আরেক পাশের দেয়ালে দুটো কাঠের সিঁড়ি লাগানো। ওপরে দুটো দরজা। কোথায় ঢুকেছে সে, বুঝতে অসুবিধে হলো না। সুড়ঙ্গ দিয়ে বেসিমেন্টে চলে এসেছে, মাটির তলার ঘরে। সার্কিট ব্রেকার বক্সের দরজাটা আবার লাগিয়ে দিয়ে এসে একটা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠল। ঠেলা দিতেই খুলে গেল একটা দরজা। নাকে এসে লাগল ফুলের সুবাস। বাল্কহেড ডোর দিয়ে মাথা বের করল রোদের মধ্যে।
পেছনে তাকাতে চোখে পড়ল মরগানদের প্রাসাদটা। ওর দুই পাশেই ফুলের বাগান। সামনে খোয়া বিছানো রাস্তা। চলে গেছে ওটা গেস্ট কোয়ার্টার পর্যন্ত।
এক চিলতে হাসি ফুটল মুসার ঠোঁটে। লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে। প্রায় দৌড়ে চলল প্রাসাদের দিকে। বসার ঘরের একটা জানালার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় কানে এল ডায়নার কণ্ঠ, একটা কথা বলি, শোনো, সিকিউরিটি অফিসার হয়ে…
মাথা তুলে দেখল মুসা, কাউচের কিনারে সোজা হয়ে বসে আছে কিশোর। অস্বস্তি বোধ করছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে হাত রাখল ডায়না।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। চোখ পড়ল জানালার দিকে। মুসা! ওখানে কি করছো?
বিরক্ত করলাম না তো? মুচকি হেসে বলল মুসা।
না না, এসো, ভেতরে এসো।
ঘুরে এসে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল মুসা।
ছিলে কোথায় এতক্ষণ? সেই কখন থেকে ভাবছি আসবে, আসবে…
কোথায় ছিলাম, চলো, দেখাব। ডায়নার দিকে তাকাল মুসা। ডায়না, টর্চ আছে?
আছে। লাগবে?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
তাড়াতাড়ি টর্চ আনতে চলে গেল ডায়না। ফিরে এল বড় একটা টর্চ নিয়ে।
এসো আমার সঙ্গে, কিশোরকে বলে পারলারের দিকে এগোল মুসা। কিশোর আর ডায়না তার পিছে পিছে চলল।
বুককেসের কাছে ফোকরটা দেখে হা হয়ে গেল ডায়নার মুখ।
নিচে একটা ঘর আছে। ফোকর দিয়ে ভেতরে আলো ফেলল মুসা। বেশি নিচে না। লাফ দিলেই নামা যায়। সিঁড়ি থাকলে আর লাফানোর দরকার পড়ত না।
ফোকরের মুখে দাঁড়িয়ে ঘরের ভেতরটা আলো ফেলে দেখল সে। একপাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে একটা লোহার মই।
সব বুঝলাম, বলল মুসা। এই ঘর থেকে একটা সুড়ঙ্গ চলে গেছে স্টোর রূমে। সার্কিট ব্রেকার আছে ওখানে। ডায়নাকে যে খুন করতে চেয়েছে, সুড়ঙ্গ ধরে উঠে এসেছে এই ঘরে। তারপর মই বেয়ে উঠে ঠেলে ফেলে দিয়েছে মূর্তিটা।
আশ্চর্য! বিড়বিড় করল ডায়না।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দুজন নয়, একজনেই করেছে কাজটা।
হ্যাঁ, মুসাও একমত। আস্ত শয়তান। প্রথমে আলো নিভিয়েছে। তারপর সুড়ঙ্গ দিয়ে দৌড়ে চলে এসেছে এই ঘরে, মই বেয়ে উঠেছে, বুককেসটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে মূর্তিটা ফেলেছে, তারপর আবার বুককেসটা আগের জায়গায় সরিয়ে রেখেছে। নেমে গিয়ে সুইচ অন করে আলো জ্বেলে দিয়েছে।
তার মানে এমন একজন লোক কাজটা করেছে, এই বাড়ির সমস্ত গলিঘুপচি যার চেনা…
এবং অন্ধকারেও যে কাজ সারতে পারে, কিশোরের কথার পিঠে বলল মুসা। ডায়নার দিকে ফিরল। বুককেসটা যে আসলে দরজা, জানেন আপনি?
