হ্যাঁ, হাসল জুভেনার।
তারমানে ঘুস দিচ্ছেন।
ঘুস ভাবছ কেন? বরং ভাবো না, তোমরা একটা কাজ করে দিয়ে টাকাটা কামিয়ে নিচ্ছ।
চেয়ারে হেলান দিল দুজনেই। কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। কি বুঝলে?
যা বোঝার বুঝলাম, কিশোর বলল।
অস্বস্তিতে পড়ে গেল জুভেনার। ওদের কথাবার্তার মানে বুঝতে পারছে না। দেখো, দশ হাজার ডলার অনেক টাকা, অনেক কিছু কিনতে পারবে তোমরা। এই বয়েসে কত কিছুই তো কিনতে ইচ্ছে করে। দুজনের মুখের দিকে তাকাল একবার করে। তোমাদের বয়েসে আমি হলে এক লাফে রাজি হয়ে যেতাম।
কিন্তু আমরা ওরকম লাফাতে রাজি নই, জবাব দিয়ে দিল কিশোর।
বুঝেছি, আরও বেশি চাও! রেগে গেল জুভেনার। থাবা মারল ডেস্কে। এত্তো লোভ! ওই মেয়েটার মতই চামার! সব এক! কি ভেবেছ এটাকে? ব্যাংক…
আপনি ভুল করছেন, আর চুপ থাকতে পারল না মুসা। দশ হাজার অনেক টাকা। কিন্তু ঘুস দিয়ে কিনতে পারবেন না আমাদের। মানুষের জন্যে কাজ আমরা করি, তবে অন্য ভাবে।
কোন্ ভাবে শুনি?
আর যে ভাবেই হোক, বেআইনী ভাবে নয়।
কোনটাকে বেআইনী বলছ? মুসার দিকে আঙুল তুলে বাতাসে খোঁচা মারল জুভেনার। ডায়না যে কাজটা করল, সেটা বেআইনী নয়?
আপনার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি আমরা, মিস্টার জুভেনার, কিশোর বলল। বুঝি, কালেকশনগুলোর কোন দরকার নেই ডায়নার। কিন্তু মিউজিয়ামের আছে। আমি সত্যিই চাই, দলিলটা আপনি পেয়ে যান। আর যদি না পান, আদালতে গিয়ে নালিশ করুন…
স্প্রিঙের মত লাফিয়ে উঠল জুভেনার। বেরোও! দরজা দেখাল সে। ভাগো! আর যেন এখানে না দেখি! আমাকে উপদেশ দিতে আসো! মাসের পর মাস ধরে শুধু আদালতে যেতে থাকি আর আসতে থাকি আমি। আর ওদিকে সব ভেঙেচুরে জিনিসগুলোর সর্বনাশ করে দিক মাথামোটা মেয়েটা। পাগল!
বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা।
পেছনে এত জোরে দরজা বন্ধ করল জুভেনার, শব্দ শুনে মনে হলো বন্দুকের গুলি ফাটল।
*
এসে কোন লাভ হলো না, তাই না? মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে বলল মুসা। একসারি নিউজপেপার ভেনডিং মেশিনের পাশ দিয়ে চলেছে। ঘুস দিতে চায় আমাদেরকে! মরিয়া হয়ে গেছে লোকটা!
কয়েকটা খুচরো পয়সা মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়ে একটা রকি বীচ টাইমস-এর কপি বের করে নিল কিশোর। লোকটা ছ্যাচড়া!
কিন্তু খুন পর্যন্ত কি এগোবে? এত প্রিয় যে সব জিনিস, তারই একটা ভেঙে ফেলবে খুন করার জন্যে? ভাঙা মূর্তিটাকে দেখে তার মুখের কি অবস্থা হয়েছিল লক্ষ করেছ?
