সর্বনাশ! কিশোরের হাত থেকে ছোঁ মেরে শিশিটা কেড়ে নিলেন নরিয়েমা। আ-আ…আমি এটা কি করছিলাম!
আর্সেনিকের বোতল কেন এখানে? জানতে চাইল কিশোর।
সর্বনাশ! কি করছিলাম আমি! সর্বনাশ! কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না যেন নরিয়েমা। জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। কতবার ভেবেছি, কোন দিন এ রকম কিছু ঘটে যাবে! তবু সাবধান হলাম না। আজকে তো দিয়েছিলাম শেষ করে! ওষুধের দোকান থেকে আমিই কিনে আনি ওগুলো, পানিতে মিশিয়ে জমিতে ছিটাই আগাছা মারার জন্যে। অন্যান্য কেমিক্যাল আর ওষুধের সঙ্গে এখানেই রাখি। উচিত হয়নি, একেবারেই উচিত হয়নি। এই পোড়া চোখেও আজকাল আর ভাল দেখি না ছাই!…ডায়না, তোর কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি, মা!
তো-তোমার কোন দোষ নেই খালা, পানিতে ভরে গেছে ডায়নার চোখ। আমার কপাল! তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে কোনও একটা শক্তি, বাধা দেয়ার ক্ষমতাই ছিল না তোমার! জাস্ট করে ফেললে কাজটা!
কি বলতে চাস?
বোরজিয়া ড্যাগারের অভিশাপ! তোমার ওপর ভর করেছিল! চেঁচিয়ে উঠল ডায়না, হতাশায় ভরা কণ্ঠ, শেষ হয়ে গেছি আমি! একবার যখন ছুঁয়ে ফেলেছি, আর কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে! কেউ না! কোথাও গিয়ে আর বাঁচতে পারব
কিছুই হবে না, অভয় দেয়ার চেষ্টা করল কিশোর। সাধারণ দুর্ঘটনা এগুলো। অভিশাপ বলে কিছু নেই।
ও ঠিকই বলেছে, ডায়না, নরিয়েমা বললেন। ভুলটা আমারই। আরও সাবধান হব। এখন ঘুমাও। ঠিক হয়ে যাবে।
মাথার নিচে বালিশটা ঠিকঠাক করে দিলেন তিনি। ঘুমাও। আমি আর ডিন রইলাম, কোন ভয় নেই। এখানে কিশোরদের না থাকলেও চলবে।
পরিশ্রমে যতটা না তার চেয়ে বেশি ভয়ে কাহিল হয়েছে ডায়না। চোখের পাতায় কাঁপন জাগল। মুদে এল আপনাআপনি। ডিন আর নরিয়েমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, নিঃশব্দে অফিস থেকে বেরিয়ে এল কিশোর, মুসা আর রবিন।
বুড়িটাকে এক বিন্দু বিশ্বাস করি না আমি, হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন। বলছে ভুল হয়েছে। কি করে হলো? সব সময় কেমিক্যাল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে যে, তার এ রকম ভুল হয় কি করে?
কি জানি, গাল চুলকাল মুসা, ভুল সব মানুষেরই হতে পারে। যে রকম নার্ভাস হয়ে পড়ল, তাতে তো মনে হলো সত্যিই অ্যাক্সিডেন্ট। আসলে কি দিচ্ছে খেয়ালই করেনি।
আমিও মানতে পারছি না ব্যাপারটা, যোগ করল কিশোর।
*
চল্লিশ মাইল গতিতে বিপজ্জনক মোড় নিল পিকআপ।
করছে কি বলো তো! গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর আত্মহত্যা করতে চায় নাকি।
ক্লিফসাইড রোড ধরে ছুটছে দুটো গাড়ি। আগেরটা নীল কভারটিবল, পেছনেরটা সবুজ পিকআপ। আগের গাড়িটার খোলা ছাত। ড্রাইভারের সীটে বসা মেয়েটার লাল চুল লম্বা হয়ে উড়ছে বাতাসে।
ওটা ওর দুই নম্বর গাড়ি, মুসা বলল। আর কটা আছে এ রকম?
