কিশোর জিজ্ঞেস করল, রাডার স্টেশনটাতে কি করছিল ওরা জানা। গেছে?
দুটো উদ্দেশ্যে ব্ল্যাক হোল কেভে আস্তানা গেড়েছিল ওরা। ওই উপকূলে গুপ্তচরদের একটা ঘাটি বানিয়েছিল। ওখানে লুকিয়ে থেকে নানা রকম ধ্বংসাত্মক কাজকারবার চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ওরা দেশের ভেতর। সেই সঙ্গে রাডার স্টেশনটাকেও অকেজো করে রাখার চেষ্টা চালাত। তাতে বিমান আর নৌবাহিনীর অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।
রাডার স্টেশন অকেজো করত কিভাবে? জানতে চাইল মুসা।
একটা বিশেষ যন্ত্র গুহার ভেতর থেকে রাতের বেলা বাইরে ঠেলে দিত, রিগসন জানাল, তাতে বাধা পেত রাডার সিগন্যাল, জ্যাম হয়ে যেত।
বাপরে বাপ, কত্তবড় শয়তান, ব্যাটারা!
হ্যাঁ, লোক খুব খারাপ ওরা। মজার ব্যাপার হলো, কমান্ডার জিন মরিস নিজেকে জাহাজের কমান্ডার বলে পরিচয় দিলেও কোনদিন নাবিক ছিল না সে। অল্প বয়সে কিছুদিন এক তৃতীয় শ্রেণীর থিয়েটারে অভিনয় করেছে। বিদেশে একটা সাংস্কৃতিক ভ্রমণ করার সময় স্পাইয়ের খপ্পরে পড়ে খারাপ হয়ে যায়, বিদেশী সংস্থার হয়ে নিজের দেশের বিরুদ্ধে বেঈমানী শুরু করে…
বাধা দিল রবিন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে?
আরে নাহ, ইংল্যান্ড কোথায়? আমেরিকা। ও আমেরিকান। কোনকালেই ইংরেজ ছিল না, শরীরে কোনভাবেই ইংরেজ রক্ত আসেনি, মায়ের দিক থেকেও না, বাপেরও না। ব্রিটিশ জাহাজের কমান্ডার বলে ফাঁকি দিয়েছে তোমাদেরকে। আরও বহুজনকে দিয়েছে। পাগলের অভিনয় করাও তার আরেকটা ফাঁকিবাজি। মহাধড়িবাজ লোক।
হ্যাঁ, মুসা বলল, আমরা তো সত্যি সত্যি পাগল ভেবে বসেছিলাম। ভেবেছি একলা থাকতে থাকতে মাথাটা ওর বিগড়ে গেছে।
পাগলামি করাতে অবশ্য সুবিধেই হয়েছে আমাদের, কিশোর বলল, সন্দেহটা তাড়াতাড়ি জেগেছে। আচ্ছা, মুসা যে পিস্তলটা পেয়েছে, ওটার। ব্যাপারে কিছু জেনেছেন নাকি? অস্ত্রটা মরিসেরই, তাই না?
হ্যাঁ, রিগসন বলল, মরিস সব স্বীকার করেছে। তোমাদের গুহা থেকে যে রাতে খাবার চুরি করেছে, সে রাতে ওটা হারিয়ে ফেলেছিল। অন্ধকারে তাড়াহুড়োয় আর খুঁজে পায়নি। খাবার চুরি করেছিল তোমাদের তাড়ানোর জন্যে। ভেবেছিল, খাবার না পেলে আপনিই চলে যাবে তোমরা।
সেটা তখনই বুঝতে পেরেছি।
ক্যাপটা কার? নিশ্চয় গেনারের?
মাথা ঝাঁকাল রিগসন। হ্যাঁ।
সে ওই গুহায় কি করে গিয়েছিল, কিছু জেনেছেন?
ডিগের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়েছিল তার, ব্ল্যাক হোল গুহায় কিছু ঘটছে। একরাতে গোপনে ওর পিছু নিয়ে চলে যায় সেখানে। কিন্তু মরিসের চোখে পড়ে যায়। পালানোর চেষ্টা করে গেনার। কিন্তু বন্দুকের ফাঁকা গুলি করে তাকে ভাঁড়কে দেয় মরিস। আটকে ফেলে।…যাই হোক, কথা তো অনেক হলো। চলো এবার, গেনারের বোনকে খবরটা দেয়া যাক।
রিগসনের সঙ্গে বেরোল তিন গোয়েন্দা।
খবর শুনে তো কেঁদেই ফেলল ইভা। তখুনি ওদের সঙ্গে রওনা হলো হাসপাতালে।
ঘোর কেটেছে গেনারের। তবে অতিরিক্ত দুর্বল। দুজন পুলিশ অফিসার বসে আছে, তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্যে।
তিন গোয়েন্দা কি করেছে শুনে কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে এল তার। ধরা গলায় বলল, তাহলে তোমরাই আমাকে বাঁচিয়েছ! সময়মত সাবমেরিনটাকে আটকাতে না পারলে আমাকে কোথায় যে নিয়ে যেত ওরা কে জানে! সারাজীবনে হয়তো আর দেশের মুখ দেখতাম না। হয়তো ব্রেন ওয়াশ করে মাথাটাই বিগড়ে দিত চিরকালের জন্যে। কি বলে যে ধন্যবাদ দেব তোমাদেরকে…