ও কিছু না, গুরুত্বই দিল না সার্জেন্ট, অন্যমনস্ক হয়ে কলেজ থেকে হেঁটে বেরিয়ে গায়েব হয়ে গেছে হ্যারিস গেনার। ওয়াল্ট ডিজনির অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড প্রফেসর দেখোনি, ওরকম ব্যাপার আরকি।
কোন সূত্র পাওয়া যায়নি? জিজ্ঞেস করল রবিন।
না, কিছুই না। আশা করছি দুচারদিনের মধ্যেই ওর খবর পাব। সামনে ঝুঁকল সার্জেন্ট, একটা গোপন কথা বলি তোমাদের, আমার ধারণা লোকটা পাগল। অতিরিক্ত মাথা ঘামিয়ে অনেক বিজ্ঞানী আছে না পাগল হয়ে যায়, মগজে চাপ পড়ে বলে, এরও হয়েছে ওরকম।
মন্তব্য করল না গোয়েন্দারা। চুপচাপ বেরিয়ে এল থানা থেকে। বাইরে বেরিয়েই ফুঁসে উঠল মুসা, এই সার্জেন্ট নোকটাও পাগল! জ্ঞান দিতে আসে!
জ্ঞান আর উপদেশ বিতরণ করা অনেক মানুষের স্বভাব, কি আর করা, আনমনে মাথা চুলকাল কিশোর।
এরপর কলেজের ডিনের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল সে।
কলেজটা কোথায় একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল মুসা। গাড়ি চালাল সেদিকে। শহরের একধারে ছোট্ট একটুকরো বনের মাঝে কলেজটা। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিঙের সামনে এনে গাড়ি রাখল সে।
একসঙ্গে সবার যাওয়ার দরকার নেই। গাড়িতে বসে রইল মূসা। কিশোর আর রবিন নেমে মার্বেল পাথরে তৈরি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠল। একটা হলওয়েতে ঢুকল।
ডিনের অফিসটা খুঁজে পেতে দেরি হলো না। দরজার গায়ে লেখা রয়েছে:
DEAN WALTER FOLLETT.
ডিনের ঘরে ঢুকতে হলে অনুমতি নিতে হয়। একজন রিসেপশনিস্টকে বুঝিয়ে বলল কিশোর, জরুরী কারণে দেখা করতে এসেছে ওরা। ব্যাপারটা গোপনীয়। সবাইকে বলা যাবে না, কেবল ডিনকেই বলবে।
অনুমতি মিলল। ওদেরকে ডিনের অফিসে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে ফিরে গেল রিসেপশনিস্ট।
বড় ডেস্কের ওপাশে বসে আছেন লম্বা একজন মানুষ, ঝাঁকড়া চুল বয়সের কারণে ধূসর হয়ে এসেছে। উঠে দাঁড়ালেন মিস্টার ফলেট। হাত বাড়িয়ে দিলেন। করমর্দন হয়ে গেলে বললেন, বসো। কি নাকি গোপন কথা আছে আমার সঙ্গে? বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছে।
ডেস্কের অন্যপাশে ডিনের মুখোমুখি বসল তিন গোয়েন্দা।
হ্যারিস গেনারকে খুঁজতে এসেছে, জানাল কিশোর।
ভাল করেছ, ডিন বললেন, আমরা সবাই তাকে খুঁজছি। তা তোমরা কে, তাই তো জানা হলো না।
পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিল কিশোর।
হাতে নিয়ে দেখলেন ফলেট। তারপর কার্ডটা টেবিলে রেখে দিয়ে। বললেন, বুঝলাম। হ্যাঁ, তা আমার কাছে কি জানতে চাও, বলো?
হ্যারিস গেনারের নিরুদ্দেশের ব্যাপারে যতটা জানাতে পারেন।
আশা করি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জেনে যাবে তোমরা শিগগিরই, গোয়েন্দা যখন। আনমনে মাথা নেড়ে বিড়বিড় করলেন তিনি, অদ্ভুত! ভারি অদ্ভুত!
