বাড়িটাতে পৌঁছে ১৭ নম্বর রূম খুঁজে বের করুন কিশোর। দরজার পাশে বসানো কলিং বেলের সুইচ টিপল। কান পেতে রইল ভেতরের শব্দ শোনার আশায়। নেই, কোন শব্দ নেই। আবার বেল টেপার জন্যে হাত বাড়াল কিশোর, এই সময় পেছন থেকে বলে উঠল একটা হাসিখুশি কণ্ঠ, আমাকে খুঁজছ?
চমকে গিয়ে ঘুরে তাকাল কিশোর আর রবিন। সেই লোকটা।
মেরিন ডিগ? আপনা থেকেই প্রশ্নটা বেরিয়ে গেল কিশোরের মুখ থেকে।
হ্যাঁ। কি সাহায্য করতে পারি?
নিজের আর রবিনের পরিচয় দিল কিশোর।
দরজা খুলে ওদেরকে নিজের ঘরে নিয়ে এল ডিগ।
কেন এসেছে, জানাল কিশোর। হারিস গেনার সম্পর্কে যা যা জেনেছে, ভিগকে জানিয়ে জিজ্ঞেসকরুল সে এর বেশি আর কিছু জানে কিনা।
জানি, জবাব দিল ডিগ, তবে পুলিশের ধারণা, ওগুলো জরুরী কোন বিষয় নয়।
কি জানেন? আগ্রহে সামনেকে এল রবিন।
দাঁড়াও, বলছি, ওদের বসতে বলে একটা চেয়ার টেনে এনে মুখোমুখি কুসল ভিগ। খুব শীঘ্রি বিয়ে করতে যাচ্ছে হারিস, এই খবরটা কি জানো তোমরা?
অবাক হলো দুজনেই। মাথা নাড়ল।
ডিগ জানাল, ইয়োরোপের যে দেশটায় লেখাপড়া করতে গিয়েছিল গেনার, ওখানে একটা মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠত হয়। ওই মেয়েটাকেই নাকি বিয়ে করবে সে। যেহেতু দেশটার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল না, ওই দেশের মেয়েকে বিয়ে করার কথা তার বোনকেও বলতে অস্বস্তি বোধ করেছে গেনার।
তারমানে আপনি বলতে চান স্মৃতি হারানো কি পাগল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক না? জিজ্ঞেসকরুল কিশোর।
মাথা নাড়ল ডিগ, একেবারেই না।
এটা অবশ্য নতুন তথ্য; তবে এর বেশি আর কিছু জানাতে পারল না। ডিগ। গেনারের সুরটা দেখিয়ে দেয়ার জন্যে ওকে অনুরোধ করল কিশোর।
এসো, উঠে দাঁড়াল ডিগ, এই তো, পাশের ঘরটাই।
গেনারের ঘরের চাবি আছে তার কাছে। খুলে দিল। দুই গোয়েন্দার সঙ্গে ভেতরে ঢুকে বলল, দেখেছ, কি রকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন? সব ঠিকঠাক। বোঝাই যায় না পালানোর প্ল্যান করছিল গেনার। আমিও কিছু বুঝতে পারিনি।
কিন্তু বিয়ে করার জন্যে একটা লোক পালাবে কেন, এটাও তো মাথায় ঢুকছেনা, রবিন বলল।
আমার মাথায়ও না।
এগুলো কি? টেবিলে হাত রেখে কুঁকে দাঁড়িয়ে কতগুলো কাগজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর। আপনি বলতে পারবেন?
