আরে না না, বললাম তো, আবার বলল কিশোর, দোষটা আমারই ছিল। আপনার অত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল সে, আসলেই, স্যার, অতিরিক্ত বিরক্ত করে ফেলেছিলাম আমি মিস্টার ফগ্যাপারটকে। তারপর ফগকে বাঁচানোর জন্যে তাড়াতাড়ি আবার ওর কাহিনীতে ফিরে গেল। বলতে লাগল, কিভাবে কাপড়গুলো শুকিয়ে জুতোর বাক্সে ভরে রেখেছিল। রাতে চোর এসেছিল। কিন্তু কিছু নিতে পারেনি।
এ সব কথা ফগের কাছে নতুন। চোখ গোল গোল করে শুনতে লাগল সে।
সকালে মুসার আসার পর, কিশোর বলছে, পুতুলের পোশাকগুলো নিয়ে গিয়ে ছাউনিতে বসলাম ভালমত দেখার জন্যে। অনেকভাবে দেখেও প্রথমে কিছু পাইনি। শেষে ফারিহা কোটের হাতার ভেতর থেকে একটা খুদে রুমাল বের করল। তাতে ডেইজি ফুলের চারপাশ ঘিরে যে অক্ষরগুলো লেখা, সেগুলো এক করলে একটা নাম হয়ে যায়-ইউরিকেস। ফারিহার দিকে তাকাল সে, রুমালটা আছে সঙ্গে?
পকেট থেকে বের করে দিল ফারিহা।
চুপচাপ রুমালটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন ক্যাপ্টেন আর তার সঙ্গী। হাঁ হয়ে গেহে ফগ। ওর মাথায় কিছু ঢুকছে না।কিসের পুতুল? আর পুতুলের মধ্যে পাওয়া রুমালেরই বা কি অর্থ? রাতে বুড়ো ক্যামারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিল, হন্তদন্ত হয়ে নদীর দিকে ছুটে যেতে দেখেছে একটা লোককে। তার হাতে কোন জিনিস ছিল। বুড়োর মনে হয়েছে, জিনিসটা পানিতে ছুঁড়ে ফেলেছে লোকটা। যেহেতু হুবারের বাড়িতে চোর আসার রাতে ঘটেছে ঘটনাটা, ফগের সন্দেহ হয়েছিল, চোরাই মালটাল বা.ওই জাতীয় কোন কিছু পানিতে ফেলেছে চোর। লুকিয়ে রাখার জন্যে। এমন জায়গায়, যেখানে জলজ গাছগাছড়া আর শ্যাওলার মধ্যে আটকে থাকবে জিনিসটা। পরে এসে তুলে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু খুজতে গিয়ে যে পুতুলের পোশাকের ব্যাগ পেয়ে যাবে, আর অতি সাধারণ ওই জিনিসগুলো মূল্যবান সূত্র হয়ে যাবে, কল্পনাই করতে পারেনি। তাহলে কি আর বিচ্ছু ছেলেটাকে দেয়! উহ! রাগে এখন নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে ওর।
কিশোরের দিকে মুখ তুলে তাকালেন ক্যাপ্টেন, রুমালটা দেখে কি মনে হলো তোমার?