সেটা অভিনয়ও হতে পারে। নিজেকে সন্দেহমুক্ত রাখার জন্যে করে থাকতে পারে কাজটা। ডায়নাকে আতঙ্কিত করে দিয়ে জিনিসগুলো ফেরত নেয়ার চেষ্টা হতে পারে। আর যদি মৃর্তি গায়ে পড়ে ডায়না মরেই যেত…
…আরও সহজ হয়ে যেত কাজটা। অনেকটা আপনা থেকেই জিনিসগুলো আবার ফিরে যেত মিউজিয়ামে।
ঠিক। চল বাড়ি যাই। কম্পিউটারের ক্রাইম ডাটা বেজ দেখি জুভেনারের কথা কি বলে। বেরিয়েও যেতে পারে চমকপ্রদ কোন তথ্য।
পিকআপে উঠল দুজনে।
পার্কিং লট থেকে গাড়ি বের করে আনল মুসা।
সীটে হেলান দিয়ে খবরের কাগজটা খুলল কিশোর। হেডলাইনের দিকে তাকিয়েই উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ। এই, শোনো, শোনো! লিখেছে: অভিশাপ, না কাকতালীয় ঘটনা? অভিশপ্ত বোরজিয়া ড্যাগার ছুঁয়ে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছেন মরগানদের উত্তরাধিকারী?
রসাল গল্প লিখেছে মনে হয়। পড়ো তো শুনি।
গতরাতে ক্লিফসাইড হাইটসের মরগান ম্যানশনে এক সাংঘাতিক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। তখন রাত প্রায় এগোরোটা। আকাশে ভরা চাঁদ, ঘরের ভেতরে জ্যোৎস্না এসে পড়েছে। যারা উপস্থিত ছিল ওখানে তখন, কেউ ভুলতে পারবে না…
বাহু, গরুও পেয়েছে, টিটকারির সুরে বলল মুসা, দুধও ভালই দুইয়েছে।
হ্যাঁ। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা লিখেছে এরপর। শেষটুকু পড়ি। কিছু মেহমান তখন বেরিয়ে গেছে। ভীষণ ভয় পেয়েছে ওরা। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে, অভিশাপের কবল থেকে মুক্তি নেই মিস ডায়না মরগানের। মিস মরগানকেও বলতে শোনা গেছে-বাকি জীবনটা কি আমি এই অভিশাপ নিয়েই কাটাব? টাইমসকে কথা দিয়েছেন মিস মরগান, আজ ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে একটা সাক্ষাৎকার দেবেন…।
উচিত হবে না, আবার বাধা দিল মুসা। পত্রিকাওলাদের কাছ থেকে দূরে থাকা উহত ৩র, যেকথা বোঝাতে হবে। রিপোটাররা সারাক্ষণ লেগে থাকলে তদন্ত করতে অসুবিধে হবে আমাদের।
হ্যাঁ। বোয়জিয়া ড্যাগারেরও বিজ্ঞাপন হয়ে যাচ্ছে খুব বেশি। কে কখন আবার কোত্থেকে এর মালিকানা দাবি করতে চলে আসে কে জানে। ঝামেলা পাকাবে।
না-ও আসতে পারে। অভিশাপের ভয় আছে।
বাড়ি পৌঁছেই সোজা নিজেদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকে গেল দুই গোয়েন্দা।
কম্পিউটার নিয়ে বসল কিশোর। পাশে বসল মুসা।
জুভেনারের বিরুদ্ধে কিছুই বলল না কম্পিউটারের ডাটা বেজ।
মুসা বলল, বার্ব এনুডার কথা কি বলে, দেখো তো?
কিছুটা অবাক হয়েই পর্দার দিকে তাকিয়ে রইল দুজনে। জোরে জোরে তথ্যগুলো পড়ল মুসা, বিশ বছর আগে এক দোকান থেকে এক টিন মাছ চুরি করেছিল…এগারো বছর আগে চেঁচিয়ে সংলাপ বলে পড়শীদের শান্তি নষ্ট করেছিল…দুই বছর আগে, নো-পার্কিং জোন থেকে একটা লিমোজিন গাড়ি সরানোর সময় একজন টো-ট্রাকের অপারেটরকে মেরে বসেছিল।
নাহ, খুনীর সারিতে পড়ে না, মাথা নাড়ল কিশোর।