আশ্বস্ত হয়ে এক এক করে সরে যেতে লাগল সদস্যরা।
ভিড় কমে গেলে কিশোর বলল, থ্যাংকস, মিস্টার রিম্যান। রবিনের দিকে ফিরল। তুমি ওখানে কি করছিলে?
জিজ্ঞেস করেছি সে-কথা, জবাবটা দিল রিম্যান। লুকিয়ে মিস মরগানের ওপর নজর রাখছিল। বলল, বনের ভেতর নাকি কুড়িয়ে পেয়েছে রিভলভারটা। আপাতত ছেড়ে দিচ্ছি, তবে শহর ছেড়ে যেতে পারবে না। তোমাকে আমাদের দরকার হতে পারে। রিভলভারটা নিয়ে যাচ্ছি, পরীক্ষা করতে হবে। রবিনের চোখে চোখে তাকাল অফিসার, মিথ্যে বলে থাকলে বিপদে পড়বে বলে দিচ্ছি।
নিজেদের গাড়ির দিকে এগোল পুলিসের। ডায়নার দিকে বুক কিশোর। আমাদের পরিচয় তো জানলেন। বুঝতেই পারছেন এখন, আপনাকে সত্যিই সাহায্য করতে চাইছি। কেউ লেগেছে আপনার পেছনে, খুন করতে চায়।
বাধা দিয়ে বলল ডায়না, আমি আগেই আন্দাজ করেছি, এ ধরনেরই কোন কাজ করো তোমরা। আচমকা কিশোরের হাত চেপে ধরল, আমাকে সত্যিই সাহায্য করবে।
গাল চুলকাল কিশোর। করব। আর সেলে আপনাদের বাড়িতে আমাদের থাকা দরকার। কোনও একটা ছুতোয় যদি
ছুতো করা লাগবে না। খুব সহজেই ব্যবস্থা করা যায়। আমার সিকিউরিটি অফিসার হয়ে যাও। জুনিয়র সিকিউরিটি। চাইলে বেতনও দেব। আমার নিরাপত্তা দরকার, বুঝতেই পারছ। থাকতেও পারবে, তদন্তও করতে পারবে।
এখানে এ ভাবে বসে থাকলে তো হবে না, তাড়া দিলেন নরিয়েমা। আমার অফিসে নিয়ে যাওয়া দরকার তোমাকে। কিছু ওষুধপত্র তো লাগবে।
মুসা, ডিন আর নরিয়েমা সাহায্য করলেন ডায়নাকে। ধরে ধরে তাকে নিয়ে চলল ক্লাবহাউসের দিকে। কয়েক গজ পেছনে রইল কিশোর আর রবিন। কিশোর জিজ্ঞেস করল, বনের মধ্যে কি করছিলে, বলো তো?
রবিন বলল, বাড়ি যেতেই মা বলল, কাজটা করা লাগবে না। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। ইয়ার্ডে গিয়ে দেখলাম, তোমরা চলে গেছ। মেরিচাচী বললেন, পুলিস ফোন করেছিল। ডায়না নামে কে নাকি গুলি খেয়েছে। ঠিকানা বলতে পারলেন না। টেবিলে ফেলে রাখা পেপারের দিকে চোখ পড়ল। দেখি, তাতে লেখা, আজ এই ক্লাবটাতে আসবে ডায়না, সাক্ষাৎকার দেবে। বুঝলাম, অঘটনটা এখানেই ঘটেছে। একটা ট্যাক্সি নিয়ে ছুটলাম। গার্ডের ভেতরে ঢুকতে দিল না। ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে ঢুকে পড়লাম বনের মধ্যে। ভাবলাম, চুরি করে ঢুকব।
দম নেয়ার জন্যে থামল রবিন।
তারপর? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
বনে ঢোকাটাও সহজ হলো না। বেড়া ডিঙিয়ে বনে ঢুকলাম। ক্লাবহাউসটাকে খুঁজতে লাগলাম, এই সময় কানে এল ঘোড়র পায়ের শব্দ। এগিয়ে দেখি, ডায়না ঘোড়ায় চড়েছে। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, হঠাৎ গুলির শব্দ হলো। লাফ দিয়ে পেছনের পায়ের ওপর খাড়া হয়ে গেল ঘোড়াটা। মাটিতে পড়ে গেল ডায়না। বুঝলাম, গুলি তার গায়ে লাগেনি। তাই সেদিকে না গিয়ে গেলাম যেদিক থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে সেদিকে। কে গুলি করেছে দেখলাম না, তবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম রিভলভারটা।
