তা জরুরী তলব কেন? চেয়ারে বসতে বসতে বলল মুসা।
যাব এক জায়গায়।
কোথায়? আবার ডায়নার ওখানে?
নাহ, ভাবছি মিউজিয়ামে যাব
সরু হয়ে এল মুসার চোখের পাতা। কি দেখতে যাবে? অ, বুঝেছি। জুভেনারের সঙ্গে কথা বলতে। দেখো কিশোর, আমার ভাল্লাগছে না। কেস আমরা অনেক পাব ভবিষ্যতে। কিন্তু অভিশপ্ত ওই ছুরির কুদৃষ্টিতে না পড়লেই কি নয়?
অভিশপ্ত বলেই তো তদন্তটা আরও বেশি করে করব। দেখব, সত্যি সত্যি অভিশাপ বলে কিছু আছে কিনা।
*
মিনিট কয়েক পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
কিশোর আর মুসা ইয়ার্ডের একটা পিকআপে উঠল।
রবিন ওদের সঙ্গে যাবে না। সে বাড়ি যাবে। জরুরী কাজ আছে। সে গেটের দিকে এগোল।
এঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। পাশে বসা কিশোরের দিকে তাকাল। আগে কোথায় যাব?
রকি বীচ মিউজিয়াম।
গাড়িটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাত নেড়ে ওদের বিদায় জানাল রবিন।
*
মিউজিয়ামের কাছাকাছি এসে প্রথম যে জিনিসটা চোখে পড়ল ওদের, তা হলো পার্কিং লট প্রায় শূন্য।
রোববারে তো খোলাই থাকে, তাই না? মুসার প্রশ্ন।
থাকে। ঘড়ি দেখল কিশোর। এগারোটা তিরিশ। এখন লোকের কাজের সময়।
ভ্যান থামাল মুসা। গাড়ি থেকে নেমে মিউজিয়ামে ঢুকল দুজনে। টিকিট কেটে এসে ঢুকল মেইন একজিবিট রূমে।
ঢুকেই বুঝতে পারল জুভেনারের এতখানি মর্মপীড়ার কারণ। দেয়ালগুলো প্রায় শূন্য। বড় বড় ছবি ঝোলানো ছিল ওসব জায়গায়, দাগ দেখেই বোঝা যায়। অসংখ্য কাঁচের বাক্স খালি পড়ে রয়েছে। এক কোণে আরামে চেয়ারে বসে দিবান্দ্রিা দিচ্ছে মিউজিয়ামের দারোয়ান।
কবরও তো এর চেয়ে ভাল! ফিসফিসিয়ে বলল মুসা।
জিনিস নেই, কে আসবে পয়সা খরচ করে? মরগানদের কালেকশনগুলোই ছিল এই মিউজিয়ামের মেরুদণ্ড।
ওদের পেছনে হলওয়েতে পদশব্দ শোনা গেল।
বাড়ি চলে যাও, নিরো, বলে উঠল একটা পরিচিত কণ্ঠ।
চমকে জেগে গেল দারোয়ান।
বসে থেকে আর কি করবে। ভাবছি, বন্ধই করে দেব… কিশোর-মুসার ওপর চোখ পড়তে থেমে গেল কিউরেটর। আরি, দর্শক আছে দেখছি! অন্তত আজকের ইলেকট্রিক বিলের পয়সাটা পাওয়া গেল। কেন এসেছ তোমরা? মিউজিয়াম দেখতে? নাকি ডায়না পাঠিয়েছে। আবার কিছু নষ্ট করেছে?
