মোট কটা প্রশ্ন আছে?
দশটা।
প্রতিটি প্রশ্নের প্রথম অক্ষরটা নিয়ে পর পর সাজাও কি হয়?
দ্রুত ওপর থেকে নিচে চলে গেল রবিনের চোখ। অক্ষরগুলো সাজালে হয়:
S-H-E-E-P-R-I-D-G-E
শিস দিয়ে উঠল সে, শিপরিজ! কোনও শহরের নাম!
হ্যাঁ, কিশোর বলল, বেশ চালাকি করে সূত্র রেখে গেছে গেনার। আমার ধারণা পুলিশ এটা বের করতে পারেনি। সম্ভবত গেমারের নিরুদ্দেশের ব্যাপারে তেমন গুরুত্বই দেয়নি পুলিশ।
তাতে আমাদেরই ভাল হয়েছে, রহস্যটার মীমাংসা করতে পারব। কিন্তু, আর তো দাঁড়াতে পারছি না, চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোন রকম চিন্তা-ভাবনা করতে পারব না এখন। মাখা কাজ করছে না।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাস্তা খেয়ে নিতে হবে, খালি পেটে ঘুম ভাল হবে না, কিশোর বলল। ঘুম থেকে উঠে পোস্ট অফিসে যাব শিপরিজটা কোথায় জানতে।
কমন নেম। পুরো আমেরিকায় অন্তত পঁচিশটা শিপরিজ পাওয়া যাবে। কটাতে খুঁজব? সবগুলোতে খুঁজতে গেলে খোঁজা শেষ হতে হতে আশি বছরের বুড়ো হয়ে যাবে গেনার। বড় করে হাই তুলল রবিন। তাড়াতাড়ি গিয়ে কান পাতল দেয়ালে।
শুনেছ নাকি কিছু? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মনে হয় ডিগ উঠে পড়েছে। জলদি পালানো দরকার। ধরা পড়লে প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে জান খারাপ হয়ে যাবে।
বেরিয়ে এল দুজনে। দরজার তালাটা আবার লাগিয়ে দিল কিশোর। নিচে নেমে দেখল স্টিয়ারিঙে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে মুসা। ধাক্কাধাক্কি করেও তাকে জাগানো গেল না। তবে নাস্তার কথাটা কানের কাছে বলতেই মুহূর্তে পুরো সজাগ হয়ে গেল। স্টার্ট দিল গাড়িতে।
ক্যামপাসের ক্যাফেটেরিয়া এখনও খোলেনি। তাই শহরের একধারে একটা অল-নাইট কাফের সামনে গাড়ি রাখল মুসা।
ভরপেট খেয়ে কাফে থেকে বেরোল ওরা। মোটেলে ফিরে চলল।
ঘরে ফিরে একটানে জুতো খুলেই চিত হয়ে শুয়ে পড়ল রবিন। কাপড় বদলানোর কষ্টও সহ্য করতে রাজি নয়। বলল, আমি গেলাম, আর পারছি না!
অন্য দুজনেরও একই অবস্থা। বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল তিনজনেই।
কয়েক ঘণ্টা টানা ঘুম দিয়ে জাগল ওরা। ঝরঝরে লাগছে এখন শরীর। হাতমুখ ধুয়ে, তৈরি হয়ে রওনা হলো ওরা। দরজা দিয়ে বেরিয়েই থমকে দাঁড়াল রবিন। ঘোষণা করল, ঝামেলা আসছে! লড়াইয়ের জন্যে তৈরি হও!
