বাইরে থেকে মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল, কিশোর, কিশোর!
তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে এল কিশোর ও মুসা।
তোর ফোন, মেরিচাচী বললেন। থানা থেকে করেছে। পল নিউম্যান।
দৌড় দিল দুই গোয়েন্দা।
রান্নাঘরে এসে ঢুকল।
রিসিভার তুলে কানে ঠেকাল কিশোর। হালো?
কে, কিশোর? পল নিউম্যান বলল। খবর শুনেছ?
কিসের খবর?
ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।
ডায়না মরগান না তো? উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ। গুলি করা হয়েছে। ভাবলাম, খবরটা তোমাকে জানানো দরকার।
.
০৭.
ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। পিকআপে উঠল। টায়ারের ওপর অত্যাচার চালিয়ে গাড়ি ঘোরাল রবিন। ছুটল পুবমুখো।
রাস্তায় সাইনবোর্ড রয়েছে: এনটারিং ক্লিফসাইড হাইটস।
তারপর থেকে নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে এলাকার চেহারা। শহরতলির ছিমছাম সুন্দর বাড়িগুলোর পরেই শুরু হয়েছে ঘন বন। রাস্তায় তীক্ষ্ণ মোড় রয়েছে, ফলে সাবধানে গাড়ি চালাতে হচ্ছে মুসাকে। তবে কিছুতেই গতি কমাল সে।
বিরক্ত কণ্ঠে বলল, আলসেদের জন্যে তৈরি করেছে এই রোড! এ ভাবে চালানো যায়?
আরও খানিকদূর এগিয়ে আরেকটা সাইনবোর্ড দেখা গেল। তাতে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা: সি সি সি। তীর চিহ্ন এঁকে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে কোনদিকে যেতে হবে। বাঁয়ের খোয়া বিছানো পথটায় গাড়ি নামাল মুসা।
কায়দা-টায়দা তো বেশ ভালই করেছে।
করবে না? কিশোর বলল। এত দামী ক্লাব।
রাস্তার মাথায় বন কেটে সাফ করা হয়েছে। ঘোরানো একটা ড্রাইভওয়ে। হাসিখুশি, বাদামী ইউনিফর্ম পরা একজন লোক ওদের পথ আটকাল।
ঘ্যাচ করে ব্রেক কষল মুসা। জানালার পাশে এসে দাঁড়াল লোকটা। কার কাছে…?
ডায়না মরগান, বলেই ব্রেক ছেড়ে দিল মুসা। লাফিয়ে সরে গেল গার্ড।
ক্লাবহাউসের সামনে এসে আবার জোরে ব্রেক কষল মুসা। পাথরের তৈরি তিনতলা একটা বাড়ি। চারপাশে সুন্দর ফুলের বাগান। দুদিকের দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামল দুজনে। পেছনে শুনতে পেল গার্ডের চিৎকার, এই শুনুন, শুনে যান!
কিন্তু কে শোনে কার কথা। সামনে কথা শোনা যাচ্ছে। বাড়ির পাশ ঘুরে এল দুজনে। বেশ বড় ছড়ানো একটা চতুর, ঘাসে ঢাকা, চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে বন। চত্বর না বলে মাঠই বলা যায় ওটাকে। মাঠের মাঝখানে অনেক মানুষ, কয়েকজন পুলিস অফিসারও আছে। ওদের কাছ থেকে দূরে একটা অস্থির ঘোড়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে জিনস পরা একজন লোক। আর ভিড়ের মাঝে সেই রিপোর্টারকে দেখা গেল, সোসাইটি কলামিস্ট, ঘুরে ঘুরে লোকের কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করছে।
বার বার এক্সকিউজ মি বলতে বলতে লোকজনকে প্রায় ঠেলে সরিয়ে ভিড়ের মাঝখানে এসে ঢুকল কিশোর-মুসা। ডায়নাকে শুয়ে থাকতে দেখল ঘাসের ওপর। ফোপাচ্ছে। পাশে বসে আছেন ডক্টর নরিয়েমা। ভেজা একটা কাপড় দিয়ে তার কপালের রক্ত মুছে দিচ্ছে ডিন।
কেমন আছে ও? জিজ্ঞেস করল মুসা।
মুখও তুলল না ডিন, কথাও বলল না। তবে ডক্টর হাসলেন। অ, তোমরা! তোমরাও যে মেম্বার, জানতাম না। ঘোড়া থেকে পড়ে গেছে ডায়না। ভাগ্য ভাল, ব্যথা তেমন পায়নি।
পায়নি, পেতে পারত, থমথমে হয়ে আছে ডিনের মুখ। মরেও যেতে পারত। খুন করার চেষ্টা করেছে কেউ!
