কিশোর গাড়ি থেকে নামতেই বলল, এত দেরি করলে।
তোমার চেয়ে দূর থেকে আসতে হয়েছে আমাকে।
ডায়না কেমন আছে? একটা ভুরু উঁচু করল রবিন।
আছে বোধহয় ভালই। এতক্ষণে নিশ্চয় হেভি মারপিট লাগিয়ে দিয়েছে ডিন আর মুসা, হেসে রসিকতা করল কিশোর।
ভাল। তুমি মুক্তি পেলে। বলে কিশোরের হাত ধরে এনুডার ঘরের দিকে টেনে নিয়ে চলল রবিন।
ছোট্ট একটা বাড়ি। দেয়ালে কতদিন রঙ পড়ে না কে জানে। একপাশের দেয়াল ধসে পড়েছে। সামনের খুদে চত্বর ঘিরে বেড়া দেয়া। পুরানো সেই বেড়ায় কাত হয়ে ঝুলছে একটা টিনের প্লেটে লেখা সাইনবোর্ড।
পড়তে পারছ? জিজ্ঞেস করল রবিন। সামনের দরজাটা ঠেলে খুলল।
দাঁড়াও দাঁড়াও! লেখা আছে…হইতে সাবধান!
কি হতে সাবধান?
সেটুকু তো মুছে গেছে। বোধহয় কুকুর…
এই, কুত্তা! সাবধান! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
বিশাল কালো একটা প্রাণী ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে আসছে।
ধক করে উঠল কিশোরের বুক। পাগলের মত এদিক ওদিক তাকাল একটা হাতিয়ারের জন্যে। মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল একটা ডাল। তুলে নিল ওটা। দৌড়ে এসে দাঁড়াল রবিনের সামনে, কুকুরটার মুখোমুখি।
এই, এই কুত্তা! সর, সর! ধমক দিয়ে বলল সে।
দাঁড়িয়ে গেছে জানোয়ারটা। দাঁত খিচাল বিকট ভঙ্গিতে।
এক পা আগে বাড়ল কিশোর। ডাল নেড়ে হুমকি দিল। গর্জে উঠল কুকুরটা। তবে পিছিয়ে গেল এক পা।
রবিন, সরে যাও! আস্তে করে বলল কিশোর। সামনের দরজাটা গিয়ে খোলো। আমি আটকে রাখছি এটাকে!
পারবে?
চেষ্টা করি। যাও!
কিশোরের পেছন থেকে বেরিয়ে রবিন পা বাড়াতেই লাফ দিয়ে এগোল কুকুরটা।
কষে ওটার নাকেমুখে এক বাড়ি মারল কিশোর। কেউ করে পিছিয়ে গেল কুকুরটা। আবার বাড়ি তুলল কিশোর। লাঠির দিকে তাকিয়ে আছে ওটা, আর এগোনোর চেষ্টা করছে না।
অবাক কাণ্ড তো! ওরকম করে তাকাচ্ছে কেন? আরে, আবার লেজও নাড়তে আরম্ভ হরেছে! কি ভেবে লাঠিটা একপাশে নাড়ল কিশোর। ঠিক সেই দিক সই করে লাফ দেয়ার ভঙ্গি করল কুকুরটা। দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরের গায়ে এসে পড়ার কোন ইচ্ছে নেই।
কি কুত্তা ওটা? রবিনও অবাক হয়েছে। ওরকম করছে কেন?
বোধহয় রিট্রিভার! ঝুঁকিটা নিল কিশোর। লাঠিটা ছুঁড়ে ফেলল রাস্তায়। বিদ্যুৎ খেলে গেল যেন কুকুরটার শরীরে। চোখের পলকে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল কুড়িয়ে আনার জন্যে। ওটা বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গেটটা লাগিয়ে দিল কিশোর।
রিট্রিভারই। চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা শব্দ করে ছাড়ল কিশোর। দাঁত আছে প্রচুর ওটার, মগজ নেই।
সামনের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল দুজনে। হলদে একটা কাগজে নোট লিখে টেপ দিয়ে সাঁটানো রয়েছে দরজায়:
ডিয়ার ফ্র্যাঙ্ক,
মলে যাচ্ছি আমি। পাঁচতলায় পাবে। ওখানে শূটিং হতে পারে আজ।
৬টায় দেখা হবে।
এন.বি.
