চমকে গেল কিশোর। আপনাআপনি টর্চ ধরা হাতটা ঘুরে গেল, আলো গিয়ে পড়ল লোকটার হাসি হাসি মুখের ওপর।
মেরিন ডিগ!
বিদ্যুৎ খেলে গেল যেন মুসার শরীরে। তিন লাফে চলে গেল তাকের কাছে। আবছা অন্ধকারে আন্দাজেই থাবা দিয়ে তুলে নিল শটগানটা। তাক করল ডিগের দিকে।
কিন্তু পরক্ষণেই আকাশ ভেঙে পড়ল যেন ওর মাথায়। পেছন থেকে শক্ত কিছু দিয়ে সজোরে বাড়ি মারা হয়েছে। অন্ধকারে আরও একজন লোক লুকিয়ে ছিল।
টলে পড়ে গেল মুসা।
.
জ্ঞান ফিরলে দেখল সে, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গুহার মেঝেতে পড়ে আছে। কিশোরকে একইভাবে বেধে ফেলে রাখা হয়েছে ওর পাশে। কাছেই পিস্তল হাতে বসে আছে ডিগ। একটা ল্যাম্প জ্বলছে, তার আলোয় কুৎসিত লাগছে। ওর মুখটা।
যাক, ঘুম তাহলে ভাঙল, হেসে বলল ডিগ। আমি জানতাম তোমরা এমন কিছু একটা করবে, আসবে, তাই লুকিয়ে ছিলাম তোমাদের অপেক্ষায়।
তা তো বুঝলাম, নিজের কণ্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেল মুসা, কোলাব্যাঙের স্বর বেরোচ্ছে তার গলা দিয়ে। কিন্তু এ ভাবে কতক্ষণ আটকে রাখবেন আমাদের?
বেশিক্ষণ না। এই আর কয়েক ঘণ্টা, ততক্ষণে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
তারপর ছেড়ে দেবেন? ফিরে গিয়ে যদি পুলিশকে সব কথা বলে দিই আমরা?
সেজন্যেই তো ছাড়ব না। আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাব। তোমাদের দিয়ে কাজ হবে। বুদ্ধিমান ছেলে তোমরা, ব্রেন ওয়াশ করে নিলে অনেক কাজ করাতে পারব।
কোথায় নিয়ে যাবেন আমাদের? জানতে চাইল কিশোর।
সেটা বলা যাবে না। গেলেই দেখতে পাবে।
এখানে কি, করছেন আপনারা, সেটা তো বলা যাবে? রাডার স্টেশনটাতে কিছু করছেন, তাই না?
হাসল ডিগ। অতটা আন্দাজ করে ফেলেছ! হ্যাঁ, ওখানেই…
কথা শেষ হলো না তার। একসঙ্গে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল অনেক লোক। কঠিন গলায় আদেশ হলো, খবরদার, নড়বে না কেউ! পুলিশ!
স্তব্ধ হয়ে গেল ডিগ। হাত থেকে আস্তে করে মাটিতে নামিয়ে রাখল পিস্তলটা।
উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠল কয়েকটা, পুলিশের ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক ল্যাম্প।
হাসিমুখে মুসা আর কিশোরের পাশে এসে বসল রবিন। এগিয়ে এল ডেলভার।
বাঁধনের দড়ি কাটতে কাটতে রবিন বলল, সময়মতই এসে পড়েছি, তাই? তোমাদের জন্যে কাটায় কাটায় বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি আমরা। তারপর থানায় গেছি।…তা ভাল আছ তো তোমরা? মারধর করেনি?
করেনি বললে ভুল হবে, তিক্তকণ্ঠে বলল মুসা। মাথায় বাড়ি দিয়ে বেঁহুশ করে ফেলেছিল আমাকে…
.
১৬.