এনুডারটার মতই দেখাত, আনমনে বলল কিশোর।
দ্রুত হেঁটে অন্যদের কাছে চলে এল দুজনে। হাত তুলে বাগানের একটা জায়গা দেখাচ্ছেন ডক্টর নরিয়েমা। বেশ খানিকটা জায়গার মাটি কোপানো। কাছে পড়ে আছে হোস পাইপ, নানা রকমের বোতল, বীজের প্যাকেট। কোপানো জায়গায় ঘাস ছিল, কিছু নষ্ট হয়েছে কোপানোয় বাকিগুলো ওকেমন জ্বলা জ্বলা।
আর্সেনিকের কাজ, বুঝিয়ে বললেন ডক্টর। ঘাস সহজে রে না। কুপিয়ে নষ্ট করে ফেললেও আবার ওঠে। তাই মাটি যাবে আর্সেনিক ঢেলে দিয়েছিলাম। মরেছে এখন, আর উঠবে না। ভাবছি, এ বছর ওখানে টমেটো লাগাব।
ভাল। গুভিয়ে উঠল ডায়না। বডদ খারাপ লাগছে, খালা! শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।
ক্লাবহাউসের দিকে এগিয়ে চলল ওরা। নিচতলায় উক্টরের অফিস। সুন্দর করে সাজানো গোছানো। একটা সিংক, একটা চেয়ার, একটা ডেস্ক, একটা কট, আর কয়েকটা তাক বোঝাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
কটে শুয়ে পড়ল ডায়না। গুঙিয়ে উঠল আবার। উফ, মাথার ব্যথায় মরে গেলাম!
দাঁড়াও, এখুনি সব ঠিক হয়ে যাবে, কোমল গলায় বললেন নরিয়েমা। দুটো ব্যথার বড়ি খেলেই, ব্যস…।
তাকগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। একটা শিশি পাড়লেন। চুপ করে থাকো, ডায়নার দিকে তাকালেন না তিনি, যা করার আমি করছি। ডিন, এক গেলাস পানি।
ঘরটায় চোখ বোলাচ্ছে রবিন।
বড় একটা গেলাস ভর্তি করছে ডিন।
ডায়নার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে আরামে শোয়ার ব্যবস্থা করছে মুসা।
আর পুরো ব্যাপারটাই কেন যেন অপছন্দ হচ্ছে কিশোরের। চেহারায় যেন শ্রাবণের কালো মেঘ জমছে। তাকিয়ে আছে ডায়নার দিকে।
বড়িগুলো হাতে নিয়েছে ডায়না। মুখে তুলতে যাবে। হঠাৎ কি ভেবে তাক থেকে শিশিটা পাড়ল কিশোর। লেভেলটা পড়ল। বড় বড় হয়ে গেল চোখ, যেন ছিটকে বেরিয়ে আসবে।
শিশির গায়ে লেখা রয়েছে: আর্সেনিক!
০৮.
সাবধান করে থামানোর সময় নেই। লাফ দিয়ে এসে ডায়নার হাতে থাবা মারল কিশোর। মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল বড়িগুলো।
চিৎকার দিয়ে উঠল ডায়না।
কিশোরের কলার চেপে ধরল একটা হাত। ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল ডিন, এটা কি করলে?
ওর প্রাণ বাঁচালাম। আর্সেনিকের বোতলটা তুলে ধরল কিশোর।
নীরব হয়ে গেল ঘরটা।
ককিয়ে উঠল ডায়না। কটে বিছানো চাদরের মতই সাদা হয়ে গেছে মুখ।