বেরিয়ে এল ওরা। ডিগের সঙ্গে দেখা করতে চলল।
ঘরেই পাওয়া গেল তাকে।
কিশোর বলল, আমরা চলে যাচ্ছি। এখানে আমাদের কাজ শেষ।
হাত মেলাতে মেলাতে রবিন বলল, আপনার সাহায্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
দুঃখ একটাই, বলল কিশোর, আপনার বন্ধুকে খুঁজে বের করতে পারলাম না।
তাতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, বিন্দুমাত্র উদ্বিয় মনে হলো না ডিগকে, বরং তিন গোয়েন্দা চলে যাচ্ছে শুনে যেন খুশিই হলো। আমার এখনও। বিশ্বাস, ইয়োরোপেই গেছে সে, বিয়ে করতে, হয়তো এতক্ষণে করেও ফেলেছে। হানিমুন করছে নতুন বউকে নিয়ে। হাহ হাহ হা! নিজের রসিকতায় নিজেই হাসল।
সেটা হলে তো ভালই। যাই হোক, অনেক সাহায্য করেছেন আমাদের। থ্যাংক ইউ।
তা কোথায় যাচ্ছ তোমরা? বাড়ি?
না, ইচ্ছে করেই সত্যি কথাটা জানিয়ে দিল কিশোর, ডিগের চোখের দিকে তাকিয়ে, ভাবছি শিপরিজটা একবার ঘুরে যাব-..
চমকে গেল মনে হলো ডিগ, কেন? ওখানে কেন? গুহাটা দেখতে নাকি?
গুহা! সতর্ক হলো কিশোর।
ও, জানো না। একটা বিখ্যাত গুহা আছে ওখানে, নাম ব্ল্যাকহোল। তবে বিখ্যাত না বলে কুখ্যাত বলাই ভাল…
আপনি দেখেছেন নাকি গুহাটা?
উ! থমকে গেল ডিগ। হাসল। দেখেছি। আমার এক চাচা থাকে ওখানে, তার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম তো, ঠিক আছে, যাও। দেরি করিয়ে দিচ্ছি। আমারও কাজ আছে। লেকচারের জন্যে কিছু কাগজ রেডি করতে হবে।
কিশোরের মনে হলো, কোন কথা চেপে যাচ্ছে ডিগ। ওরা যে মেরিনকে খুঁজতে যাচ্ছে ওখানে সন্দেহ করেছে নাকি? সন্দেহ কাটানোর জন্যে বলল, শুনেছি, শিপরিজটা সুন্দর জায়গা, দেখার মত। গুহাটা যাওয়ার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিল। গুহার ভেতরে রাত কাটানো খুব মজার, কি বলেন?
০৬.
মোটেলে ফেরার পথে রবিন বলল, শিপরিজের কথা শুনে অমন চমকে উঠল কেন? আমার মনে হয় কিছু লুকাচ্ছে ডিগ।
কি জানি, চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, হতে পারে গেনারের প্রশ্নপত্রে শিপরিজের নামটা সেও আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু কথা হলো, সে জানে আমরা গোয়েন্দা, আবিষ্কারই যদি করে থাকে, আমাদের সেকথা জানাল না কেন?
নিজেই যেতে চায় হয়তো ওখানে। বন্ধুকে খুঁজে বের করে সবাইকে চমকে দেয়ার জন্যে।
মাথা নাড়ল কিশোর, আমার তা মনে হয় না। লোকটার ব্যাপারে সাবধান থাকা দরকার।
কি করে থাকব? মুসার প্রশ্ন। আমরা তো চলেই যাচ্ছি এখান থেকে।
জবাব দিল না কিশোর। ভাবনায় ডুবে গেল।
মোটেলে ফিরে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে লাগল রবিন আর মুসা, কিশোর ফোন করল রকি বীচে, গোয়েন্দা ভিকটর সাইমনের পাইলট ল্যারি কংকলিনকে। বাড়িতেই পাওয়া গেল ওকে। মেরিন ডিগের কথা তাকে। জানিয়ে অনুরোধ করল কিশোর, লোকটার ওপর সন্দেহ হচ্ছে আমাদের, ওর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আমাদের জানাবেন?
