রূট সেলারের কথা বলেনি তো? বলে উঠল কিশোর। ঠিক! তা-ই বুঝিয়েছে। সেলার শব্দটা ইচ্ছে করে বাদ দিয়েছে। গুপ্তধন শিকারীকে ধোকা দেবার জন্যে। রূট মানে শিকড়। সেলার বাদ দেয়াতে শুধু গাছপালাই খুঁজে বেড়াবে যারা গুপ্তধন খুঁজতে আসবে। আমরাও সেই ধোকায় পড়ে গিয়েছিলাম।…আগেকার দিনে ঘর-বাড়িতে রূট সেলার থাকত বলে জানতাম। লোকে শাক-সজি রাখত রূট সেলারে। তখন তো আর ফ্রিজ আবিষ্কার হয়নি।
তা ঠিক, মাথা দোলাল রবিন। প্রশ্ন হলো, রূট সেলারটা কোথায়?
চলো, ওই টিলায় উঠে লাফালাফি করি, বুদ্ধি দিল কিশোর। ফাপা হলে শব্দ শুনেই বোঝা যাবে।
কিন্তু টিলায় চড়ব কেন? মুসার প্রশ্ন।
পাহাড় বেয়ে ওঠো মাথায়, আবার নামে নিচে, বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে ছড়াকার, জবাব দিল কিশোর। সেজন্যেই উঠব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওই টিলার নিচেই কোনখানে আছে গুপ্তধন।
পাহাড়ের গায়ে লাফালাফি করতে গিয়ে কাদা মেখে ভূত হয়ে গেল তিনজনেই।
ঘণ্টাখানেক এ ভাবেই চলল। হঠাৎ মুসা বলে উঠল, দাঁড়াও। দাঁড়াও। এখানে ফাপা একটা আওয়াজ শুনেছি। খুড়ে দেখা যাক।
পরের আধঘণ্টা নিবিষ্ট মনে মাটি খুঁড়ে চলল তিন গোয়েন্দা। পরিশ্রমের ফল মিলল অবশেষে। মাটি সরে বেরিয়ে এল কাঠ। আধ চা কাঠে শাবল দিয়ে বার কয়েক গুতো মারতেই ভেঙে গেল। টর্চের আলোতে একটা গর্ত দেখতে লে ওরা। বারো ফুট মত গম্ভীর হবে। খালি গর্ত।
গুঙিয়ে উঠল মুসা। খামোকাই এত খাটলাম!
এক মিনিট, বলল কিশোর। এখানেই কোথাও আছে। নইলে এত খাটতে যেত না বুড়ো। রূট সেলারের কাঠের মেঝের নিচেই রেখেছে সোনার বারগুলো।
সঙ্গে করে আনা টুল কিট থেকে রশি বের করল কিশোর। রশির এক মাথায় হক লাগিয়ে মাটিতে গাঁথল। রশি বেয়ে প্রায় বারো ফুট নিচে নেমে এল। মেঝেতে আবার ঠুকতে শুরু করল ফাপা আওয়াজ শোনার আশায়। এবার বেশিক্ষণ পরিশ্রম করতে হলো না। শুনতে পেল প্রত্যাশিত শব্দটা।
কুঠরির কাঠের তক্তা ভেঙে খুলে ফেলেছে ওরা, এ সময় রূট সেলারে ঢুকতে শুরু করল বৃষ্টির পানি। পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দেয়ার জন্যেই যেন ওপরের একটা গর্তে জমা পানিও উপচে গিয়ে ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করল সেলারে।
দেখতে দেখতে গোড়ালি ডুবে গেল ওদের। ক্রমেই বাড়ছে পানি।
এখানে থাকলে তো দেখছি ডুবে মরব, মুখ অন্ধকার হয়ে গেছে রবিনের। জ্যোতিষীর কথাই শেষ পর্যন্ত ফুলে যাবে মনে হচ্ছে!
