কিন্তু তারচেয়ে
কনুইয়ের তো মেরে মুসাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বলল, না, সাঁতারই কাটতে যাব।
ঠিক আছে। তোমরা গিয়ে কাপড় বদলে এসো। আমি ডিনকে ফোন করছি। সকালে সাঁতার কাটতে পছন্দ করে ও।
ফোন করতে গেল ডায়না। বেরিয়ে এল কিশোর-মুসা। সিটিং রূমের পাশ দিয়ে যাবার সময় কানে এল ডায়নার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ, ছেলেমানুষী কোরো না!…নিশ্চয়ই না!…নির্বোধ ভাবছ কেন ওদের? আমার তো ধারণা, তোমার চেয়ে অনেক চালাক ওরা!
পরস্পরের দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। কিশোর বলল, সমস্যাটা আমাদেরকে নিয়ে।
মাথা ঝাঁকাল মুসা। ভেবেছিলাম ডিনের সাহায্য পাব। কিন্তু ও তো আমাদের শত্রু ভারছে। এসো।
দ্রুত বেদিং সুট পরে নিল দুজনে।
চেঞ্জিং রূম থেকে আগে বেরোল কিশোর। দৌড়ে চলল সুইমিং পুলের দিকে। ডাইভিং বোর্ডে উঠে ঝাঁপ দেয়ার জন্যে তৈরি হলো। ঠিক ওই সময় পুলের নিচে ইলেকট্রিকের তারটা চোখে পড়ল তার। স্বচ্ছ পানিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, তারের একটা মাথায় লাগানো প্রাগ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে একটা আউটডোর সকেটে।
শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল সে। ঝাঁপ দেয়া থেকে বিরত থাকল। তার পেছনেই উঠে এসেছে মুসা। পাশ কাটিয়ে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে গেল।
নাআ! নাআ! বলে চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে ডাইভ দিল মুসা।
.
১০.
বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মরবে তার বন্ধু, তারই চোখের সামনে, অথচ সে কিছুই করতে পারবে না, এ-দৃশ্য সইতে পারবে না সে। চোখ বন্ধ করে ফেলল কিশোর।
ঝুপ করে শব্দ হলো পানিতে পড়ার। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা। তারপর হুসস করে ভেসে ওঠার শব্দ। বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মরার পর কি সাথে সাথেই ভেসে ওঠে লাশ? কতটা কুৎসিত লাগে দেখতে ওটাকে?
কিশোর, চোখ বুজে আছো কেন? মুসার ডাক শোনা গেল।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর। আস্তে চোখ মেলে তাকাল। মুসাই। পানিতে মাথা তুলে ডাকছে। বহাল তবিয়তেই আছে। কিছুই হয়নি ওর!
ডাইভিং বোর্ড থেকে নেমে পড়ল কিশোর। দৌড়ে পুলের একপাশে এসে সকেট থেকে একটানে খুলে ফেলল প্লগটা।
সর্বনাশ! চোখ বড় বড় করে ফেলল মুসা। মরলাম না কেন?
আল্লাহই জানে!
ডায়না এসে হাজির হলো। পরনের বেদিং সুটটা লাল-কমলা ডোরাকাটা। এই, কি হয়েছে? কিসের কথা বলছ?
এই তারটা পানিতে ছিল, দেখিয়ে বলল কিশোর। প্লগ সকেটে ঢোকানো।
নিশ্চয় রাতের বেলা পাতা হয়েছে, বলল মুসা। মৃত্যুফাঁদ!
স্ট্রেঞ্জ! নিমেষে সাদা হয়ে গেছে ডায়নার মুখ, হাঁসি উধাও। আমার জন্যে পেতেছিল! জানে, সকালবেলা সাঁতার কাটতে নামি! ঢোক গিলে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল পুলের পাশের একটা চেয়ারে। হাত-পা কাঁপছে। কে.কে খুন করতে চায় আমাকে?
বলতে পারব না, ডায়না, কিশোর বলল। তবে এনুডাকে সন্দেহ করা যায়।
মুসা পানিতে নামার আগেই তারটা খুলেছ?
না। পরে। কি করে যে বেঁচে গেল, বুঝতে পারছি না!
আমি পারছি, ডায়না বলল। স্বস্তি ফিরে এসেছে কিছুটা। আমি নামলেও মরতাম না। সকেটটা খারাপ কয়েক বছর ধরেই। সারাবে সারাবে করেও সারায়নি বাবা। ভাগ্যিস ভুলে গিয়েছিল।
সাঁতার আপাতত থাক, কিশোর বলল। এনুডাকে গিয়ে ধরব এখন।
মাথা নাড়ল ডায়না। আমার মনে হয় না ওর কাজ। আমাকে দেখতে পারে, ঠিক, কিন্তু খুন করতে আসবে না।
চলুন না গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি?
না। আমি ওর সামনে আর যাব না।
কিশোর, তুমিই যাও, পানি থেকে উঠতে উঠতে বলল মুসা। আমি ডায়নাকে পাহারা দিই।
তাই করো, প্রস্তাবটা পছন্দ হলো কিশোরের। আমি রবিনকে ফোন করছি। ওকেও যেতে বলব। দরকার হতে পারে।
মুসা চলে গেল চেঞ্জিং রূমে, কাপড় বদলাতে। আর কিশোর গেল কটেজে রবিনকে ফোন করতে। এনুডার ঠিকানা দিয়ে বলল, রবিন যেন ওখানে দেখা করে। তারপর তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। দৌড়ে চলল ড্রাইভওয়ের দিকে।
পিকআপে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ডায়নাকে ডেকে বলল, ডায়না, দুশ্চিন্তা করবেন না। চলে আসব কাজ শেষ করেই।
পিকআপ ছেড়ে দিল কিশোর। ড্রাইভওয়েতে থাকতেই দেখল উল্টো দিক থেকে আরেকটা গাড়ি আসছে। ব্রেক কষল সে। গাড়িটা কাছে আসতেই জানালা দিয়ে মুখ বের করে হেসে বলল, গুড মর্নিং, ডিন। খুব গরম, না?
জবাব দিল না ডিন। মুখ কালো করে রেখেছে। হুস করে পিকআপের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে।
*
ক্লিফসাইডের মাইল চারেক দূরে থাকে এনুডা। রকি বীচের একটা পুরানো এলাকা এটা। বাড়িঘরগুলো সব পুরানো, কোন কোনটা ধসে পড়েছে ইতিমধ্যেই, বাকিগুলোর অবস্থাও কাহিল। কয়েকটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে। এক সময় লন ছিল সামনে, এখন সেখানে ঘাস আর আগাছার রাজত্ব, ফুলের নামগন্ধও নেই। বাতাস ভীষণ গরম। বাইরে কেউ নেই। মাঝে মাঝে বাচ্চা ছেলের চিৎকার আর নেড়ি কুকুরের ডাক ছাড়া কোন শব্দও নেই। দুচারটে জানালায় মানুষের মুখ দেখা গেল। একটুখানি হাওয়ার আশায় বসেছে খোলা জানালার ধারে। হাতপাখা দিয়ে জোরে জোরে বাতাস করছে। পিকআপের শব্দ পেয়ে কিশোরের দিকে তাকাচ্ছে কঠিন দৃষ্টিতে। কেন এই বিরক্তি, ওরাই জানে।
ডানে মোড় নিল কিশোর। বাড়ির নম্বর খুঁজতে লাগল। তার আগেই এসে হাজির হয়েছে রবিন। কিশোরকে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নামল। হাত নেড়ে ডাকল। এমুডার বাসার সামনেই পার্ক করেছে সে।