কি? জানতে চাইল কিশোর।
ওই তো, যেভাবে গায়েব হয়ে গেল গেনার। কি করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন লেকচারার, জানালেন ফলেট। পরদিন নাকি ছেলেদের পরীক্ষা ছিল, এর জন্যে প্রশ্নপত্রও তৈরি করেছেন গেনার। তারপর রহস্যজনক ভাবে সেটা ডেস্কের ওপর ফেলে রেখে রাতের বেলা কোথায় চলে গেছেন।
পরদিন সকালে কাগজগুলো পাওয়া গেছে, ডিন বললেন। পেয়েছে। ওরই একজন সহকারী। সেই সব প্রশ্ন ছেপে পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে। ছেলেদের।
অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে একটা পেন্সিল তুলে নিয়ে ডেস্কে ঠুকতে লাগলেন তিনি। কিন্তু সেই যে গেল, আর ফিরে এল না গেনার। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত!
সহকারীর নাম কি, যিনি কাগজগুলো পেয়েছেন? জানতে চাইল রবিন। বলতে অসুবিধে আছে?
প্রশ্নটায় অবাক হলেন যেন ডিন। একটা ভুরু সামান্য উঁচু হলো। না, অসুবিধে থাকবে কেন? ওর নাম মেরিন ডিগ। গেনারের সহকারী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
পরস্পরের দিকে তাকাল কিশোর আর রবিন। একই কথা খেলে গেল দুজনের মনে, মেরিন ডিগের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
ও-কে, বয়েজ, আর কিছু বলার নেই আমার, যা যা জানি, বলেছি, উঠে দাঁড়ালেন ডিন। আমার ধারণা, মাথায় কোন গোলমাল দেখা দিয়েছে গেনারের। স্মৃতিবিভ্রমও ঘটে থাকতে পারে।
মিস্টার ডিগের সঙ্গে দেখা করতে চাই আমরা, অনুরোধ করল কিশোর, আপনি কি কোন সাহায্য করতে পারেন? আর, মিস্টার গেনারের ঘরটাও একবার দেখতে চাই।
একটা কাগজে ঠিকানা লিখে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফলেট। জানালার কাছে গিয়ে হাতের ইশারায় কিশোরকে ডাকলেন। মাঠের শেষধারে কতগুলো বাড়ি দেখিয়ে বললেন, বড় বিল্ডিঙটাতে গ্র্যাজুয়েট ছাত্ররা থাকে। আর তার ওপাশের ছোট ছোট বাড়িগুলোতে ইনস্ট্রাক্টর আর লেকচারাররা।
ডিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। গাড়িতে উঠে মুসাকে বলল, মাঠের ধারের বাড়িগুলোর কাছে নিয়ে যেতে।
.
০৩.
গাড়ি চালাল মুসা। ডিনের কাছে কি জেনে এসেছে, সব জানাল ওকে রবিন আর কিশোর। পথে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে দেখা গেল-সামার সেশনের জন্যে নাম রেজিস্ট্রি করতে এসেছে।
বাড়িটা থেকে খানিক দূরে গাড়ি রেখে বসে রইল মুসা। কিশোর আর রবিন নেমে গেল আগেরবারের মত। সামনে বেটেমত এক লোক হেঁটে যাচ্ছে। বয়েসে তরুণ। ওকে চোখে পড়ে যায় তার কারণ গাঢ় রঙের জ্যাকেট গায়ে দিয়েছে, আর হাস্যকর ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে। দ্রুত হেঁটে ওর পাশকাটিয়ে এল দুজনে।
পাশ কাটানোর সময় রবিনের গায়ে আলতো খোঁচা দিল কিশোর। ইঙ্গিত করল লোকটার দিকে। একবার পেছনে ফিরে তাকানোর কৌতূহল সামলাতে পারল না রবিন। গোলগাল, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা লোকটার।