আমাদের দেখল নাকি? মুসার প্রশ্ন।
বোঝা যাবে এখুনি।
বোঝা গেল। হঠাৎ বরফের মত জমে গেল তিন গোয়েন্দা।
ঠিক ওদের মাথার পেছনে ধরা একটা সিলভার-প্লেটেড রিভলভারের নল।
বেরিয়ে এসো, মোলায়েম গলায় আদেশ হলো। ছায়ার কাছ থেকে সরে গেল লোকটা, কিন্তু রিভলভার উদ্যতই রয়েছে। ট্রিগার ছুঁয়ে আছে আঙুল। বার্ব এনুডা।
.
০৫.
গুলি করার দরকার নেই, হাত তুলে ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে এল মুসা।
সাহস আছে তোমাদের, বলল এনুডা। তবে একটা উপদেশ মনে রাখবে। এ কথা যেন ডায়না না শোনে…
কে ওখানে? সিঁড়ির ওপর থেকে জিজ্ঞেস করল ডায়না। বার্ব, করছ কি? ওটা নামাও!
না, নামাব না! তোমার সব কথাই মানতে হবে নাকি?
ডায়নার পাশে এসে দাঁড়াল ডিন। এনুডার হাতে রিভলভার দেখে ভয় দেখা দিল চোখে। এই, সরাও, সরাও ওটা?
খবরদার! ওভাবে কথা বলবে না আমার সঙ্গে! ডায়না….
তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি, বার্ব, কোমল কণ্ঠে বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল ডায়না। হাত বাড়িয়ে দিল। দাও। নইলে আবার পুলিসে ধরে নিয়ে যাবে। এবার কিন্তু আর বাঁচাতে পারব না। বেআইনী ভাবে ঢুকে চুরির দায়ে হাজতে ঢোকাবে।
চুরি! চমকে গেল এডা। এটা তোমার আব্বা আমাকে দিয়েছেন, তুমি জানো। এখানে ফেলে গিয়েছিলাম। আমার জিনিস আমি নিতে এসেছি, একে কি চুরি বলে? হঠাৎ নাটকীয় ভাবে নষ্টটা নিজের মাথায় ঠেসে ধরল সে। থাক, আর কাউকে মরতে হবে না, আমিই মরব। এইবার আর আমাকে বাঁচাতে পারবে না কেউ…
মরতে চাইলে কিছু গুলি কিনে আনতে হবে তোমাকে। আশ্চর্য শান্ত ডায়নার কণ্ঠ। আব্বা এটা তোমাকে দিয়েছিলেন চোর-ঘঁচোড়কে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর জন্যে। গুলি ভরে দেননি, আমি জানি। আর দ্বিতীয় কথা হলো, এটা তোমাকে একেবারে দিয়ে দেননি আব্বা। আর আব্বার জিনিস মানেই আমার জিনিস। পুলিশের সঙ্গেও তোমার সম্পর্ক ভাল না। কাজেই বুঝতেই পারছ, হাতের তালু মেলে ধরল ডায়না। প্লীজ!
চঞ্চল হয়ে উঠল এনুডার চোখের তারা।
দিয়ে, ভাগো এখান থেকে, সিঁড়ির গোড়ায় ডায়নার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ডিন। গিয়ে ঘুমাও। বিশ্রাম দরকার তোমার।
নেহায়েত নিরুপায় হয়েই যেন অস্ত্রটা নামাল এমুডা। বেশ, গলা কাঁপছে তার, জাহান্নামেই ফিরে যাচ্ছি আমি! বাড়ি তো না, নরক! গুলি খেয়ে নাহয় নাই মরলাম। মরার আরও পথ আছে। শুয়ে শুয়ে গিয়ে সেই উপায়ই ভেবে বের করব এখন।
যেন ছবিতে অভিনয় করছে, এমন ভঙ্গিতে রিভলভারটা ডায়নার ছড়ানো তালুতে ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল এনু। লম্বা লম্বা কদমে হাঁটতে শুরু করল ড্রাইভওয়ে ধরে।
সে চোখের আড়ালে চলে গেলে ডায়নাকে বলল কিশোর, একা থাকতে আপনার অসুবিধে হবে না তো? আমরা…
একা থাকছে না ও, বাধা দিয়ে বলল ডিন। আজ রাতে যাচ্ছি না। আমি থাকছি, ডক্টর নরিয়েমা থাকবেন। কাল যাতে সারাদিন ক্লাবে গিয়ে মন ভাল করতে পারে ডায়না, সেই ব্যবস্থাও করব। ওর কোন অসুবিধে হবে না।
বেশ, বলে দুই সহকারীর দিকে ফিরল কিশোর। এসো, যাই। গুড নাইট, ডায়না। দাওয়াতের জন্যে ধন্যবাদ।
এসেছ, খুশি হয়েছি। সময় পেলে আবার এসো। যে কোন সময়।
পিকআপে এসে উঠল ওরা।
কিশোর বলল, যে কোন সময় এমো কথাটা কি সত্যি সত্যি বলল? নাকি কথার কথা?