কি হয়েছে বলতে পারব না, কাঁপা গলায় বলল ডায়না। ভীষণ ভয় পেয়েছে। সাক্ষাৎকার দেয়ার পর থেকেই খারাপ লাগছিল। ভাবলাম, ঘোড়ায় চড়ে খানিকক্ষণ ঘুরলে ঠিক হয়ে যাবে। ঘুরছি, এই সময় শুনলাম গুলির শব্দ।
লেগেছে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
না। ঘোড়াটা লাফিয়ে উঠল। পড়ে গেলাম।
কে করেছে দেখেছেন? মুসার প্রশ্ন।
না, পুলিশকে বললাম…
দূরে চিৎকার করে উঠল কেউ। ঝট করে বনের দিকে ঘুরে গেল সব কটা চোখ। তিনজন পুলিশ অফিসার, দুজন লোক, আর একটা ছেলে বেরিয়ে এসেছে। একজন সিভিলিয়ানের হাতে সিলভারপ্লেটেড একটা রিভলভার। দুজন অফিসার জোর করে টেনে আনছে রবিনকে।
আরি! রবিন! মুসা অবাক।
অবাক কিশোরও হয়েছে। বিশ্বাসই করতে পারছে না। ও কি করে এল!
হাতকড়া লাগিয়েছেন কেন? চিৎকার করছে রবিন। খুলুন, খুলুন বলছি! আমি কি করলাম?
অনেক কিছুই করেছ, একজন অফিসার বলল। বেআইনী ভাবে ঢুকেছ বনের ভেতর। এটা প্রাইভেট প্রপার্টি। হাতে রিভলভার। গুলি ছোঁড়া হয়েছে ওটা থেকে। অ্যারেস্ট করার জন্যে যথেষ্ট নয় কি?
কিশোর-মুসাকে দেখে উজ্জ্বল হলো রবিনের চোখ। কিশোর, ওদেরকে বলো না, আমি কে!
একজন অফিসার চিনে ফেলল কিশোরকে। বাহ্, গন্ধ পেয়ে গেছ! রবিনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা তোমাদের দলের নাকি?
হ্যাঁ, কিশোর বলল।
অফিসার বলল, আমাদেরকে ও অবশ্য তোমাদের কথা বলেনি। বলেছে, একটা জুনিয়র ডিটেকটিভ টীমের মেম্বার।
ঝাঁকুনি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল রবিন। এই সময় ঘটল আরেক ঘটনা। ভিড় ঠেলে ভেতরে এসে ঢুকল দুজন গার্ড, ওদের মাঝে সেই লোকটাও রয়েছে, যে কিশোরদের ভ্যান থামিয়েছিল। দুজনকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, যা, এই তো! এদের কথাই বলেছি। পুলিস অফিসারদেরকে বলল, না বলে জোর করে ঢুকে পড়েছে। ওদের আটকান।
গুঞ্জন করে উঠল লোকেরা। জোরে সবাইকে শুনিয়ে বলল অফিসার রিম্যান, আপনারা অস্থির হবেন না। এরা গোয়েন্দা। এদের একজনকে আমি ভাল করেই চিনি। মিস মরগানও ভালই আছেন।