ভেতরে চলে গেল ছেলেটা। উত্তেজিত কথা আর ধমক শোনা গেল। বেরিয়ে এল গাট্টাগোট্টা আরেকটা ছেলে। পরনে লাল-সাদা স্ট্রাইপের পায়জামা। তিন গোয়েন্দার ওপর চোখ পড়তেই থমকে গেল। দুচোখে বিস্ময়।
তোমরা…
ওকে কথা শেষ করতে দিল না মুসা, বলল, হ্যাঁ, আমরা। নরক থেকে প্রেতাত্ম হয়ে বেরিয়ে এসেছি তোমার চোয়ালের হাড্ডি কখান ভাঙার জন্যে। আরও কাছে এসো, কোনখান থেকে শুরু করা যায় বুঝে দেখি..
ওর কাঁধে হাত রেখে বাধা দিল কিশোর, দাঁড়াও, পেটে কি কি কথা লুকিয়ে আছে, আগে বের করি, তারপতেমাকে একটা চান্স দেয়া যাবে…
অনিশ্চিত ভঙ্গিতে আরও এক পা এগিয়ে এল বব। কি করবে বুঝতে পারছে না।
ওর দিকে এগিয়ে গেল কিশোর। ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, রেললাইনের ওপর আমাদের ফেলে আসার মানেটা কি? মোটেলে আমাদের ঘর থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছ কেন?
এমন ভঙ্গি করছ তোমর, যেন আমি তোমাদের শত্রু, ছেলেটা বলল। একটু পরখ করতে চেয়েছিলাম, যে যাচাই করে নেয়া, আর কিছু তো না। এত রাগীর কি হলো?
রেললাইনের ওপর ফেলে এসেছ মরার জন্যে, আর বলছ যে যাচাই? মানেটা কি এসবের?
মারার জন্যে ফেলে আসিনি, বব বলল, যেটাতে রেখে এসেছিলাম, ওটা বাতিল লাইন, ট্রেন চলাচল করে না। তারপরেও আড়াল থেকে নজর রেখেছিলাম, বাই চান্স যদি কোন বিপদ ঘটে যায় সাহায্য করার জন্যে। দেখলাম, তোমরা নিজেরাই নিজেদের জন্যে যথেষ্ট, সাহায্যের কোন প্রয়োজনই নেই। তোমরা আরলিংটনে ভর্তি হতে এসেছ, তাই না?
না, জবাব দিল রবিন।
আমাদের কি পরখ করছিলে? আবার প্রশ্ন করল কিশোর। কার হুকুমে?
প্রশ্নটা দ্বিধায় ফেলে দিল ববকে পেছনে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ফিরে তাকাল সে। এই অসময়ে কার সঙ্গে কথা বলছে দেখার জন্যে আরও কয়েকটা ছেলে নেমে আসছে দোতলা থেকে।
কিশোরের দিকে ফিরল বব, এর জবাব তোমাকে দিতে পারব না আমি।
যদি কথা দিই, মুখ খুলব না? কাউকে বলব না ওর কথা?
কিশোরের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বব বলল, আমরা ভেবেছি তোমরা লায়ন কাবসে যোগ দিতে এসেছ, কসম—
লায়ন কাবসটা কি?
আমাদের তরুণদের একটা সংঘঠন। তোমাদের পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। আমরা ভেবেছি তোমরা আরলিঙটনে ভর্তি হবে, তাই আগে থাকতেই আমাদের দলে টানতে চেয়েছি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত ববের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। ওর মনে হলো সত্যি কথাই বলছে ছেলেটা। মুসার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার হাতের সুখ মেটাতে পারলে না, মুসা। অন্য সময় দেখা যাবে। চলো এখন, যাই।
সারারাত ঘুমায়নি, তার ওপর নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর পরিশ্রম, ঘুমে ভেঙে আসতে চাইছে চোখ। তবু মোটেলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আরও খাকিটা তদন্ত সেরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কিশোর।
বাইরে এসে সঙ্গীদের বলল, ডিগ ঘুম থেকে ওঠার আগেই গেনারের ঘরটা আরেকবার দেখব, চলো।
হাতঘড়ি দেখল রবিন, ছটা বাজে। এত সকালে নিশ্চয় ঘুম থেকে ওঠেনি ডিগ। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, চলো।
গেনারের কোয়ার্টারের দিকে রওনা হলো ওরা। পথে কয়েকটা দুধের গাড়ি আর একজন খবরের কাগজের হকারকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না। এত ভোরে অন্য কেউ নেই রাস্তায়। কলেজের কোয়ার্টার গুলোতেও প্রাণের সাড়া নেই, ঘুমন্ত।
কোয়ার্টারের সামনে এসে আগের মতই গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল মুসা। কিশোর আর রবিন নেমে গেল।
সোজা গেনারের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল কিশোর। পকেট থেকে মাস্টার কী বের করে তালা খুলতে একটা মিনিটও লাগল না তার। রবিনকে নিয়ে ভেতরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। ডিগ যে পাশে থাকে সেপাশের দেয়ালে কান ঠেকিয়ে শুনল। নীরব।
এখনও স্বপ্নের জগতেই আছে, ফিসফিস করে রবিনকে বলল সে।
কি দেখতে এসেছ?
জানি না। এসো, খুঁজি।
বাতি জ্বালতে হলো না। সামনের দুটো জানালা দিয়ে দিনের আলো ঢুকছে। এখনও অস্পষ্ট, তবে ঘরের জিনিসপত্র সব দেখা যায়। রবিনকে আসবাবগুলো পরীক্ষা করতে বলে নিজে ডেস্কে রাখা নোট আর বইগুলো দেখতে এগোল কিশোর।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নতুন কিছু পেল না ওরা, গেনারের কি হয়েছে বা ও কোথায় গেছে এ ব্যাপারে সামান্যতম সুত্র পাওয়া গেল না।
পুলিশ এত করে খুঁজে যাওয়ার পর আর কিছু পাওয়ার কথাও না, হাল ছেড়ে দিয়ে বলল রবিন। আসলে কি খুজছ তুমি, কিশোর?
জবাব না দিয়ে একটা প্রশ্নপত্রের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। ঘনঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। গভীর মনোযোগ। কি যেন বোঝার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর চেহারা।
এগিয়ে গেল রবিন। কিছু পেয়েছ মনে হচ্ছে?
দেখো এটা! উত্তেজনায় গলা কেঁপে উঠল কিশোরের।
.
০৫.
ওর কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল রবিন। কই, কি আছে এতে? কয়েকটা প্রশ্ন ছাড়া তো আর কিছু দেখছি না।
হ্যাঁ, এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই রয়েছে একটা জরুরী সূত্র, কিশোর বলল।
আমি কিছুই দেখছি না।
প্রথম প্রশ্নটা দেখো…
দেখলাম। রাশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই আমার।
আমারও না। পরের প্রশ্নটা দেখো।
আফ্রিকায় কি ঘটছে..তাতেই বা আমার কি?
আমারও না, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল কিশোর। রবিন বুঝতে পারছে না দেখে মজা পাচ্ছে সে।
দেখো, কিশোর, অধৈর্য হয়ে বলল রবিন, দোহাই তোমার, যা বুঝেছ, বলে ফেলো! না বোঝালে বুঝব না!