সত্যি চলে যেতে চাইছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
দেখি আরেকটু, গুপ্তধন পাওয়ার আশা কিশোরের মতই ছাড়তে পারল না রবিনও।
দেয়ালের আরেকটা তক্তা খুলে আনল মুসা। পাহাড়ের গায়ে একটা সুড়ঙ্গ চোখে পড়ল। উচ্চতায় পাঁচ ফুটেরও কম। ওপরের দিকে উঠে গেছে সুড়ঙ্গটা। ফলে পানি ওটার নাগাল পাবে না।
বুড়ো এটা তৈরি করে রেখে গেছে, বলল কিশোর। জানত, বৃষ্টি হলে পানি ঢুকতে পারে। তাই এমন জায়গায় বানিয়েছে, যাতে পানি না জমে।
মাথা নিচু করে সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়ল ওরা। দশ ফুট যাবার পরে বাম দিকে মোড় নিল। ধীরে ধীরে এগোতে লাগল হামাগুড়ি দিয়ে।
কড়াৎ করে বাজ পড়ল। এবং ঠিক ওই মুহূর্তে অযাচিত ভাবে সিম্বুর মুখোমুখি হলো ওরা। একটা লোহার সিন্দুকের ওপর চুপ করে বসে রয়েছে ছোট্ট মূর্তিটা। হাঁ করে তাকিয়ে রইল তিনজনেই।
সিন্দুকে কি বারগুলো আছে?–সবার মনেই খেলে গেল একই প্রশ্ন।
বাক্সটা খুলব? ফিসফিস করে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল কিশোর।
কি-কি-কিন্তু, সিম্বুর অভিশাপ… ভয়ে কথা শেষ করতে পারল না মুসা।
বাক্সটা খুললে যদি…! রবিনও ভয় পাচ্ছে।
সিম্বুর কদাকার ছোট্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে ভয় লাগছে ওদের। ফিসফিস করে বলল কিশোর, সিম্বু, আমরা তোমার কোন ক্ষতি করতে আসিনি। তোমার সোনা চুরি করার ইচ্ছেও আমাদের নেই। আমরা শুধু দেখতে চাই বাক্সের ভেতরে সোনাগুলো আছে কিনা।
আস্তে করে মূর্তিটা এক পাশে সরিয়ে রাখল কিশোর। বাক্স খোলার চেষ্টা করল। খুব মজবুত তালা। ওদের কাছে এই তালা খোলার যন্ত্র নেই।
এখন কি করা? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। সিম্বুকে নিয়ে যেতে পারি আমরা…
কথা শেষ হলো না তার। বিকট শব্দে বাজ পড়ল আবার।
রূট সেলারে পানি জমছে জানা কথা, কিশোর বলল। বেশি দেরি করলে ভরে যাবে। বেরোনোর উপায় থাকবে না আমাদের। তারচেয়ে চলো এখন চলে যাই। কাল বৃষ্টির পানি নেমে গেলে আবার আসা যাবে। তালা খোলার যন্ত্র নিয়ে আসব কাল।
ঠিক বলেছ, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল মুসা। স্বস্তি পেল সিম্বুর প্রহরায় রাখা সোনা দেখতে গিয়ে তাকে রাগিয়ে দিতে হলো না বলে।
প্যাসেজওয়ে ধরে পিছিয়ে এল ওরা। রূট সেলারে ঢুকল। পানিতে থই থই করছে সেলার।
গর্ত থেকে পানি রানোর ব্যবস্থা করতে না পারলে সকালের মধ্যে সেলার পুরো ডুবে যাবে, নিচের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে সেলার থেকে পানি সরে যাওয়ার জন্যে একটা মুখ তৈরি করল ওরা। সেলারের ছাত যাতে ভেঙে ধসে পড়তে না পারে, সেজন্যে তক্তা দিয়ে আটকে রাখার ব্যবস্থা করল।
করলাম তো, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর, কিন্তু থাকবে কিনা জানি না। চলে, যাওয়া যাক।
দড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল ওরা।
মোটর সাইকেলে চড়ে হোটেলে ফিরল ওরা। কারও নজরে পড়ল না। দুপার সাদা মার্সিডিজটাও দেখতে পেল না কোথাও।