মনে হচ্ছে আপনার সেই ক্ষমতা আছে, সন্দিহান সুরে বলল কিশোর। আপনি আমাকে আগে কখনও দেখেননি। অথচ আমার সম্পর্কে সব বলে দিলেন।
আসলে পত্রিকায় আমাদের ছবি দেখেছে, রবিন বলল। পত্রিকায় আমাদের কেসের কথা তো মাঝে মাঝেই ছাপা হচ্ছে।
কড়া চোখে রবিনের দিকে তাকাল মহিলা। চেঁচিয়ে উঠল, তোমাদের নামও কোনদিন শুনিনি আমি। যা বলেছি, আমার জাদুর ক্ষমতার জোরেই বলেছি। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না, না? ঠিক আছে। হাত দেখা শেষ করি আগে। তারপর ঠিকই বিশ্বাস করবে।
আবার ক্রিস্টাল বলের দিকে তাকাল মহিলা। আমি মোটর সাইকেল দেখতে পাচ্ছি। দুটো মোটর সাইকেল। তোমাদের মধ্যে একজনকে পেছনে বসিয়ে আনা হয়েছে। আবার উত্তেজিত শোনাল তার কণ্ঠ। গোয়েন্দাগিরি তোমরা আগেও বহুবার করেছ। তবে এবার তোমাদের সামনে বিপদ দেখতে পাচ্ছি আমি। ভয়ানক বিপদ!
অ্যাক্সিডেন্ট? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। নতুন কোন কেসে জড়িয়ে পড়বে তোমরা। দেখতে পাচ্ছি-দেখতে পাচ্ছি এক চোখো একটা লোককে। নীল চোখ। সাদা গাড়িতে চড়ে সে। খুবই বিপজ্জনক লোক। তার ধারে কাছেও যেয়ো না। লোকটার কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকবে।
মহিলার কণ্ঠ ভীষণ জোরাল হয়ে উঠল, চেহারা দেখে মনে হলো সমাধিস্থ হয়ে পড়েছে সে। চোখ বোজা। যেন জানে না, কাথায় আছে।
সিলভার স্টার থেকে সাবধান! ফিসফিস করল সে। ওখানে যেয়ো না।
সিলভার স্টার কি? প্রশ্ন করল রবিন।
জবাব দিল না মহিলা। খামচে ধরল কিশোরের হাত। ব্যথা পেল কিশোর।
এক চোখো লোকটার কাছ থেকে সাবধান! ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে মহিলার। সিলভার স্টার থেকে সাবধান! আমি…আমি সোনা দেখতে পাচ্ছি। অনেক সোনা। কিন্তু ওই সোনা অশুভ। ধরতে যেয়ো না। ধরলে…ধরলে মৃত্যু হবে! ওই সোনাকে ঘিরে আছে মৃত্যু আর…।
হঠাৎ চোখ খুলল মহিলা। বিস্ফারিত চাউনি। কিশোরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চেঁচিয়ে উঠল, সিম্বু! সিম্বু আছে ওখানে! ওর কাছে যেয়ো না! তারপরই চোখ উল্টে দিয়ে, অজ্ঞান হয়ে কালো মখমলে ঢাকা মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল সে।
সর্বনাশ! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। মুসা, রবিন-দেখো তো এখানে পানি টানির ব্যবস্থা আছে কিনা। পানি নিয়ে এসো।
জ্যোতিষীর জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করতে লাগল কিশোর। সিঙ্ক থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে এল রবিন। ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার মুখ মুছে দিতে লাগল কিশোর।
প্রথমে ভেবেছিলাম ভঙ্গি ধরেছে, কিশোর বলল। এখন তো দেখি সত্যি সত্যি বেহুশ।
কিন্তু মহিলা কি যেন বলছিল? রবিনের কণ্ঠে উদ্বেগ।
হুঁশ ফিরলে জিজ্ঞেস করব, বলল কিশোর।
কিছুক্ষণ পরে চোখ মেলে তাকাল মহিলা।
আপনি ঠিক আছেন তো? উকণ্ঠিত গলায় জানতে চাইল কিশোর।
ধীরে ধীরে মাথা দোলাল জ্যোতিষী। ভীষণ শক্তিশালী কম্পন অনুভব করছি আমি!… যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আটলান্টা ছেড়ে চলে যাও তোমরা। তোমাদের অনুরোধ করছি আমি।
সিম্বুটা কে? কিশোরের প্রশ্ন।
কে, জানতে চাও? আস্তে উঠে দাঁড়াল মহিলা। এসো আমার সঙ্গে।
তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে বাইরের ঘরে চলে এল সে।
শেলফ থেকে কিশোরকে একটা বই বের করে দিল মহিলা। এটা পড়ো। সিম্বু কি জানতে পারবে। না, দাম দিতে হবে না। বইটা তোমাদের এমনিই দিলাম। এখন যাও। আর কোনদিন এদিকে এসো না। আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ভাগ্য খারাপ!