কিছুই না, জবাব দিল কিশোর। আমাকে অবাক করেছে নামটা।
কেন? প্রশ্ন করলেন তার সঙ্গী।
কারণ, স্বাভাবিক নাম নয় ওটা। ওই নামের কোন লোকের সঙ্গে আমার কোনদিন দেখা হয়নি। জানি, গ্রীসে গেলে ওই নামের অনেককেই পেয়ে যাব। নামটা আমাকে অবাক করেছিল কেন, বলি। এই নামের আরেক লোকের কথা আমি জানি, প্রাচীন গ্রীসে যার জন্ম, ভেনট্রিলোকুইজমের জনক বলা হয়। কি করে জানলাম নামটা, তাও বলি। একটা ভেনট্রিলোকুইজম শিক্ষার বইতে।
মৃদু স্বরে লম্বা ভদ্রলোক বললেন, বুদ্ধিমান ছেলে! কিশোরের দিকে তাকালেন, তাহলে তোমার মনে হয়েছিল ওগুলো আধুনিক কোন ভেনট্রিলোকুইস্টের পুতুলের পোশাক, যে ইউরিক্লেস নামে পরিচিত?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, হ্য। রুমালে নাম দেখে, ওই লোকটাকে খুঁজে বের করার কথা ভাবছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এই রহস্যটা ভেদ করার মত কোন তথ্য পাওয়া যাবে।
আসনেই বুদ্ধিমান ছেলে,আনমনে বিড়বিড় করলেন আবার ভদ্রলোক। শুনে হয়তো খুশি হবে, তোমার অনুমান ঠিক। ইউরিকেল নামে সত্যিই একজন ভেনট্রিলোকুইস্ট আছে, আর ওই পোশাকগুলো তারই পুতুলের। হয়তো অবাক হবে শুনে এই পোশাকগুলো আমরাও খুঁজে বেড়াচ্ছি।
কেন? সত্যি অবাক হলো কিশোর। এত লোক সাধারণ একটা পুতুলের পোশাকের পেছনে লেগেছে কেন?
তুমি একটা গল্প শুনিয়েছ আমাদের, ভদ্রলোক বললেন, এবার আমি একটা গল্প শোনাই তোমাদের। তবে কথা দিতে হবে, আর কাউকে সেটা বলতে পারবে না। কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। ইউরিক্লেসের নাম শুনে কেন অবাক হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রবার্টসন, জবাব পেয়ে যাবে গল্পটা শুনলে।
সবগুলো চোখ স্থির হয়ে গেল তার মুখের ওপর, কেবল ক্যাপ্টেনের বাদে। তার চোখ সবার ওপর ঘুরছে।
কিশোর, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে, ক্যাপ্টেনের সঙ্গী বললেন, আশা করি বুঝে গেছ আমি পুলিস না হলেও ওরকমই একটা ডিপার্টমেন্টে কাজ করি।
নীরবে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
আমাদের কাজ হলো, শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের খুঁজে বের করা। অনেক লোক আছে ওরকম, বড় বড় জায়গায়, বড় বড় আসনে বসে আছে। অনেক তাদের ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে খুব সাবধানে পা ফেলতে হয় আমাদে। প্রচুর খোঁজ-খবর, সাক্ষি-সাবুদ জোগাড় করে তবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়।
স্পাই! প্রায় ফিসফিস করে বলল ফারিহা।
শুধু স্পাই নয়, আরও অনেক ধরনের খারাপ মানুষ আছে, তাদের দিকেও নজর রাখতে হয় আমাদের। মিস্টার ইউরিক্লেস আমাদের ইনফর্মার। ওইসব খারাপ মানুষদের খোঁজ-খবর দেয়। খুব ভাল ভেনট্রিলোকুইস্ট সে। পুতুল দিয়ে কথা বলানোর খেলা দেখায়। এ জন্যে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে। খবর জোগাড়ের সুবিধে হয়। কনি হুবার ওর অ্যাসিসট্যান্ট।
ও, তাই! প্রায় চিৎকার করে উঠল ফারিহা।
আস্তে মাথা ঝাঁকালেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। একদিন ইউরিক্লেসের এক বন্ধু এসে হাজির হলো আমার কাছে। জানাল, অপরাধীদের নামের একটা লিস্ট করেছে ইউরিক্লেস! কিন্তু শত্রুরা টের পেয়ে গিয়ে ওটা ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে ওর পেছনে লেগেছে। লিস্টে এমন সব নাম আছে যাদের ধরার জন্যে আমরা অনেকদিন থেকে ওত পেতে আছি। দেশের ভেতরে শ্রমিক ধর্মঘট, কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, আরও নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত বাঘা বাঘা সব মানুষ। সুতরাং লিস্টটা কতখানি দামী, বুঝতেই পারছ।