আছে নিশ্চয় অনেকগুলো টাকার তো অভাব নেই। তবে তৃতীয় গাড়িটা একটা মডেল টী হলে খুশি হতাম। বিশ মাইলের বেশি স্পীড তুলতে পারত না। আসলে, ওকে বাড়ি পৌঁছে দেয়া উচিত ছিল আমাদের।
বললাম তো কত করে, রাজি হলো না।
ক্লাব থেকে বাড়ি ফিরছে ডায়না। কমলা রঙের রোদ পড়েছে বনের গাছে গাছে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। মরগানদের সীমানায় ঢুকে পড়ল নীল গাড়িটা। খোয়া বিছানো পথে ধুলোর ঝড় তুলে এগিয়ে গিয়ে স্কিড করে থামল। একটা গ্যারেজের সামনে। চারটে গাড়ি রাখার জায়গা আছে ওটাতে।
পিকআপের গায়ে হালকা ধুলো জমেছে। রঙ কালো বলে ধুলোগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বেশি। উইন্ডশীল্ড ওয়াইপারটা চালু করে দিয়েছে মুসা, কাঁচ থেকে ধুলো মোছার জন্যে।
ডিরেক্টরি ঘেঁটে ইচ্ছে করলে ডায়নার ফোন নম্বরটা বের করে নিতে পারবে রবিন, তাই না? কিশোর বলল।
পারবে। আমাদেরকে খুঁজে বের করাও কঠিন হবে না। মরগান ম্যানশনটা কোথায়, ডিরেক্টরি খুললেই জেনে যাবে।
তুমিই কিন্তু ডায়নার বডিগার্ড সাজতে রাজি করালে আমাকে, আরেক দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
আমি মুসা অবাক। এই, কি বলছ…
ওয়েলকাম! ওয়েলকাম! গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল ডায়না।
ডায়না…
কিশোরকে কুথা শেষ করতে দিল না মেয়েটা। ঘুম থেকে উঠে খুব ভাল লাগছে। কটেজে গিয়ে ঘর দেখে এসো। আমাকে আসতে হবে?
মাথা নাড়ল দুজনেই।
আর কিছু বলল না ডায়না। দ্রুত রওনা হয়ে গেল ম্যানশনের দিকে।
জড়তার লেশও নেই, পিকআপের দরজা খুলতে বলল কিশোর।
গাড়ি থেকে নামল দুজনে। বাড়ির আশপাশে ঘুরল খানিকক্ষণ। তারপর চলল ডায়না কি করছে দেখার জন্যে। কটেজে পরেও যাওয়া যাবে, ভাবল। বসার ঘরে পাওয়া গেল ডায়নাকে। একটা টেলিফোন অ্যানসারিং মেশিনের ক্যাসেট রিওয়াইনড করছে।
খুব ভাল লাগে আমার এ সব যন্ত্র, ডায়না বলল। সেক্রেটারির চেয়ে অনেক ভাল। ভুল করে না, ছুটি চায় না, খিদে পেয়েছে বলে বেরিয়ে যায় না। যখনই দরকার, পেয়ে যাবে। তার খরচও অনেক কম
প্লে টিপতেই চালু হয়ে গেল মেসেজঃ হালো, মিস মরগান। জুভেনার বলছি। আপনার দাদার দলিলটা খুঁজে পেয়েছে আমাদের কর্চারী। অনেকগুলো ফাইলের নিচে চাপা পড়েছিল। কাল নাগাদ হাতে পেয়ে যাব। মঙ্গলবারে দয়া করে বাড়িতে থাকবেন, জিনিসগুলো ফেরত আনতে যাব। আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, মূর্তিটার দামও আপনাকেই শোধ করতে হবে। গ্রীক মূর্তিটার কথা বলছি। ওটা ভাঙার জন্য আপনাকেই দায়ী করব আমি। আপনিই জোর করে জিনিসটা নিয়ে গেছেন মিউজিয়ম থেকে। ভাল থাকুন।