হাত নাড়ল ডায়না। জানলে কি আর বলতাম না? মূর্তিটা পড়ার পরপরই আগে ওটা সরিয়ে দেখতাম।
তা ঠিক।
এ সব ভাল লাগছে না আমার, শিউরে উঠল ডায়না। গোপন দরজা, গোপন সুড়ঙ্গ-নাহ, একেবারে ভূতের বাড়ি মনে হচ্ছে! কালই দেয়াল তুলে ওই ফোকর বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি। যথেষ্ট হয়েছে…
ডায়নার হাত ধরল কিশোর। এত ভয়ের কিছুই নেই। যেভাবে আছে থাকুক। সতর্ক করার দরকার নেই। ভুল করে বসতে পারে লোকটা। আর তাতে সুত্র পেয়ে যাব আমরা।
ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ। মুখের কাছে হাত তুলল সে। হাই মাসছে।
আরও বিশ্রাম দরকার আপনার, কিশোর বলল। ঘুমানগে। আমাদের কাজ কালও করতে পারব।
মাথা ঝাঁকাল ডায়না। হ্যাঁ, আর দাঁড়াতে পারছি না আমি। কটেজে চলে যাও। সকালে দেখা হবে।
দোতলায় চলে গেল ডায়না। নিচতলার জানালাগুলো ভালমত বন্ধ করল দুই গোয়েন্দা মিলে। বেরিয়ে এসে ঘরে ঢোকার সমস্ত দরজা আটকে তালা লাগিয়ে দিল। তারপর ওদের ব্যাগ বের করল পিকআপ থেকে।
কটেজের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুসা বলল, কার কাজ, আন্দাজ করতে পারছি।
জুভেনার আর ডক্টর নরিয়েমাকে সন্দেহ থেকে বাদ দেয়া যায়। ঘটনাটা ঘটার সময় পারলারেই ছিল দুজনে।
দাঁড়িয়ে গেল মুসা। ওই দেখো।
কি দেখব? একটা রাস্তা, মাথা চুলকাল কিশোর। খোয়া বিছানো। কি বলতে চাও?
পার্টি শেষে এই পথ দিয়ে কাকে আসতে দেখেছিলাম?
এনুডা! বার্ব এনুডা! তাই তো! এ পথে এসে সহজেই স্টোর রূমে ঢুকে মেইন সুইচ অফ করে দিতে পারে!
ঠিক। জুভেনার কিংবা নরিয়েমার হয়েও কাজটা করতে পারে সে। মুসার দিকে তাকাল কিশোর। ভাবছি, কাল একবার গিয়ে দেখা করে আসব এনুডার সঙ্গে।
*
পঁচাশি ডিগ্রি।
চোখ ডলল মুসা। আউটডোর থারমোমিটারের রীডিং বিশ্বাস করতে পারছে না। বাপরে বাপ! বলল সে। সকাল বেলাও তো এত ছিল না! পুড়ে যাব আজকে!।
তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে ডায়নাকে খুঁজতে চলল দুই গোয়েন্দা। দেখল, কাপড় পরে বসে আছে ডায়না, ওদের জন্যেই। গুড মনিং, টেনে টেনে সুর করে বলল সে, তারমানে মেজাজ ভাল। আমিই যাচ্ছিলাম সাঁতার কাটতে যাবে কিনা তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে।
সাঁতার? মুসা বলল। পোশাক তো…
আছে, অনেক। কটেজের চেঞ্জিং রূমে খুঁজলেই পেয়ে যাবে। মেহমানদের জন্যে এক্সট্রা বেদিং সুট রেখে দেয়া হয়েছে।