ভয় নেই, আমি ঠিকই আছি, জবাব এল রবিনের। ভয় পেয়েছিল হাড়গোড় একটাও আও থাকবে না। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
দৌড়ে এল মুসা। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, শয়তানিটা ইচ্ছে করে করেছে ক্যাপ্টেন। আমাদের ঝামেলায় ফেলার জন্যে। বাফার বলেছে আমাকে…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই শোনা গেল ক্যাপ্টেনের গর্জন। গালি দিয়ে বলল, সর্বনাশ করেছিস তোরা! আমার জাহাজের বারোটা বাজিয়েছিস! তোদের আমি ছাড়ব না!
কিন্তু আমি তো ঠিক মতই জানিয়েছি, কোন দিকে যেতে হবে… প্রতিবাদ করতে গেল রবিন।
কিশোরও বোঝানোর চেষ্টা করল ক্যাপ্টেনকে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। গর্জন থামল না ক্যাপ্টেনের। একগুয়ে ভঙ্গিতে বলতে থাকল, তোরা আমার জাহাজ ধ্বংস করেছিস! তোরা বিদ্রোহী! তোদের আমি ছাড়ব না! নাবিকদের দিকে ফিরে আদেশ দিল, ওদের সাগরে ফেলে দাও। হাঙরে ছিঁড়ে খাক।
বিকৃত আনন্দে চিৎকার করতে করতে ছুটে এল কয়েকজন নাবিক। ল্যাম্বার্টের দলের লোক এরা। এদের মধ্যে ল্যাম্বার্টকেও দেখা গেল। সবাই মিলে জাপটে ধরল তিন গোয়েন্দাকে। ঠেলা-ধাক্কা মেরে নিয়ে চলল রেলিং-এর ধারে।
হঠাৎ একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তিকে দেখা গেল এ সময়। এসে দাঁড়াল ওদের পাশে। সেই লোকটা, যে ওদেরকে জেলখানা থেকে বের করে এনেছিল। তারপর রহস্যময় ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল ডেক থেকে।
ভাবলেশহীন মুখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। অদ্ভুত একটা কাণ্ড করল। আঙুল তুলে নাবিকদের ইঙ্গিতে বোঝাতে লাগল কোন দিকে ফেলতে হবে বন্দিদের।
চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে তিন গোয়েন্দাকে পানিতে ছুঁড়ে ফেলল নাবিকেরা।
পানিতে পড়ার জন্যে তৈরি হয়েছিল গোয়েন্দা। কিন্তু পড়ল কাঠের মেঝেতে। হতবুদ্ধি হয়ে গেল তিনজনেই। উঠে বসল। তাকাতে লাগল চারপাশে।
যখন দেখল, নিজেদের মোটরবোটেই রয়েছে, বাকহারা হয়ে গেল একেবারে। ভূতুড়ে জাহাজ অ্যাড্রিয়াটিক পাঞ্চের চিহ্নও নেই কোথাও। দিগন্তে ভোরের আভাস। ভালমত খেয়াল করে দেখে বুঝল, রকি বীচের কাছাকাছিই রয়েছে ওরা।
বোকার মত পরস্পরের মুখের দিকে তাকাতে লাগল তিনজনে।
বোটের ইঞ্জিনের কাছেই বসে আছে মুসা। ইগনিশনে মোচড় দিল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল মোটর। কিশোর দেখল, রেডিওটাও ঠিক মতই কাজ করছে।
অকেজো জিনিস হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে গেল কি ভাবে? বিড়বিড় করল কিশোর।
অতি সহজ জবাব, বলে উঠল মুসা। কাল সন্ধ্যায় ভূতে নষ্ট করে দিয়েছিল এগুলো। সকাল বেলা ভূতের আসর কেটে যেতেই আবার ঠিক হয়ে গেছে সব।
সত্যিই কি পুরো একটা রাত একটা ভূতুড়ে জাহাজে কাটিয়ে এলাম? এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না রবিন।
এখনও কি সন্দেহ আছে তাতে? ভুরু নাচাল মুসা।
আসলে স্বপ্ন দেখেছি, ভূতের জাহাজ, এ কথাটা মানতে রাজি না কিশোর। ১৮৫০ সালের একটা তিমি শিকারী জাহাজের স্বপ্ন।
দুঃস্বপ্ন, শুধরে দিল রবিন।
তিনজনেই কি দুঃস্বপ্ন দেখলাম? মুসার প্রশ্ন। একই সময়ে? অবিকল এক স্বপ্ন?
তার এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না কিশোর কিংবা রবিন।