কিছু একটা ভাবছ তুমি, রবিন বলল। কি, বলো তো?
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। বড় ধরনের কোন একটা গোলমাল ঘটছে এখানে। গোলমালটা কি ঠিক বুঝতে পারছি না।
চলতে শুরু করেছে গাড়ি। মুসা চালাচ্ছে। সামনের পথের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ঠিকই বলেছ। এডাকেই বেশি সন্দেহ হচ্ছে। তার পাগলামিটা অভিনয়ও হতে পারে।
হ্যাঁ। ফিউজ বক্সটা কোথায় আছে, তার জানার কথা। আলো নেভাতে অসুবিধে হবে না তার। আর রিভলভার নিতে এসেছে রাতের বেলা চুরি করে, এটাও খোঁড়া যুক্তি মনে হয়েছে আমার।
তবে সে একলা পারেনি, দুজনের দরকার। সে যদি আলো নিভিয়ে থাকে, মূর্তিটা ঠেলে ফেলেছে আরেকজন। আরেকজন কে, বোধহয় আন্দাজ করতে পারি…
জুভেনার! বলে উঠল রবিন।
পথে আর কথাবার্তা তেমন হলো না। মুসা নীরবে গাড়ি চালাল, আর চুপচাপ বসে বসে ভাবল কিশোর। রবিন পেছনের সীটে বসে চিলতে একটুকরো ঘুম দিয়ে নিল।
কিশোর ভাবল, শুধু ডায়নাকে ভয় দেখানোর জন্যেই ওরকম একটা দুর্লভ মূর্তি ভেঙে ফেলল জুভেনারের মত অ্যানটিক-পাগল একজন মানুষ? আর যদি এনুডার কাজই হয়ে থাকে, কাজ সেরেই পালাল না কেন সে, দেখা দেয়ার জন্যে কেন বসে থাকল?
আরও অনেক প্রশ্ন জাগল তার মনে। জবাব মিলল না কোনটারই। ভাবছে মুসাও। দুজনের ভাবনার মধ্যে একটা ব্যাপারে মিল রয়েছে সেটা হলো, বোরজিয়া ড্যাগারের অভিশপ্ততার কাহিনী কি শুধুই গল্প? না কিছুটা সত্য রয়েছে এর মধ্যে?
*
কিশোর, ওই ডক্টর মহিলাকেও কিন্তু খুব একটা সুবিধের লাগেনি আমার। এত কথা বলতে গেল কেন? রবিন বলল কিশোরকে।
ফ্রিজ থেকে খাবার বের করছে কিশোর। স্যান্ডউইচ। ফলের রস।
কথা হচ্ছে কিশোরদের বাড়িতে। পরদিন সকালে। খাবার বের করে নিয়ে রান্নাঘরের টেবিলে এসে বসল কিশোর। রবিনের প্রশ্নের জবাব দিতে যাবে, এই সময় ঘরে ঢুকল মুসা। শুরু করে দিয়েছ দেখি তোমরা। দেরি করে ফেললাম না তো? খাওয়ার আগে, না পরে?
ঠিক সময়েই এসেছ। এসো, বসে পড়ো, কিশোর বলল।