গাধা নাকি লোকটা? কিশোর বলল। এ ভাবে খোলাখুলি লিখে রেখে যায় কেউ?
জলদি চলো! খুন করে ফেলার আগেই ধরা দরকার! শুটিং হতে পারে বলছে…, গেটের দিকে দৌড় দিল রবিন। কিন্তু কাছে যাওয়ার আগেই থমকে গেল। গেটের বাইরে দাঁতের ফাঁকে লাঠি চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে কুকুরটা। ফিরে চেয়ে বলল, এই কিশোর, কি করব?
দাঁড়াও। গেটের কাছে এগিয়ে গেল কিশোর। আমি খুললেই তুমি বেরিয়ে যাবে। সোজা গাড়িতে!
তোমাকে যদি কামড়ায়?
কামড়াবে না। গেটটা সামান্য ফাঁক করতেই ঢুকে পড়ল কুকুরটা। লাঠিটা ধরল কিশোর। এই সুযোগে চট করে বেরিয়ে গেল রবিন।
কুকুরের মুখ থেকে লাঠি নিয়ে দূরে আরেকদিকে ছুঁড়ে দিল কিশোর। জানোয়ারটা সেটা আনতে ছুটতেই বাইরে এসে গেট লাগিয়ে দিল সে। পিকআপে উঠে পড়ল।
*
রবিনের গাড়িকে অনুসরণ করে মলে চলে এল কিশোর। ইনডোর লটে গাড়ি পার্ক করে রেখে এলিভেটরের কাছে চলে এল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজা। ভেতরে লোক ঠাসাঠাসি।
দরজা টেনে ধরল কিশোর। এক্সকিউজ আস! বলেই কারও প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে ঢুকে পড়ল ভেতরে। রবিনও ঢুকল। কেউ পছন্দ করল না ব্যাপারটা। তবে কিছু বলল না।
পাঁচতলা, মিষ্টি করে হেসে বলল রবিন। অপারেটরের মন ভেজানোর জন্যে।
গোমড়া মুখে সামান্যতম হাসি ফুটল না ছিপছিপে রোগাটে মানুষটার। বোতাম টিপে দিল।
ওই কয়টা তলা পেরোতেই যেন সারা জীবন লেগে যাবে, কিশোরের মনে হলো। প্রতিটি তলায় থামছে লিফট। গাদাগাদি হয়ে থাকা মানুষের মধ্যে দিয়ে গুতাগুতি করে নামছে পেছনে দাঁড়ানো লোকগুলো।
অবশেষে পাঁচতলায় পৌঁছল লিফট। দরজা খুলল। নামতে যাবে দুজনে, হাত বাড়িয়ে ঠেকাল ওদেরকে একজন দাড়িওয়ালা লোক।
ঠিক এই মুহূর্তে দুটো গুলির শব্দ হলো! দাড়িওয়ালার পেছনের নীল সুট পরা একটা লোক দিল খিচে দৌড়, যেন এই ছোটার ওপরই জীবন নির্ভর করছে তার।
অটোম্যাটিক পিস্তল হাতে তার পেছনে ছুটল বার্ব এনুডা।
.
১১.
ধরো, ধরো ওকে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। থামাও।
যেও না, যেও না! বাধা দিতে গেল কিশোর। ওর হাতে পিস্তল…
শুনতে পেল না বোধহয় রবিন। দাড়িওয়ালার হাত ঠেলে সরিয়ে বেরিয়ে গেল, দৌড় দিল এনুডার পেছনে।
চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে লোকে, বাজার করতে এসেছে ওরা মলে। কেউ কেউ উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মেঝেতে। কারও দিকেই তাকাচ্ছে না এনুডা। চোখ লাল, কঠিন চেহারা, তার নজর নীল সুট পরা লোকটার দিকে। মুহূর্তের জন্যেও সরাচ্ছে না। রবিনের বাড়িয়ে দেয়া পা-টাও দেখতে পেল না সে-জন্যে।