পরদিন বিকেল। রকি বীচে তিন গোয়েন্দার ওঅর্কশপে বসে আছে ওরা। এই সময় একটা গাড়ি ঢুকল ইয়ার্ডে। গাড়ি থেকে নামল একজন লম্বা, সুদর্শন, লোক। গোয়েন্দাদের খোঁজ করল। নিজের পরিচয় দিল-ফিন রিগসন, এফ বি আইয়ের লোক। জানাল, হ্যারিস গেনারের নিরুদ্দেশের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে।
তিন গোয়েন্দাও আগ্রহী হলো। ডেকে নিয়ে গিয়ে বসাল ওঅর্কশপের ভেতর।
ভদ্রলোককে দেখে সেরাতে গুহায় ঢোকার কথা মনে পড়ল কিশোরের। একজন স্পাইও পালাতে পারেনি। দল বেঁধে সুড়ঙ্গে ঢুকেছে পুলিশ। ঢোকার আগে হেডকোয়ার্টারে ওয়্যারলেস করে বলে দিয়েছে একজন অফিসার, বাইরে থেকে যাতে রাডার স্টেশনটা ঘিরে ফেলা হয়।
সেইমত কাজ করেছে হেডকোয়ার্টার থেকে আসা পুলিশ বাহিনী। অতএব কেউ পালাতে পারল না। স্টেশনের নিচের একটা গুপ্তকক্ষ থেকে সব কজন স্পাইকে গ্রেপ্তার করা হলো। গুহাটা থেকে প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ বেরিয়ে চলে গেছে স্টেশনের দিকে। মূল সুড়ঙ্গ থেকে আরেকটা শাখা-সুড়ঙ্গ খুঁড়ে স্টেশনের নিচে চলে আসার ব্যবস্থা করেছে স্পাইরা। একটা কক্ষ বানিয়ে নিয়েছে যাতে ওখান থেকে ওপরে উঠে গোপনে স্টেশনের কাজকর্ম দেখতে পারে।
সাবমেরিন থেকে আসা সব কজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ, সেই সঙ্গে কমান্ডার মরিস আর মেরিন ডিগকেও। যাকে উদ্দেশ্য করে এই তদন্তের শুরু, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে গুহা বা সুড়ঙ্গের কোথাও পাওয়া গেল না।
ডিগকে বার বার করে জিজ্ঞেস করা হলো, কিন্তু জবাব পাওয়া গেল একটাই–সে কিছু জানে না।
কিন্তু নিরাশ হলো না অফিসার। থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কথা আদায়ের চেষ্টা করা যাবে।
সে ব্যাপারেই হয়তো কিছু বলবে, ভাবল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, হ্যারিস গেনারের কোন খোঁজ পাওয়া গেছে?
মাথা ঝাঁকাল রিগসন, গেছে। ওকেও পাওয়া গেছে। হাসপাতালে আছে এখন।
তাই নাকি! খুব খারাপ অবস্থা?
শরীর ঠিকই আছে, তবে বোধহয় মাথায় কোন গোলমাল হয়েছে। একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। ওষুধের রিঅ্যাকশনও হতে পারে।
তার বোন ইভা গেনারকে খবর দেয়া হয়েছে?
সেজন্যেই তো তোমাদের কাছে এলাম, ঠিকানা জানার জন্যে।
ও, চলুন তাহলে, আগে তাকে গিয়ে খবরটা দিই। তারপর একসঙ্গে হাসপাতালে যাব গেনারকে দেখতে। তা কোথায় পেলেন ওকে?
সাবমেরিনের মধ্যে, রিগসন জানাল। ওকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল ওটা। স্পাইগুলোকে ধরার পর তোমাদের কথামত সাবধান করে দেয়া হয়েছিল কোস্টগার্ডকে। নৌবাহিনীর সহায়তায় সাবমেরিনটাকে ধরে ফেলা। হয়েছে। তার ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গেনারকে। গুহাতেই রাখা। হয়েছিল ওকে। ওখান থেকে সাবমেরিনে পাচার করা হয়েছে।
ও তো নিশ্চয় কিছু বলতে পারেনি? জানতে চাইল রবিন।
আবার মাথা নাড়ল রিগসন।