মূর্তিটার জন্যে সত্যিই খারাপ লাগছে, মিস্টার জুভেনার, সহানুভূতি দেখিয়ে বলল কিশোর। আমরা এসেছি আসলে আপনার সঙ্গে দেখা করতেই।
আমার সঙ্গে দেখা করে আর কি হবে! চুপ হয়ে গেছে জুভেনার। একবার কিশোরের দিকে, আরেকবার মুসার দিকে তাকাচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করছে কিছু। অবশেষে হাত নাড়ল, এসো। বরং আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলি।
হল পেরিয়ে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ওরা। চৌকাঠের ওপরে সাদা পাস্টিকের ফলকে লেখা: অথরাইজড পার্সনস ওনলি।
ভেতরে মস্ত অফিস, ছয়টা ডেস্ক। ঘরের অন্য প্রান্তে ওদেরকে নিয়ে এল জুভেনার। আরেকটা দরজা পড়ল, পুরোটাই কাঁচের। তার ওপাশে কয়েকটা আলাদা আলাদা অফিস, প্রতি রূমে একজন করে বসার ব্যবস্থা।
নিজের অফিসে ঢুকল জুভেনার। কিশোররা ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিল। জানালার পর্দা টেনে দিল।
বসো। তা তোমাদের কথাটা আগে বলো। কি জানতে চাও?
প্রথমেই আপনার মিউজিয়ামটার কথা বলুন, অনুরোধের সুরে বলল কিশোর।
ডেস্কে কনুই রেখে ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকল জুভেনার। দেখো, সোজা করেই বলি। মিউজিয়ামের এখন সময় খুবই খারাপ। টেকে কিনা সন্দেহ। জিনিসগুলো ফেরত না পেলে লোকে দেখতে আসবে না। নেইই কিছু, কি দেখতে আসবে? লোক না এলে বিগড়ে বসবে কোম্পানি আর এজেন্সিগুলো, আমাদেরকে ফান্ড দিতে চাইবে না আর। কতবড় সর্বনাশ হয়ে যাবে ভাববা! আর এর সব কিছুর
মূলে ওই ডায়না মরগান। বেআইনী ভাবে জিনিসগুলো জোর করে নিয়ে গেছে। সে।
দলিলটা খুঁজে বের করতে বলেন আমাদেরকে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
না, চেয়ারে হেলান দিল জুভেনার। লোক লাগিয়ে দিয়েছি আমি। পাবে কিনা জানি না। আমার ভয় হচ্ছে, একেবারেই হারিয়ে গেছে ওটা, কিংবা নষ্ট হয়ে গেছে। ফেরত পাব না। চুপ করে থাকল এক মুহূর্ত। অন্য কথা ভাবছি আমি। তোমরা তো ডায়নার বন্ধু?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তবে পরিচয়টা নতুন হয়েছে।
নতুন হলেও তোমাদেরকে বেশ গুরুত্ব দেয় ডায়না, দেখেই বুঝেছি আমি। তোমাদেরকে একটা কাজ করে দেয়ার অনুরোধ করব আমি। ডেস্কের সবচেয়ে ওপরের ড্রয়ারটা খুলল কিউরেটর। মিউজিয়ামের একটা ইমারজেন্সী ফান্ড আছে। খুব অল্পই টাকা। কয়েক বছর ধরে তিল তিল করে জমানো হয়েছে। এতদিন ওটা থেকে খরচের দরকার পড়েনি কখনও। এই টাকাটা আমি তোমাদের দিয়ে দেব। বিনিময়ে তোমরা ডায়নাকে বোঝাবে কালেকশনগুলো আবার মিউজিয়ামকে ফেরত দিতে। কি করে বোঝাবে জানি না আমি, কিন্তু বোঝাবে।
ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করল সে। বেশ পুরু। মুখ খুলে উপুড় করল ডেস্কের ওপর। ঝরে পড়ল অনেকগুলো কড়কড়ে একশো ডলারের নোট।
দশ হাজার ডলার আছে এখানে। আমার কাজটা করে দাও। এগুলো সব তোমাদের হবে।
.
০৬.
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নোটগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল দুই গোয়েন্দা।
তারপর কথা বলল কিশোর, দশ হাজার ডলারের বিনিময়ে, আপনি বলছেন ডায়নার সঙ্গে কথা বলব আমরা। দরকার হলে তার বাড়িতে থাকব। একসঙ্গে বসে খাবার খাব। তাকে বোঝাব কালেকশনগুলো ফেরত দিতে।