তোমাদের ঠিকানা বলো।
শিপরিজে যাচ্ছি। কোথায় উঠব বলতে পারছি না। আপনি খোঁজখবর নিন, আমি আবার ফোন করব।
টাকমাথা বাচাল ম্যানেজারকে অফিসে পাওয়া গেল। বিল মিটিয়ে দিল কিশোর। আবার তিনজনে গাড়িতে উঠতে মুসা বলল, তাহলে শিপরিজেই যাচ্ছি?
কেন, কোন সন্দেহ আছে নাকি তোমার? প্রশ্ন করল কিশোর।
না না, বলছিলাম কি ব্ল্যাকহোল গুহায় যাব নাকি?
দরকার পড়লে যাব।
হেসে বলল রবিন, ভয় করছে নাকি তোমার?
তা একটু-আধটু যে করে না তা নয়। আমি ভাবছি, আমার মেটাল ডিটেক্টরটা এবার কাজে লাগানো যাবে কিনা?
গুহার মধ্যে কি খুঁজবে? ভূত?
আরে দূর! জোরে হাত নাড়ল মুসা, এটা কি গোস্ট ডিটেক্টর নাকি? আমি বলছি গুপ্তধনের কথা। সোনার মোহর-টোহর যদি লুকানো থাকে…
তাহলে বড়লোক হয়ে যাবে, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। নাও, বকবকানি থামিয়ে এখন গাড়ি চালাও।
রওনা হওয়ার সময় আকাশটা ভালই ছিল, এখন যতই সামনে এগোচ্ছে ধূসর হয়ে আসছে আকাশের রঙ। একসময় কুয়াশায় ঢেকে গেল সবকিছু। হেডলাইট জ্বেলে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হচ্ছে মুসাকে। ঘন্টাখানেক পরই কুয়াশা কেটে গেল, হেসে উঠল উজ্জল রোদ। আবহাওয়ার এই যখন তখন পরিবর্তনে অবাক হলো না ওরা, এদিকে এ রকমই হয়, জানা আছে।
সাগর সমতল থেকে এখানে দুশো ফুট ওপরে রাস্তা। পাহাড়ের গা বেয়ে চলে গেছে। সাগরের দিকটায় কোথাও খাড়া, কোথাও ঢালু হয়ে নেমেছে পাহাড়ের দেয়াল। ঢালু অংশগুলোতে সাগর আড়াল করে দিয়ে ঘন হয়ে জন্মেছে গাছপালা, ঝোপঝাড়।
কিছুদূর এগোনোর পর সামনে ঢালু হয়ে এল পথ। লম্বা একটা পাহাড়ের কিনার দিয়ে নিচে নামতে নামতে একসময় চোখে পড়ল শিপরিজ। মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অতি খুদে একটা গ্রাম। সৈকতের ধারে ছোট্ট জেটি তৈরি করেছে জেলেরা। শান্ত, সুন্দর গ্রাম। দেখে মনে হয় ঘুমিয়ে আছে। চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য। রাস্তার পাশে একটা পুরানো বাড়ি দেখা গেল। রোদ-বৃষ্টি আর নোনা হাওয়ায় রঙ এমন চটেছে, যতটা না পুরানো তার চেয়ে অনেক বেশি পুরানো মনে হয়।
দরজায় বড় করে সাইনবোর্ড লেখা:
HARRYS GENERAL STORE.
মুসাকে বলল কিশোর, থামো, কয়েকটা জিনিস কিনতে হবে ক্যাম্প করার জন্যে।
বাড়িটার সামনে গাড়ি রেখে মুসা বলল, একটা করে বার্গার খেয়ে নিলে কেমন হয়?
মন্দ হয় না।
কাউন্টারের ওপাশেবসে আছে মাঝবয়েসী, ঝাড়ুর শলার মত খাড়া খাড়া গোঁফওয়ালা এক লোক। পত্রিকা পড়ছে।