জবাবে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিশোর, মহিলার চেহারা দেখে চুপ হয়ে গেল। ভয় ফুটে আছে মহিলার মুখে। তাতে কোন ভণিতা নেই।
চলো, দুই সহকারীকে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল কিশোর। দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। হাত নেড়ে মহিলাকে বলল, গুড-বাই। অ্যান্ড থ্যাংক
উফ, বাঁচলাম! অদ্ভুত দোকানটা থেকে বেরিয়ে এসে যেন হাঁপ ছাড়ল মুসা। অভিজ্ঞতা একটা হলো বটে!
রবিন বলল, তুমিই তো ঢুকতে চাইলে।
চিন্তিত ভঙ্গিতে ঠোঁট কামড়াল কিশোর। কি যেন রয়েছে ওই মহিলা আর তার দোকানের মধ্যে। আরেকটু হলেই বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম তার কথা।
ভুরু কুঁচকাল মুসা। অবাক। তারমানে করোনি?
*
হোটেলে ফিরে কিশোর গেল বাথরূমে। মুসা বিছানায় চিৎ। আর রবিন শুয়ে শুয়ে মহিলার দেয়া বইটা পড়তে শুরু করল।
বইটা ভুডু চর্চার ওপরে লেখা।
ভুডু-তত্তের জন্ম আফ্রিকায় হলেও হাইতি দীপে এই রহস্যময় ধর্মীয় বিশাস নিয়ে চর্চা হয় বেশি। জাদুমন্ত্র, ঝাড়-ফুক, নরবলি এ সবের সাহায্যে কিভাবে বিন্নি অনুষ্ঠান করা হয় তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে বইটাতে।
গোসল সেরে বেরিয়ে এল কিশোর।
রবিন বলল, জাদু করে তোমাদের যে কারও হাত এখন ভেঙে দিতে পারি আনি। এ জন্যে শুধু একটা পুতুল দরকার হবে আমার। পুতুলের হাতে সুচ ঢুকিয়ে দিলে মনে হবে তোমাদের হাতেও সুচ ঢুকে গেছে। বাবারে-মারে বলে চেঁচানো শুরু করবে।
লাফ দিয়ে উঠে বসল মুসা। না না, প্লীজ, এখন ওকাজটিও কোরো না ভাই! পাশা আঙ্কেলের সঙ্গে ডিনারের দাওয়াতটা আগে সেরে নিই। হাতে ব্যথা থাকলে খাওয়াটা আর জমবে না।
হেসে ফেলল কিশোর আর রবিন।
তবে, এ বিদ্যেটাতে যদি বিশ্বাস না থাকে তোর, বলল রবিন, তাহলে আর কোন ভয় নেই। তোমার ক্ষতি হবে না।
অ! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। তাহলে এটা কি আর এমন ক্ষমতা হলো। পচা জাদু।
সিম্বু কি জিনিস জানতে পেরেছ? আলমারি থেকে পরিষ্কার একটা শার্ট বের করল কিশোর।