অবশ্যই পারব। পরীক্ষার প্রশ্ন। নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে এগুলো তৈরি করেছিল গোনার…
কিশোর আর রবিন মিলে পুরো ঘরটা তন্নতন্ন করে খুঁজল। সঙ্গে সঙ্গে থেকে চিলের নজর রাখল ডিগ, তার সামনে অস্বস্তি বোধ করতে লাগল ওরা। কিন্তু লোকটাকে সরানোর কোন ছুতো বের করতে পারল না। অগত্যা ওর সামনেই খুঁজতে হলো। কোন সূত্র পেল না। পাওয়ার আশাও অবশ্য করেনি, কারণ এর আগে পুলিশ এসে খুঁজে গেছে।
থ্যাংক ইউ, কিশোর কলল, এখন যাই। সময় করে আবার আসব। আরেকবার খুঁজে দেখব ঘরটা।
যখন খুশি এসো, নির্দ্বিধায় স্বাগত জানাল ডিগ। এক কাজ করো না বরং, আমার এখানেই থেকে যাও। আলাদা বিছানা আছে, থাকার অসুবিধে হবে না।
হেসে মাথা নেড়ে বলল কিশোর, না, না, ঠিক আছে, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। লোক বেশি আমরা, সঙ্গে আরও একজন আছে। যাই। পরে আসব।
গাড়িতে ফিরে এল ওরা। উদিত হয়ে অপেক্ষা করছে মুসা, ওরা কি খবর আনো শোনার জন্যে। যা জানল, তাতে তেমন খুশি হতে পারল না। তদন্তের অগ্রগতি হয়নি প্রায় কিছুই। এখনও এমন কোন জরুরী সূত্র পায়নি যেটা গেনারকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
মোটেলে ফিরে চলল ওরা।
হঠাৎ জিজ্ঞেস করল রবিন, ডিগলোকটাকে কেমন মনে হলো তোমার?
উ। চিন্তিত ভঙ্গিতে ফিরে তাকাল কিশোর, কি জানি, ঠিক বুঝতে পারছি না।
আজব চরিত্র মনে হয়নি?
আজব কিনা জানি না, তবে হাঁটার ভঙ্গি দেখলে ভাঁড় বলবে ওকে লোকে, আবার চিন্তায় ডুবে গেল কিশোর।
ঘরে যাওয়ার আগে কোথাও কিছু খেয়ে নিলে হয় না? গাড়ি চালাতে চালাতে আচমকা প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল মুসা।
তা যায়, রাজি হলো কিশোর।
রবিন বলল, আমারও খিদে পেয়েছে।
একটা ফার্স্টফুড শপ থেকে হালকা খাবার খেয়ে নিল ওরা। ফিরে এল মোটেলে। ঘরের দরজা খুলেই থমকে দাঁড়াল কিশোর। দুজন বয়স্ক মানুষ বসে আছে–একজন পুরুষ, আরেকজন মহিলা। লোকটা খবরের কাগজ পড়ছে, মহিলা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে।
মাফ করবেন, ভদ্রকণ্ঠে রবিন বলল, আপনারা বোধহয় ভুল জায়গায় ঢুকে পড়েছেন।
হ্যাঁ, এটা আমরা ভাড়া নিয়েছি, বলল কিশোর। সাত নম্বর।
ফিরে তাকিয়ে হাসল মহিলা, তোমরা নিশ্চয় তিন গোয়েন্দা? তোমাদের মালপত্র বের করে নিয়ে গেছে ম্যানেজার। অসুবিধে নেই, সব পাবে ওর কাছে।
কেন, নেবে কেন? কিশোর অবাক। আমরা এটা ভাড়া নিয়েছি। রেজিস্টারে নাম সই করে চব্বিশ ঘণ্টার ভাড়াও অগ্রিম দিয়েছি।
বলেই বুঝল, এদেরকে, প্রশ্ন করে লাভ নেই, ঠিকও হবে না, কারণ দোষটা এদের নয়। যা করার ম্যানেজার করেছে। চাবি না দিলে এরা খুলতে পারত না। নিশ্চয় কোন গোলমাল হয়েছে, কিছু একটা ঘটেছে, নাহলে ম্যানেজারও এ রকম করত না। কি ঘটল?
জানার জন্যে উত্তেজিত হয়ে ম্যানেজারের অফিসে ছুটল তিন গোয়েন্দা।
ওদের দেখে চওড়া হাসি হাসল টেকো লোকটা। এসো, এসো, সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমি। মালপত্র তোমাদের ঘরে পৌঁছে গেছে। ভাল জায়গা পছন্দ করেছ। আগেই বলেছিলাম, কটেজ নাও…তুবে আগে সাধারণ রূমটা দেখে নিয়ে ভালই করেছ, নিজেরা বুঝে নিয়েছ, আমি চাপাচাপি করলে। ভাবতে জোর করে গছাতে চাইছি…