কি হয়েছে? রবিনের কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল কিশোর।
মুসা এসে দাঁড়াল তার পেছনে।
রিজ মোটেলের চওড়া লন পেরিয়ে হেঁটে আসছে চারজন তরুণ। দলপতি বব বোম্যান।
লায়ন কাবস, বিড়বিড় করল মুসা। আজ যদি আবার সিংহগিরি দেখাতে এসে থাকে, ভাল হবে না। কেশর কেটে দিয়ে তবে ছাড়ব।
আগেই মারামারি শুরু করে দিয়ো না, সাবধান করল কিশোর, কি জন্যে এসেছে দেখি।
দরজা দিয়ে আগে বেরোল সে।
এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল বব, হাই! তোমাদের চমকে দিতে এলাম।
কিশোরের দুপাশ দিয়ে বেরোল মুসা আর রবিন।
মুসার মারমুখো ভঙ্গি ভাল ঠেকল না ববের, ওর হাতের কিলবিলে। পেশীগুলোর দিকে তাকাল চোখে সন্দেহ নিয়ে। বলল, দেখো, মারামারি করতে আসিনি আমরা।
তাহলে কি করতে এসেছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
কি জন্যে এসেছে, বলল বব। তিন গোয়েন্দাকে ওর পছন্দ হয়েছে। সে চায় ওরা লায়ন কাবসে যোগ দিক।
কাজ নেই তো আর খেয়েদেয়ে, মানুষ থেকে শেষে পশুর বাচ্চা হতে যাই… বলে ফেলল মুসা।
অহেতুক ঝগড়া বাধাতে চায় না এখন কিশোর, তাই মুসাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, যোগ দিতে পারি, এক শর্তে। কাল রাতে কে আমাদেরকে লাইনের ওপর ফেলে আসতে বলেছিল, যদি তার নাম বলো।
দ্বিধায় পড়ে গেল বব। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বলতে চায় সে, কিন্তু কোন কারণে পারছে না। শেষে বলল, দেখো, বলতাম, সত্যি। কিন্তু একজন বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দেয়া কি ঠিক?
তাহলে বোলো না।
কিন্তু তোমরা তো তাহলে আমাদের দলে আসবে না।
শর্ত না মানলে কি করে আসব। এলে খুব ভাল হত। মুসার দিকে তাকাল বব, তোমাকে আমি চিনতে পেরেছি, মুসা আমান। দারুণ বাস্কেটবল খেলো। তোমার খেলা দেখেছি। আরলিংটনের যে কোন টিম তোমাকে পেলে লুফে নেবে।
ধন্যবাদ, মুসা বলল, আপাতত আরলিঙটনের কারও লোফালুফির পাত্র হবার ইচ্ছে আমার নেই, এমনিতেই খুব ভাল আছি।
কোনমতেই তিন গোয়েন্দাকে লায়ন কাবসে ঢোকাতে রাজি করতে না পেরে হতাশ হয়েই ফিরে চলল বব। তবে বোঝা গেল, আশা ছাড়েনি সে। আবার আসবে চাপাচাপি করতে।
বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। পোস্ট অফিসে ঢুকে একজন ক্লার্ককে অনুরোধ করতেই একটা পোস্টাল ডিরেক্টরি বের করে কাউন্টারের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল। তার ওপরহুমড়ি খেয়ে পড়ল কিশোর আর রবিন।
অনেকক্ষণ পাতা ওল্টানোর পর নিশ্চিত হলো, শিপরিজ অনেকগুলো আছে আমেরিকায়, তবে লস অ্যাঞ্জেলেসে আছে মাত্র একটা। কাজ সহজ হয়ে যাওয়ায় খুশি হলো ওরা। ডিরেক্টরিটা ক্লার্ককে ফেরত দিয়ে, তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট অফিল থেকে বেরিয়ে এল।
মুসা জিজ্ঞেস করল, এবার কোথায়?
জবাব দিল কিশোর, অবশ্যই শিপরিজে, তবে তার আগে ক্যাম্পাসে যাও। ডিন আর মেরিন ডিগেরকাছ থেকে বিদায় নিতে হবে।
তার কোন প্রয়োজন আছে?
আছে।
আগেরবারের মতই শীতলভাবে ওদেরকে গ্রহণ করলেন ডিন ফলেট। ওরা চলে যাচ্ছে শুনে জানতে চাইলেন কোথায় যাচ্ছে।
জানাল কিশোর।
কোন ভাবান্তর হলো না তার। গেনারকে খোঁজার জন্যে ওদের একটা শীতল ধন্যবাদ জানিয়ে আবার কাজে মন দিলেন।