর একজনও নেই, শুধু ওরাই।
আমার অন্য কাজ আছে, কিশোর বলল। তুমি এখানে থেকে এনুডার ওপর নজর রাখতে পারবে?
খুব পারব, আগ্রহের সঙ্গে বলল রবিন।
ও কি করে না করে সব দেখবে। দরকার হলে ওর বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে যাবে। সাবধান, ও যেন তোমাকে চিনতে না পারে।
পিকআপের মধ্যে প্রয়োজনীয় নানা রকম জিনিস আছে। বাক্স খুলে একটা সবুজ ইউনিফর্ম বের করল কিশোর, শ্রমিকের কাজের পোশাক। নাও, পরে ফেলো। একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নিয়ে ময়লা টোকানোর ভান করবে। পারবে তো?
দেখোই না, হেসে বলল রবিন। পোশাকটা হাতে নিয়ে বলল, আসছি। এক মিনিট। মহিলাদের টয়লেটের দিকে রওনা হয়ে গেল সে।
ফিরে এল একটু পরেই। ঠিকমত লাগেনি পোশাকটা। সামান্য ঢলঢলে হয়েছে। হাত আর পায়ের নিচের অংশ ভাজ করে মুড়ে রাখতে হয়েছে।
হেসে ফেলল কিশোর। দেখো, টিভির পরিচালক না আবার দেখে ফেলে। অভিনয়ের জন্যে জোর করে ধরে নিয়ে যাবে তাহলে।
ভালই হবে, হাসতে হাসতে বলল মেয়ে সেজে আসা রবিন।
তাকে রেখে পিকআপ নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। রকি বীচ মিউজিয়ামে রওনা হলো। শহরের ঠিক মাঝখানে এসে লাল আলো দেখে থামল সে। এই সময় একটা লাল গাড়ি চোখে পড়ল, একধারে থেমে রয়েছে। পরিচিত লাগল গাড়িটা। ল্যামবোরগিনি।
চিনে ফেলল। ডায়নার গাড়ি। সামনে না এগিয়ে গাড়িটার পেছনে এনে পিকআপ রাখল কিশোর। কাছের একটা স্টোর থেকে বেরিয়ে এল ডিন রুজভেল্ট, হাতে একগাদা পত্র-পত্রিকা।